অরবিন্দ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে দেহ পাওয়া গেল। সেই দেহ মর্গে পড়ে রইল অজ্ঞাতপরিচয় হিসাবে। অন্য দিকে যে পুলিশ ওই দেহ অজ্ঞাতপরিচয় হিসাবে তুলে মর্গে পাঠাল, তারাই দেহ উদ্ধারের দু’দিন পরে ওই ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে নিখোঁজের অভিযোগ নথিভুক্ত করলেন। তারপরও পাক্কা ১৩ দিন ধরে ‘নিখোঁজ’ থাকার পর ভাইয়ের দেহের হদিশ পেলেন বনমালি বিশ্বাস।
রাজ্যের কোনও প্রত্যন্ত এলাকায় নয়। খাস কলকাতার বুকেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। প্রকাশ্যে এসেছে থানার ভিতরেই সমন্বয়ের অভাব এবং পুলিশ কর্মীদের একাংশের চরম গাফিলতি।
ভবানীপুর থানা এলাকার চক্রবেড়িয়া রোডের বাসিন্দা অরবিন্দ বিশ্বাস। অবিবাহিত। দুই দাদার কাছেই থাকেন। হরীশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে এক আইনজীবীর গাড়ির চালক।
অরবিন্দ বিশ্বাসের দেহের এই ছবি দেখেই ভাইকে শনাক্ত করেন বনমালি বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
অরবিন্দর এক বন্ধু অজয় নাথানি। তিনি বলেন, “৪ অগস্ট বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হন অরবিন্দ। টাকা পয়সা নিয়ে কাজের জায়গায় ঝামেলা হয়। সেখান থেকেই ফোন করা হয় ওর দাদাকে। তখনই অরবিন্দ দাদাকে জানান, তিনি তারকেশ্বরে যাচ্ছেন।”
আরও পড়ুন : ‘আর কেউ এমন ঝুঁকি নেবেন না’, অনুরোধ শ্রমিকের
বনমালি বলেন, ‘‘ভাই তারকেশ্বরে গিয়েছে, তাই আমরা ভেবেছিলাম ৬ অগস্ট সোমবার পুজো দিয়ে ফিরে আসবে।” ৬ অগস্ট বিকেল পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় পড়েন পরিবারের লোকজন। তাঁরা আশে পাশে অরবিন্দের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেন। কোনও হদিশ না পেয়ে শেষে পরের দিন সকালে ভবানীপুর থানায় যান। অজয় বলেন, ‘‘অরবিন্দ কালীঘাট এলাকা থেকে বেরিয়েছিল, তাই ভবানীপুর থানা ওখান থেকে আমাদের পাঠিয়ে দেয় কালীঘাট থানায়।” ৭ অগস্ট কালীঘাট থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর (এএসআই) বি রায় অরবিন্দের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ (জেনারেল ডায়েরি নং ৬৭১) নথিভুক্ত করেন।
আরও পড়ুন: টিফিন-জল খাইয়ে অটিস্টিক কিশোরকে বাড়ি ফেরালেন কন্ডাক্টর
অথচ সেই সময়ে তিনি ঘুণাক্ষরেও অরবিন্দের দাদা বা পরিবারের অন্য কাউকে জানাননি, তার দু’দিন আগেই ওই থানা এলাকাতে মহিম হালদার স্ট্রিটে ওই বয়সি এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির দেহ পাওয়া গিয়েছে। কালীঘাট থানার পুলিশ ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ছবি অরবিন্দর পরিবারকে দেখানোরও প্রয়োজন বোধ করেননি।
নিখোঁজ ডায়েরি করে বাড়ি ফিরে যান বনমালি। বার বার থানায় যোগাযোগও করেন। কিন্তু কোনও হদিশ পান না ভাইয়ের। এর পর ২০ অগস্ট তিনি প্রথমে যান ভবানী ভবনের মিসিং পারসন্স ব্যুরোতে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় কলকাতা পুলিশের মিসিং পারসন্স স্কোয়াডে। অজয় বলেন, “সেখানে অরবিন্দের ছবি দেখেই এক আধিকারিক আমাদের ঘরে ডেকে অন্য একটি ছবি দেখান। দেখি অরবিন্দের দেহের ছবি।” ওই আধিকারিকের কাছ থেকেই অরবিন্দের পরিবার জানতে পারেন, ৫ অগস্ট সকাল বেলায় কালীঘাট থানার পুলিশ মহিম হালদার স্ট্রিট থেকে এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে। ওই দিনই ময়নাতদন্ত করানো হয়। তারপর সেই দেহর ঠাঁই হয় মর্গে। সেই দেহ দেখেই নিজের ভাইকে শনাক্ত করে বিকেলেই কালীঘাট থানায় যান বনমালি। কালীঘাট থানা থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে, বুধবার মর্গ থেকে তাঁদের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ফুলবাগান পর্যন্ত ট্রেন চালাতে পরীক্ষা শুরু মেট্রোয়
গোটা ঘটনায় ফের একবার সামনে এসেছে পুলিশের একাংশের গাফিলতি। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ন্যূনতম যে নিয়ম রয়েছে তা মানলেই এত বড় ঘটনা ঘটে না। যে আধিকারিক ওই দিন নিখোঁজ ডায়েরি করেন, তাঁরই উচিত ছিল নিজের থানা এলাকায় পাওয়া দেহটির ছবি দেখানো।”গোটা ঘটনাটি নিয়ে ডিসি (সাউথ) মীরজ খালিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এখনও তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy