Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Mysterious death

সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েন, গাছ থেকে ঝুলন্ত দেহ মিলল যুবকের

দশম শ্রেণি অবধি লেখাপড়া করা আকাশ বাবার সঙ্গেই ছোটখাটো কাজকর্ম করতেন। রবিবার সারা দিন তিনি ঘরেই ছিলেন। তাঁর বাবার কথায় আকাশ বাড়ি থেকে বেরোলেও রাতে আর ফেরেননি।

A Photograph representing a dead body

একটি গাছ থেকে গলায় দড়ির ফাঁস দেওয়া অবস্থায় আকাশের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৭:০৫
Share: Save:

ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে এক যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম আকাশ শর্মা (২৫)। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে আনন্দপুর থানা এলাকার আদর্শনগরে। একটি গাছ থেকে গলায় দড়ির ফাঁস দেওয়া অবস্থায় আকাশের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, ঘটনাটি আত্মহত্যা। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নিম্নবিত্ত পরিবারের ছোট ছেলে আকাশের সঙ্গে রূপান্তরকামী এক যুবকের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যা নিয়ে আপত্তি ছিল তাঁর পরিবারের। যদিও পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, প্রথমে আপত্তি থাকলেও পরে তাঁরা ওই সম্পর্ক মেনে নেন। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সম্পর্ক নিয়ে এই টানাপড়েনের জেরেই আকাশ আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন।

এই ঘটনায় স্তম্ভিত আকাশের পরিবার ও প্রতিবেশীরা। তাঁর বাবা, পেশায় কাঠের মিস্ত্রি ব্রহ্মদেব শর্মার কথায়, ‘‘ছেলে বলত, যার সঙ্গে ওর সম্পর্ক, তার থেকে আলাদা হয়ে গেলে ও আত্মঘাতী হবে। গলায় দড়ি দেবে বলে ভয়ও দেখাত। তাই আমরা ছেলেকে বলেছিলাম, ও যার সঙ্গে খুশি থাকতে পারে। কিন্তু, আমাদের কথা এক বারও ভাবল না!’’

পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, দশম শ্রেণি অবধি লেখাপড়া করা আকাশ বাবার সঙ্গেই ছোটখাটো কাজকর্ম করতেন। রবিবার সারা দিন তিনি ঘরেই ছিলেন। তাঁর আচরণেও অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করেননি কেউ। ব্রহ্মদেব জানান, ছেলেকে সারা দিন বাড়িতে বসে থাকতে দেখে তিনিই সন্ধ্যার পরে তাঁকে বাইরে একটু ঘুরে আসতে বলেন। বাবার কথায় আকাশ বাড়ি থেকে বেরোলেও রাতে আর ফেরেননি। সারা রাত ছেলের অপেক্ষায় থাকার পরে এ দিন সকালে আকাশের পরিবারের তরফে আনন্দপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। পরে সেই দেহ তাঁরা শনাক্ত করেন।

যাঁর সঙ্গে সম্পর্কের কথা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কলেজপড়ুয়া সেই রূপান্তরকামী যুবক জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে আমাদের পরিচয় হয়। দু’বাড়ির তরফেই সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ছিল। পরে আমার বাড়ি থেকে সব মেনে নেয়। ও খুব ভাল মনের মানুষ ছিল। আমাদের বাড়িতে এসে অনেকটা সময় কাটাত। যদিও কিছু কারণে গত এক মাস আমাদের মধ্যে কোনও যোগাযোগ ছিল না।’’

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, তথাকথিত নারী-পুরুষ ছাড়া আর যে কোনও লিঙ্গের মধ্যে বিয়ের ব্যাপারে তাদের আপত্তি রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, তৃতীয় লিঙ্গ বা রূপান্তরকামীদের সমাজের মূল স্রোতে আসতে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আনন্দপুরের ঘটনাও ব্যতিক্রম নয়। রূপান্তরকামী নারী তথা সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিংহ বলেন, "ভালবাসা যেমন এক জন মেয়ে বা পুরুষের সঙ্গে হয়, তেমনই এক জন রূপান্তরকামী ব্যক্তির সঙ্গেও হতে পারে। এতে ফারাক নেই। কিন্তু, এ বিষয়ে আমাদের সামাজিক চেতনায় নানা খামতি রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে রূপান্তরকামী বা তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের সমান অধিকারের লড়াই কিছুটা মসৃণ হয়েছে। তবে, তথাকথিত নারী, পুরুষের বাইরে কেন্দ্র এখনও স্বীকৃতি দিতে নারাজ।" তাঁর মতে, ‘‘লিঙ্গ চেতনা আসলে মননের সঙ্গে জড়িয়ে, এটা বোঝানোও ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাজ। রূপান্তরকামীদের সামাজিক সুরক্ষায় সরকার আর একটু উদ্যোগী হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটা বন্ধ হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mysterious death police investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy