ফাইল চিত্র।
কোনওটির শেষের চারটি সংখ্যার মধ্যে মাঝের দু’টি হলুদ স্টিকারে ঢাকা। কোনওটিতে নম্বর প্লেটে এমন ভাবে ‘রিফ্লেক্টর স্টিকার’ লাগানো হয়েছে যে, আলো পড়লে কিছুই পড়া যায় না। কোনওটিতে আবার এমন ছোট হরফের নম্বর প্লেট লাগানো যে, চলমান অবস্থায় ঝাপসা দেখায়। তাই দিনের বেলা তো বটেই, রাতের শহরে নিয়ম ভাঙা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। অভিযোগ, নম্বর বুঝতে অসুবিধার গেরোয় এক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে এমন কারও কাছে সমন যাচ্ছিল, যাঁর গাড়ি হয়তো সেই দিন বাড়ি থেকেই বেরোয়নি!
পরিস্থিতি বুঝে এ বার এমন ত্রুটিযুক্ত নম্বর প্লেট লাগানো গাড়ি বা মোটরবাইকের বিরুদ্ধে আরও কড়া হচ্ছে লালবাজার। ভুয়ো আইপিএস, আইএএস-কাণ্ডের পরে যে ভাবে সিবিআই, সিআইডি বা পুলিশের স্টিকার এবং স্টার বিক্রির দোকানে হানা দিয়ে ধরপাকড় শুরু করেছিল পুলিশ, তেমনই হতে চলছে ত্রুটিযুক্ত নম্বর প্লেটের ক্ষেত্রেও। লালবাজার সূত্রের খবর, শহরের রাস্তায় গত এক মাসে ত্রুটিযুক্ত নম্বর প্লেট লাগানো ২৬২০টি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্র্যাফিক বিভাগের এক পুলিশকর্তার কথায়, “কিছু গাড়ির নম্বর দেখে বোঝাই যায় না কী লেখা রয়েছে। বিধিভঙ্গের জন্য গাড়ি থামিয়ে তথ্য নথিভুক্ত করতে গিয়ে ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা যেমন বিভ্রান্ত হন, তেমনই ছবি ধরা পড়ে না পুলিশের লাগানো পথের ক্যামেরায়। ধরা পড়লেও অর্ধেকেরই বেশি গাড়ি বা বাইকের চালক দাবি করেন, এমন নম্বর প্লেট লাগানো যে বেআইনি, তা তাঁরা জানেনই না!”
যদিও কেন্দ্রীয় মোটরযান আইন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১ এপ্রিলের পর থেকে নথিভুক্ত হওয়া সমস্ত গাড়িতে ‘হাই সিকিউরিটি রেজিস্ট্রেশন প্লেট’ (এইচএসআরপি) থাকার কথা। যা একমাত্র ভারত সরকারই দিতে পারে। এই সময়ের আগে নথিভুক্ত হওয়া গাড়ির ক্ষেত্রেও স্থানীয় সরকারি মোটর ভেহিক্লস দফতর থেকেই নম্বর প্লেট নেওয়া বাধ্যতামূলক। ১৯৮৯ সালের কেন্দ্রীয় মোটরযান আইন অনুযায়ী, দু’চাকা ও তিন চাকা যানের ক্ষেত্রে ২০০x১০০ মিলিমিটার এবং সাধারণ চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ৩৪০x২০০ মিলিমিটারের নম্বর প্লেট হওয়ার কথা। এই নির্দিষ্ট মাপের এইচএসআরপি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। অশোকচক্রের হলোগ্রামের পাশাপাশি এই নম্বর প্লেটের প্রতিটিতে ‘আইএনডি’ (ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন কোড ফর ইন্ডিয়া) স্টিকারের নীচে একটি ‘ইউনিক কোড’ থাকার কথা। বেলতলা মোটর ভেহিক্লস দফতরের এক কর্মীর কথায়, “এই প্লেট নকল করা যায় না। কিন্তু এর বদলে ফ্যান্সি নম্বর প্লেট বানানোর হিড়িকেই যত বিপত্তি।”
সম্প্রতি রাতে পার্ক স্ট্রিটে কর্মরত এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী জানান, তাঁদের ট্র্যাফিক গার্ডেই এমন বহু গাড়ি ও মোটরবাইক ধরা পড়েছে গত কয়েক দিনে। তাঁর কথায়, “এই জিনিস নতুন নয়। বার বার সচেতন করার পরেও এমন নম্বর প্লেটের ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি।” ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের বড় অংশেরই দাবি, এ নিয়ে হুঁশ না ফেরার আরও একটি কারণ জরিমানার পরিমাণ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এমন নম্বর প্লেট লাগানোর দায়ে মামলা হতে পারে ১৯৮৯ সালের কেন্দ্রীয় মোটরযান আইনের ৫০/১৭৭ ধারায়। সে ক্ষেত্রে জরিমানা স্রেফ ১০০ টাকা। কিন্তু একই অপরাধে বার বার ধরা পড়লে বেশি জরিমানা করার পথ রয়েছে। কিন্তু তা হয় হাতে গোনা ক্ষেত্রে। সেই প্রেক্ষিতে তাঁরা উদাহরণ দিচ্ছেন দিল্লির। রাজধানীতে কয়েক বছর আগেই এমন নম্বর প্লেটের বাড়বাড়ন্ত আটকাতে জরিমানা ২০০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কলকাতাও কি তেমন কিছু করার কথা ভাবছে?
লালবাজার আপাতত সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টার পাশাপাশি বেশি করে ধরপাকড় চালানোর পক্ষে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy