Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Jadavpur University Student Death

যা বলছি শুনে যাও... সেই রাতে হস্টেলে ফরমান দেন সৌরভ? পেটের কথা বার করতে জেরায় স্বয়ং সিপি

সৌরভ চৌধুরীকে শনিবার ফের জেরা করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। রাতে রাজ্যপাল তথা আচার্য আনন্দ বোস যাদবপুরে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৩ ২৩:৪১
Share: Save:

গ্রেফতারির আগেও সৌরভ চৌধুরীকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার নিজে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। গ্রেফতারির পর ফের তাঁকে শনিবার জেরা করলেন সেই তিনিই। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল লালবাজারে নিজের ঘরে বসিয়ে সৌরভকে জেরা করেছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর রহস্য কি সৌরভকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে? ৯ অগস্ট রাতে ঠিক কি ঘটেছিল, হস্টেলে ‘মহাপাকা’ বলে পরিচিত ওই প্রাক্তনীর কাছেই কি রয়েছে সব প্রশ্নের উত্তর— তদন্তকারীদের একাংশ সে রকমই মনে করছেন। অন্য দিকে, শনিবার যাদবপুরকাণ্ডে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও এক জনকে। ঘটনার রাতে হস্টেলের গেটে পুলিশকে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তদন্তে নতুন মোড় এনেছে হস্টেলের বারান্দা থেকে উদ্ধার হওয়া জামা-প্যান্টও। এক ছাত্রের দাবি, সেগুলি মৃত পড়ুয়ার। এই আবহে শনিবার রাতে রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বুদ্ধদেব সাউকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেছেন।

প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার মৃত্যুর পর ১০ দিন কেটে গিয়েছে। চার দফায় ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্ত এখনও পর্যন্ত হস্টেলের সেই রাতের পূর্ণাঙ্গ ঘটনাপ্রবাহের ছবি পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি তদন্তকারীদের কাছে। তার বড় কারণ ধৃতদের জেরায় উঠে আসা ‘তথ্য’-এর মধ্যে বড়সড় অসঙ্গতি। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, ঘটনার পর ‘ম্যানেজ’ করার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন প্রাক্তনী সৌরভ। তাই পুলিশের মতে, সৌরভের কাছ থেকেই জানা যেতে পারে মূল বিষয়। সে কারণে শনিবারও তাঁকে জেরা করেছেন সিপি। তাঁর সঙ্গেই আরও কয়েক জন অভিযুক্তকে ঘরে বসিয়ে সিপি জেরা করেছেন বলে লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে।

অন্য দিকে, যাদবপুরকাণ্ডে শুক্রবার যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ শনিবার তাঁদের ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত। আগামী ৩১ অগস্ট পর্যন্ত তাঁদের পুলিশি হেফাজতে থাকতে হবে। শনিবার তাঁদের আদালতে হাজির করানো হলে পুলিশের তরফে জানানো হয়, ধৃতেরা প্রত্যেকে ‘সফল অপরাধী, কিন্তু ব্যর্থ অভিনেতা’। সে কারণে তাঁদের হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন।

এ সবের মধ্যেই ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায় দাবি করেন, ৯ অগস্ট রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা তাঁকে যথা সময়ে জানাননি হস্টেল সুপার। ডিন রজত রায়ের দাবি, ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার আগে পর্যন্ত তাঁকে কিছুই জানাননি সুপার তপনকুমার জানা। শনিবার রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু জানিয়েছেন, ইউজিসির তলব করা ১২টি প্রশ্নের জবাব যথাসময়ে পাঠিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ৩১টি ফাইলে পাঠানো হয়েছে সেই জবাব।

যাদবপুরের নতুন অস্থায়ী উপাচার্য

যাদবপুরকাণ্ড নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস। অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক বুদ্ধদেব সাউকে। তিনি গণিতের অধ্যাপক।

পুলিশ কমিশনারের জেরা

যাদবপুরকাণ্ডে মাঠে নামলেন কলকাতার সিপি। শনিবার সৌরভ চৌধুরী-সহ কয়েক জন অভিযুক্তকে তিনি নিজে জেরা করেছেন বলে খবর। পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার লালবাজারে বিনীতের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় সৌরভদের। সেখানে কিছু ক্ষণ ধৃতদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। সৌরভকে গ্রেফতারের আগে কসবা থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তখনও পুলিশ কমিশনার তাঁর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছিলেন বলে জানা যায়। এর পর শনিবার ফের সৌরভকে আলাদা করে জেরা করেন বিনীত। সৌরভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র ছিলেন। প্রাক্তনী হিসাবে হস্টেলে থাকতেন। মৃত পড়ুয়াকে র‌্যাগিং করা হয়েছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে সৌরভের হাত ছিল বলে মনে করছে পুলিশ। প্রথম বর্ষের ওই ছাত্র তিন তলা থেকে পড়ে যাওয়ার পর তাঁকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন হস্টেলে ‘জরুরি বৈঠক’ (জিবি) চলছিল। সৌরভ সেই ‘জরুরি বৈঠক’-এর হোতা ছিলেন বলেও মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। তিনিই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, পুলিশকে ঠিক কী বলতে হবে।

বারান্দায় গেঞ্জি, হাফ প্যান্ট

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিন তলার বারান্দার কোণ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি নীল রঙের হাফ প্যান্ট এবং গেঞ্জি। ওই বারান্দা লাগোয়া ৬৮ নম্বর ঘরেই থাকতেন মৃত ছাত্র। লালবাজার সূত্রে খবর, ওই পোশাকগুলি মৃত ছাত্রের বলে দাবি করেছেন অর্থনীতি বিভাগের এক পড়ুয়া। ওই পোশাক সত্যিই মৃত ছাত্রের কি না, তা যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা। ওই বয়ান সত্যি হলে তা র‌্যাগিংয়ের অভিযোগের গুরুত্বপূর্ণ ‘পারিপার্শ্বিক’ তথ্যপ্রমাণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, হস্টেলের এ১ এবং এ২ ব্লকের মধ্যে আরও একটি গেঞ্জি উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে রক্তের দাগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, বারান্দায় কেন পড়েছিল ছাত্রের পোশাক? তা হলে কি বিবস্ত্র করানো হয়েছিল ওই ছাত্রকে? ওই ছাত্র কি ‘মানসিক চাপে’ নিজেই বিবস্ত্র হয়েছিলেন? দাবি করা হয়েছে যে, ঘটনার আগে বার বার শৌচালয়ে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্র। তাই শুধু গামছা পরেছিলেন তিনি। যদি ছাত্রটি শৌচালয়ে যাওয়ার জন্য পোশাক খোলেন, তা হলে তা সেখানেই (শৌচালয়) থাকার কথা। বারান্দার এক কোণ থেকে কেন পাওয়া গেল পোশাক? যদি পোশাক ভিজে যায়, তা হলে ঘর বা শৌচালয়ে থাকত। কিন্তু তা বারান্দায় পড়ে থাকবে কেন? এই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতেই এখন মরিয়া তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, মৃত ছাত্রের তিনটি ব্যাগও উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে পাট করে রাখা ছিল তার জামাকাপড়।

পুলিশের নজরে আরও

যাদবপুরের ছাত্রের মৃত্যুতে এখনও পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে তাদের নজরে রয়েছে আরও কয়েক জন। তাঁদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ৯ অগস্ট রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, পুলিশের নজরে থাকা ব্যক্তিদেরই বা কতটা ভূমিকা ছিল, তা এখন তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় গত শুক্রবার প্রথম গ্রেফতারি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং হস্টেলের আবাসিক সৌরভকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার সকালে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁরা হলেন দুই বর্তমান পড়ুয়া দীপশেখর দত্ত এবং মনোতোষ ঘোষ। তাঁদের জেরা করে বুধবার আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানা এলাকার বাসিন্দা অসিত সর্দার, মন্দিরবাজারের সুমন নস্কর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সপ্তক কামিল্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। বাকি ধৃতেরা হলেন জম্মুর বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা আসিফ আফজল আনসারি (চতুর্থ বর্ষ, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা অঙ্কন সরকার (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং)। শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদের পর আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুই প্রাক্তনী ছিলেন— পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা নাসিম আখতার এবং মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা হিমাংশু কর্মকার। তৃতীয় জন কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া সত্যব্রত রায়। তাঁর বাড়ি নদিয়ার হরিণঘাটায়।

পুলিশি হেফাজত

যাদবপুরে ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী নাসিম, হিমাংশু এবং সত্যব্রতকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার তাঁদের হাজির করানো হয় আদালতে। পুলিশ তাঁদের হেফাজতে চায়। সেই আবেদন মেনে তিন পড়ুয়াকে ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত। আগামী ৩১ অগস্ট পর্যন্ত তাঁদের পুলিশি হেফাজতে থাকতে হবে। শনিবার তাঁদের আদালতে হাজির করানো হলে পুলিশের তরফে জানানো হয়, ধৃতেরা তদন্তকে বিপথে চালনা করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের প্রত্যেককে ‘সফল অপরাধী, কিন্তু ব্যর্থ অভিনেতা’ বলে উল্লেখ করেছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী। তাঁর দাবি, ধৃতেরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে। তদন্তের অভিমুখ বদলাতে চাইছেন এই তিন অভিযুক্ত। আইনজীবী এ-ও জানিয়েছেন, অন্য এক অভিযুক্তের বয়ান থেকে এই তিন জনের নাম উঠে এসেছে। তদন্তকারীদের একটা অংশ মনে করছেন, যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গেই ধৃতেরা অপরাধ করেছেন। কিন্তু অভিনয়টা কেউ ঠিক মতো করতে পারছেন না। ধৃতদের পক্ষের আইনজীবীরা পাল্টা সওয়ালে জানান, সাক্ষী হিসাবে ডেকে এই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ যাঁকে পারছে, তাঁকেই গ্রেফতার করে নিচ্ছে বলে দাবি ওই আইনজীবীদের।

১০ দিনে সিসি ক্যামেরা

ইউজিসির গাইডলাইন মেনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। শনিবার এই দাবি জানিয়েই রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জুর কাছে স্মারকলিপি জমা দিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। নেতৃত্বে ছিলেন রাজন্যা হালদার। যাদবপুরের এই বিএড পড়ুয়াকে টিএমসিপির যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটের সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে দল। স্মারকলিপি দেওয়ার পর রাজন্যা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, ১০ দিনের মধ্যে যদি সিসিটিভি না বসানো হয়, তা হলে আমরা নিজেরা তা লাগানোর বন্দোবস্ত করব।’’ স্মারকলিপিতে টিএমসিপি এ-ও লিখে‌ছে, ক্যাম্পাসে, ক্লাসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীদের সামাজিক বয়কটের শিকার হতে হচ্ছে। এটাও এক ধরনের র‌্যাগিং। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়েও পদক্ষেপ করতে হবে।

ইউজিসিকে ১২ প্রশ্নের জবাব

ইউজিসিকে যথা সময়ে ৩১টি ফাইলে ১২টি প্রশ্নের জবাব পাঠানো হয়েছে। শনিবার জানিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। তিনি জানান, এর আগে ‘প্রাথমিক রিপোর্ট’ পাঠানো হয়েছিল ইউজিসিকে। তবে শুক্রবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ইউজিসিকে ‘প্রথম রিপোর্ট’ পাঠানো হয়েছে। যাদবপুরে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর পর র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। গত রবিবার এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট তলব করে ইউজিসি। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শনে আসার কথা ছিল তাঁদের প্রতিনিধি দলের। সোমবার ইউজিসিকে রিপোর্ট পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রেজিস্ট্রার দাবি করেন, তাঁদের পাঠানো রিপোর্টে ‘সন্তুষ্ট’ ইউজিসি। সে কারণেই বুধবার কথা থাকলেও আসেনি ইউজিসির প্রতিনিধি দল। পরের দিনই অবশ্য ইউজিসি জানিয়ে দেয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাঠানো রিপোর্টে তারা ‘সন্তুষ্ট নয়’। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য-সহ ১২টি প্রশ্নের জবাব চেয়ে পাঠায় তারা। জানায়, সময়ে সেই জবাব না দিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরেই শুক্রবার ১২টি প্রশ্নের জবাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার।

সুপারের দিকে আঙুল

ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় এ বার হস্টেল সুপারের দিকে আঙুল তুললেন ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়। জানালেন, ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার আগে পর্যন্ত তাঁকে কিছুই জানাননি সুপার তপনকুমার জানা। ডিনের দাবি, হস্টেলে সমস্যা হচ্ছে বলে এক আবাসিকের থেকে ফোন পেয়ে হস্টেলের সুপারকে ফোন করেছিলেন। কী সমস্যা হচ্ছে, তা দেখে এসে জানাতে বলেছিলেন তাঁকে। যদিও সুপার কিছু জানাননি। মৃত ছাত্রকে হস্টেলের নীচে থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর হস্টেল সুপার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তখন রাত প্রায় ১২টা। ডিন বলেন, ‘‘হস্টেল সুপার ফোন করে বলেন, এক জন ছেলে হস্টেলের নীচে পড়ে রয়েছে। মুখ থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। আমি ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। আমি নিজেও রওনা দিই।’’ সুপার এ-ও জানিয়েছিলেন যে, রাত ১১টা নাগাদ তিনি হস্টেলে ঘুরে এসেছিলেন। এক আবাসিককে ফোনও করেন। কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে, এমন আঁচ নাকি তিনি পাননি। পরিস্থিতি শান্ত ছিল বলেও নাকি তাঁকে জানিয়েছিলেন হস্টেল সুপার। এমনটা জানিয়েছেন ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত।

মাকে পরামর্শ অভিযুক্তের

যাদবপুরের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় হস্টেলের একের পর এক আবাসিক ও প্রাক্তনীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেই খবর। দেখে উদ্বিগ্ন হয়েছেন যাদবপুরের অনেক পড়ুয়ার অভিভাবকেরা। সেই তালিকায় ছিলেন মিতালি কর্মকার। ছেলে হিমাংশুকে ফোন করেছিলেন তিনি। ছেলে পাল্টা টিভি না দেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ছেলের কথা না শুনেই ফের টিভি খুলেছিলেন মিতালি। তখনই দেখেন, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার তাঁর ছেলেও। এর পরেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান তিনি। ধৃত হিমাংশুর বাড়ি মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের নিমতিতায়। পরিবারে রয়েছেন এক ভাই, দিদি এবং মা। বাবা মারা গিয়েছেন বছর দশেক আগে। হিমাংশুর দিদিও কলকাতায় পড়াশোনা করেন। মা স্থানীয় শেরপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিমাংশু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মাস দুই হল অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি করছেন তিনি। তবে থাকতেন যাদবপুরের হস্টেলেই।

ফাঁসানো হয়েছে নাসিমকে!

যাদবপুরকাণ্ডে শুক্রবার গ্রেফতার হয়েছেন নাসিম আখতার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এই প্রাক্তনীও থাকতেন হস্টেলেই। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা নাসিমের পরিবারের দাবি, ছেলে নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর মা। ঘটনার দিন যাদবপুরেই ছিলেন নাসিম। পরের দিন, অর্থাৎ ১০ অগস্ট দাদুর মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি, এমনটাই জানিয়েছে তাঁর পরিবার। ১০ অগস্ট ভোরে মৃত্যু হয় ‘নির্যাতিত’ ছাত্রের। নাসিমের মামা ইজাজুল হক সাহানা জানিয়েছেন, নাসিম খুবই ‘সাদাসিধে’ ছেলে। পড়াশোনায় ভাল। ওকে ফাঁসানো হয়েছে। নাসিমের বোন শায়েরি আখতার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার হস্টেল সুপার তাঁর দাদাকে ফোন করেন। হস্টেল সুপার ফোন করে নাসিমকে ফিরে আসার কথা বলেন। সেই মতো শুক্রবার সকালে নাসিম এবং তাঁর বাবা যাদবপুরে যান। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নাসিমকে। তার পরই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।

‘বাড়ি যেতে পারব না’

বাড়ি গেলে সন্দেহ করতে পারে! সে কারণে বাড়ি যাবেন না বলে পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছিলেন সত্যব্রত। মনে মনে হয়তো আশঙ্কা করেছিলেন। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। শুক্রবার গ্রেফতার হয়েছেন সত্যব্রত। টিভিতে দেখে ভাঙা অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া এক কামরার ঘুপচি ঘরে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর বাবা এবং মায়ের মাথায়। তাঁর বাড়ি নদিয়ার হরিণঘাটা পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের সন্তোষপুর এলাকায়। সত্যব্রতের বাবা প্রদীপ রায় বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সামনে ঠেলাগাড়িতে পেয়ারা বিক্রি করেন। ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে সেলাইয়ের কাজ করেন সত্যব্রতের মা রুমা। হতদরিদ্র পরিবার। তবে ছেলেকে বেসরকারি কনভেন্ট স্কুলে পড়িয়েছেন রায় দম্পতি। ছেলেও বরাবর স্কুলের প্রথম তিন জনের মধ্যে এক জন থেকেছেন। উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছিলেন সত্যব্রত। যাদবপুরে পড়তে গিয়ে ছেলে হস্টেলে জায়গা পেতে স্বস্তি পেয়েছিলেন প্রদীপ। ভেবেছিলেন, পড়ার খরচ কমবে। কিন্তু সেই হস্টেলই যে কাল হবে, বোঝেননি তাঁরা। এখন মামলার খরচ কী ভাবে জোগাবেন, সেটাই চিন্তা রায় দম্পতির।

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Death Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy