Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

অপহৃতই অভিযুক্ত প্রতারণায়, জানা গেল কিনারার পরে

পুলিশের কাছে অপহরণকারীদের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাসিন্দা শশিভূষণ সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নাম করে চার জনের কাছ থেকে সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫১
Share: Save:

গোপন কোনও ডেরায় নয়, অপহরণের পরে অপহৃতকে সোজা থানায় নিয়ে গিয়ে হাজির করেছিল অপহরণকারীরা! শনিবার বিকেলে বালিগঞ্জের সানি পার্ক এলাকায় ঘটে যাওয়া অপহরণ-কাণ্ডের কিনারা করার পরে এমনটাই জানাল পুলিশ। অপহৃত ব্যক্তির নাম শশিভূষণ দীক্ষিত। অপহরণকারীরা পুলিশকে জানিয়েছে, শশিভূষণকে পুলিশের হাতে তুলে দিতেই অপহরণ করা হয়েছিল। কারণ, চাকরির টোপ দিয়ে বহু লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছিল সে। শনিবার গভীর রাতে পুলিশ শশিভূষণকে উদ্ধার করার পরে অপহরণকারী ছয় যুবককে গ্রেফতার করে। রবিবার প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় শশিভূষণকেও।

পুলিশের কাছে অপহরণকারীদের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাসিন্দা শশিভূষণ সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নাম করে চার জনের কাছ থেকে সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়েছিল। ওই যুবকদের চাকরির নিয়োগপত্রও দিয়েছিল সে। কিন্তু পরে দেখা যায়, সেগুলি সবই ভুয়ো। শশিভূষণ টাকার লেনদেন উত্তরপ্রদেশের কোথাও করত না। সবটাই হয়েছিল কলকাতা বিমানবন্দর থানা এলাকায়। এমনই এক প্রতারিত চাকরিপ্রার্থী বিমানবন্দর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। কিন্তু থানা নাকি বলেছিল, শশিভূষণের খোঁজ পেলে তাদের জানাতে। সেই কারণেই প্রতারিত যুবকেরা ঠিক করে, শশিভূষণকে এ বার টাকার টোপ দিয়ে পাকড়াও করা হবে।

সেই মতো অন্য এক যুবককে দিয়ে শশিভূষণকে ফোন করায় তারা। টাকার কথা শুনে টোপ গিলেও ফেলে শশিভূষণ। চাকরিপ্রার্থীকে ফোনে সে সানি পার্কে দেখা করতে বলে। সেই মতো অপহরণকারীরা সেখানে হাজির হয়। শশিভূষণ সেখানে পৌঁছে দেখে, দাঁড়িয়ে আছে আগের দুই পরিচিত চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু সে তখন আন্দাজও করতে পারেনি, কী হতে চলেছে। সেখানে সকলের সঙ্গে চা খেয়ে শশিভূষণ রাস্তায় নামতেই ওই যুবকেরা তাকে ধাক্কা মেরে গাড়িতে তুলে রওনা দেয় বিমানবন্দর থানার দিকে। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি যে, ওই খবর সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের কাছে পৌঁছে যাবে!

এ দিকে, শনিবার বিকেলে সানি পার্ক এলাকার এক চায়ের দোকানির কাছ থেকে এক ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ ও লালবাজারের গোয়েন্দা দফতর। কিন্তু অপহৃত বা অপহরণকারী— কারও বিষয়েই কোনও তথ্য ছিল না কলকাতা পুলিশের কাছে। ছিল শুধু অপহরণে ব্যবহৃত গাড়ির নম্বরটুকু। আর সেই নম্বরের (ডব্লিউবি ২৪এইউ ৭৯০৯) সূত্র ধরেই তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, গাড়ির মালিকের নাম রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি বরাহনগর এলাকার বাসিন্দা। মেলে একটি মোবাইল নম্বরও। আর সেই ফোনের টাওয়ারের অবস্থান খতিয়ে দেখতে গিয়েই পুলিশ জানতে পারে, সেটি বিমানবন্দর থানার কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। সেই মতো শনিবার গভীর রাতে পুলিশের একটি দল বিমানবন্দর থানায় পৌঁছে দেখে, অপহরণকারীরা ও অপহৃত রয়েছে থানার ভিতরেই!

পুলিশ জানিয়েছে, শশিভূষণকে উদ্ধারের পাশাপাশি অপহরণের অভিযোগে থানা থেকেই গ্রেফতার করা হয় জিতেন্দ্র প্রসাদ, সোনপাল সিংহ সিসোদিয়া, সতিন্দর সিংহ, মুন্না সিংহ, চন্দনকুমার পোদ্দার এবং প্রতাপ সিংহ নামে ছয় যুবককে। তখনই পুলিশ জানতে পারে, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে প্রতারণার গল্প। রবিবার তাই শশিভূষণকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে জিতেন্দ্র ও চন্দন বাদে সকলেই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। জিতেন্দ্রর বাবাই রবিশঙ্কর। তাঁরই গাড়িতে করে শশিভূষণকে তুলে আনা হয়েছিল।

পুলিশ জানায়, শশিভূষণ যে চার জনের টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ, অপহরণকারীদের মধ্যে তাদের দু’জন আছে। সোনপাল সিংহ সিসোদিয়া এবং সতিন্দর সিংহ। তা হলে বাকিরা এই ঘটনায় জড়াল কেন? আর রবিশঙ্কর প্রসাদই বা কেন তাঁর গাড়ি ব্যবহার করতে দিলেন? পুলিশকে রবিশঙ্কর জানিয়েছেন, ধৃত সকলেই তাঁর গ্রাম সম্পর্কিত ভাই। তাদের গাড়িটি শুধু ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি।

রবিবার শশিভূষণ ও ছ’জন অপহরণকারীকে আদালতে তোলা হয়। শশিভূষণকে ২১ নভেম্বর এবং বাকিদের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ

দিয়েছে আদালত।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Kidnapping Arrest Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy