Advertisement
২৯ জুন ২০২৪
Hawker's Eviction

‘দখলদার’ উচ্ছেদে বেহালায় নামল বুলডোজ়ার, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বেআইনি দোকান ভেঙে দিল পুলিশ

সোমবার নবান্ন সভাঘরে বিভিন্ন পুরসভার চেয়ারম্যান, পুরনিগমগুলির মেয়র এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের বৈঠকে ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই পুর পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন তিনি।

Police and municipality take action against illegal occupied area in different parts of Kolkata

বেআইনি দখল সরাচ্ছে পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪ ১৭:২৪
Share: Save:

মঙ্গলবারের পর বুধবারও সকাল থেকে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বেআইনি ভাবে দখল করে বসা দোকানদারদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ এবং পুরসভা। সোমবার রাতেও অভিযান চালানো হয়। বেহালা থেকে নিউ টাউন— প্রায় সর্বত্রই বেআইনি দখল সরাচ্ছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত হয়েছে অনেক সামগ্রীও। বেআইনি দোকান ভাঙতে আনা হয় বুলডোজ়ারও। এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়তেও দেখা যায় দোকানিদের। অনেকের প্রশ্ন, ‘‘এ বার খাব কী?’’

সোমবার নবান্ন সভাঘরে বিভিন্ন পুরসভার চেয়ারম্যান, পুরনিগমগুলির মেয়র এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের বৈঠকে ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকে রাজ্যের পুর পরিষেবা নিয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেন তিনি। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় পানীয় জল, আবাসন, পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা থেকে রাস্তা দখল করে অস্থায়ী দোকান নিয়ে সরব হন মমতা। এ নিয়ে মমতার ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় মন্ত্রী-বিধায়কদেরও। তার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই পুলিশকে ‘অ্যাকশন মোড’-এ দেখা গিয়েছিল। গড়িয়াহাট, এসএসকেএম হাসপাতাল সংলগ্ন ফুটপাথ দখল করে থাকা দোকানিদের সরে যেতে বলে পুলিশ। অভিযান চালানো হয় বিধাননগর পুরসভা চত্বরেও। বিধাননগর পুরসভার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং সেক্টর ফাইভে বুলডোজ়ার দিয়ে একাধিক দোকানের কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়।

বুধবারও সেই একই ছবি। কলকাতার বেশ কিছু এলাকার ফুটপাথের দোকান সরাতে অভিযান চালায় পুলিশ। বেহালা, রাজাবাজার, ইএম বাইপাস, শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে এনআরএস হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাতেও অভিযান চলে। এ ছাড়াও আনন্দপুর এলাকার খালের ধারে রাস্তা দখল করে দেওয়া দোকানও সরিয়ে দেওয়া হয়। বেহালা এলাকায় দখলদারি সরাতে ব্যবহার করা হয়েছে বুলডোজ়ার। প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় সোমবার রাতেও অভিযান চালানো হয়।

বুধবার যাঁদের দোকান ফুটপাথ বা রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তাঁদের মধ্যে ক্ষোভের ছবিও দেখা গিয়েছে। বেহালার রাস্তায় অনেক দিন দোকান চালাচ্ছিলেন অর্পণা দাস। স্বামী-স্ত্রী মিলে পালা করে দোকানে বসতেন। কিন্তু বুধবার সকালে সেই দোকানই এসে ভেঙে দেয় পুলিশ। কাঁদতে কাঁদতে অপর্ণা শুধু একটা কথাই বার বার বলছেন, ‘‘এ বার আমরা খাব কী?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের তো আলাদা কোনও আয়ের উৎস নেই। এই দোকানই ছিল সব। দোকানের আয়েই সংসার চলত। মেয়ের পড়াশোনা করাতাম। এখন কী করব?’’ শুধু একা অপর্ণা নন, এমন আরও অনেকেই দোকান হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ আবার পুলিশের ‘অতিসক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলছেন। তন্ময় দাস নামে এক হকার বলেন, ‘‘আমরা এখানে অনেকেই ৩০ বছর ধরে দোকান চালাচ্ছি। প্রায় সকলের কাছেই পুরসভার হকার কার্ড রয়েছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই সকালে পুলিশ এসে আমাদের তুলে দিল। অন্তত কিছুটা সময় দেওয়া উচিত ছিল।’’ বেআইনি দখল নিয়ে বুধবার কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গয়াল বলেন, ‘‘অভিযান চলছে। এর পরেও চলবে। যেখানে যেখানে ফুটপাথে বেআইনি ভাবে হকারেরা বসে আছেন, তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হবে।’’

কলকাতার এই দখলদারি উচ্ছেদ নিয়ে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ বলেন, ‘‘এটা একটা দুর্বল চিত্রনাট্য। মুখ্যমন্ত্রীকে যদি দখলদারি মুক্ত করতে হয় তবে সরকারি খাস জমিত, নদীর পাড়ের দখল মুক্ত করতে হবে। জলাজমি বুজিয়ে বেআইনি ভাবে যে সব নির্মাণ তৈরি হয়েছে, সেগুলি কী হবে? ব্যবস্থা নিলে সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃণমূল আর জখলদারি সমার্থক শব্দ।’’ অন্য দিকে, হকার সংগঠনের সঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বৈঠকে বসেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hawker Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE