Advertisement
২৯ জুন ২০২৪
Arnab Dam

পিএইচডি-র লক্ষ্যে মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম, যাবজ্জীবন দণ্ডিত বন্দির ইন্টারভিউ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে

অর্ণবের দাবিতে সমর্থন জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছিল। অবশেষে কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেওয়ায় তাঁর ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।

Arnad Dam

ধৃত মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
চুঁচুড়া ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪ ১৫:১৮
Share: Save:

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম বন্দি রয়েছেন হুগলির জেলে। সংশোধনাগার থেকেই তিনি পিএইচডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বুধবার মৌখিক পরীক্ষা দিতে পুলিশি ঘেরাটোপে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন অর্ণব।

২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। মৃত্যু হয় ২৪ জন ইএফআর জওয়ানের। ওই মামলায় ২৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। সশস্ত্র বাহিনীর শিবিরে মাওবাদী হামলার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত মাওবাদী নেতা সুদীপ চোংদারের মৃত্যু হয়েছে অনেক দিন আগে। ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অর্ণবের সাজা হয় গত বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি। প্রথমে তাঁকে রাখা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের সংশোধনাগারে। গত ১৭ মার্চ থেকে তিনি বন্দি হুগলি সংশোধনাগারে। সেখান থেকে তাঁকে পিএইচডি করার সুযোগ করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন অর্ণব।

সেই আবেদন বিচারক নথিভুক্তও করলেও বিষয়টি জেল কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করতে বলেছিলেন। কিন্তু সংশোধনাগারে আসার পর অর্ণবের আবেদন বিশেষ পাত্তা পায়নি। সে জন্য মাওবাদী নেতা অনশন করবেন ঘোষণা করেন। বস্তুত, জেল থেকে পরীক্ষা দিয়েই স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট (সেট)-এ সফল ভাবে উত্তীর্ণ হন এক সময়ের রাজ্যের শীর্ষ মাওবাদী নেতা।

মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর অর্ণবের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছিল। অবশেষে কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেওয়ায় অর্ণবের ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। বুধবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে হাজির হয়ে মৌখিক ইন্টারভিউও দেন অর্ণব। হুগলি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলে ‘ভাল লাইব্রেরি’ আছে। সেখান থেকে বই নিয়ে পড়াশোনা করছেন অর্ণব। মৌখিক ইন্টারভিউতে তিনি পাশ করলে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করবেন।

গড়িয়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এসকে দামের ছেলে অর্ণব। মেধাবী পড়ুয়া মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে খড়্গপুর আইআইটি-তে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু তিনটি সিমেস্টারের পর আচমকা খড়্গপুর আইআইটির ক্যাম্পাস থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান অর্ণব। পরে জানা যায়, সিপিআই (মাওবাদী)-এর রাজনৈতিক মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে তিনি ১৯৯৮ সালে সেই সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত মাওবাদী নেতা কিষেণজির স্নেহভাজন ছিলেন অর্ণব। আইআইটির ক্যাম্পাস থেকে পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ে-জঙ্গলে হাতে একে-৪৭ নিয়ে ডেরা বেঁধেছিলেন এই যুবক। লালগড় আন্দোলনের সময় অযোধ্যা-বাঘমুন্ডির পাহাড়-জঙ্গলে তাঁর গেরিলা বাহিনী নাজেহাল করে দিয়েছিল যৌথ বাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দাদের। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা থেকে শুরু করে একাধিক মাওবাদী হামলায় অভিযুক্ত অর্ণব ২০১২ সালে আসানসোলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। জেলবন্দি হওয়ার পর থেকেই ওই গেরিলা নেতা নতুন করে উচ্চশিক্ষায় মন দেন। বিষয় হিসাবে বেছে নেন ইতিহাস। গরাদের ভিতরে থেকেই অর্ণব প্রথম শ্রেণিতে ইতিহাসে স্নাতক হন। স্নাতকোত্তরেও ৬৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেন তিনি। তার পর ‘নেট’-এর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ইন্দ্রজিৎ রায় বলেন, ‘‘উনি ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু) থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হন। নিয়ম মেনেই আবেদন করেছিলেন। আমরা সেই আবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের গোচরে আনি। ঠিক হয়েছে, তিনি ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মাবলি মেনে আবেদন করলে সুযোগ দেওয়া হবে। সেই মতো হুগলি জেলা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তাঁরা সব ব্যবস্থা করে আজ (বুধবার) তাঁকে নিয়ে আসেন। সব কিছু ঠিক থাকলে (ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হলে) অর্ণব পিএইচডি করার সুযোগ পাবেন।’’ এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর অর্ণবকে নিয়ে বলেন, ‘‘সম্ভবত একটা ইতিহাস হতে চলেছে। এর আগে কেউ জেলে থেকে বিএ, এমএ এবং পিএইচডি-ও করেছেন বলে জানা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maoist Leader PhD Courses arrested Hooghly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE