ফলে শহরের অধিকাংশ সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কেই প্লেটলেট কার্যত তলানিতে! ফাইল ছবি
রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ কতটা ভয়াবহ আকার নেবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তার মধ্যেই নতুন চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লেটলেটের অপ্রতুলতা। কারণ, ডেঙ্গির প্রকোপ যত বাড়বে, ততই বাড়বে প্লেটলেটের চাহিদা। কিন্তু সেই হারে রক্তদান শিবির হচ্ছে না। যেটুকু হচ্ছে, সেখানেও রক্তের উপাদানের পৃথকীকরণ নিয়ে গড়িমসি রয়েছে। ফলে শহরের অধিকাংশ সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কেই প্লেটলেট কার্যত তলানিতে!
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গির প্রকোপ চলবে। তাঁদের মাথাব্যথা সেটাই। কারণ, ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অক্টোবরের শুরুতে পুজো হলেও এ বার সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকে কাঠি পড়ছে। এক মাস ধরে বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পুজো উদ্যাপনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, আগে গোটা অগস্ট জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় রক্তদান শিবির হত। এ বার তাতে ভাটা পড়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, সেপ্টেম্বর থেকে পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন সকলে। ফলে কতগুলি রক্তদান শিবির আদৌ করা যাবে, সংশয় থাকছে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রের পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য অপূর্ব ঘোষের কথায়, “পুজোর অনুদান বাড়লেও রক্তদান শিবিরে দাতাপিছু বরাদ্দ বাড়ে না। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে এখনও দাতাপিছু ২৫ টাকা দেওয়া হয়। অগত্যা বেসরকারি দিকে ঝোঁক বাড়ছে। তবে অনুদান পাওয়া পুজো কমিটিগুলির ক্ষেত্রে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ককে নিয়ে রক্তদান শিবির করা বাধ্যতামূলক করা উচিত।’’
করোনার সময় থেকে রক্তদান শিবির কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। তার উপরে যত রক্ত সংগৃহীত হচ্ছে, সেখানেও উপাদানের পৃথকীকরণে ঘাটতি থাকছে। ফলে ডেঙ্গি আরও বাড়াবাড়ি আকার নিলে যেটুকু প্লেটলেট ভাঁড়ারে রয়েছে তাতে চাহিদা মিটবে কি না, তা-ই চিন্তায় রাখছে চিকিৎসকদের। বেশির ভাগ রক্তদান শিবিরে ‘ডাবল ব্যাগ সিস্টেম’ চলছে। অর্থাৎ সংগৃহীত রক্ত থেকে পৃথক করা হচ্ছে প্যাকড সেল এবং প্লাজ়মা। ‘ট্রিপল ব্যাগ সিস্টেম’-এর’ ক্ষেত্রে রক্ত থেকে প্যাকড সেল, প্লাজ়মা এবং প্লেটলেট— এই তিনটি উপাদান পৃথক করা যায়। নিয়মানুযায়ী, সংগৃহীত রক্তের উপাদান ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে পৃথক করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্তদান শিবির থেকে কর্মীদের ফিরতে দেরি হওয়ায় সে দিন আর এই পৃথকীকরণ হচ্ছে না। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের অভিযোগ, সরকারি স্তরে ঠিক মতো নজরদারি না থাকায় সারা বছর প্লেটলেট নিয়ে সমস্যা থাকে। যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ব্লাড সেফটি বিভাগের এক কর্তার কথায়, “ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্লেটলেটে যাতে ঘাটতি না হয়, সে দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে সব ব্লাড ব্যাঙ্ককে।’’
ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে প্লেটলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন এন আর এসের হেমাটোলজির বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক তুফানকান্তি দলুই। তাঁর কথায়, “প্লেটলেট ২০ হাজারের নীচে নেমে গেলে শরীরের যে কোনও অংশ থেকে রক্তপাত হতে পারে। তখন প্লেটলেট দিতেই হবে। রোগীর ওজন অনুযায়ী, প্রতি কেজিতে এক ইউনিট প্লেটলেট দিতে হয়। সেখান থেকে তৈরি হয় পাঁচ হাজারের মতো প্লেটলেট। অর্থাৎ, এক জন রোগীর অন্তত ৫-৬ ইউনিট প্লেটলেট প্রয়োজন।’’ প্রসঙ্গত, শহরের পাঁচটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক, মানিকতলা ইএসআই, হাওড়া জেলা হাসপাতাল এবং বারাসত জেলা হাসপাতালে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা রয়েছে।
কিন্তু রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ‘জীবনশক্তি পোর্টাল’-এ (যে পোর্টালে প্রতিটি ব্লাড ব্যাঙ্কে কত ইউনিট রক্ত মজুত, সেই তথ্য মেলে) দেখা যাচ্ছে, ওই হাসপাতালগুলির বেশির ভাগের ভাঁড়ারেই প্লেটলেট তলানিতে। এক চিকিৎসকের কথায়, “লিউকেমিয়া, কেমোথেরাপির রোগীদের মতো কিছু ক্ষেত্রে প্লেটলেট অত্যন্ত জরুরি। সেখানে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়লে, কয়েক মিনিটে ১০০ ইউনিট প্লেটলেট শেষ হয়ে যাওয়া বড় ব্যাপার নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy