Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Petrol Pumps

Petrol pumps: জ্বালানির জ্বালা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে হিসেবের কারচুপি

সেঞ্চুরি করা জ্বালানির দাম আরও বাড়বে কি না, সেই আতঙ্কের মধ্যেই জুড়েছে আরও একটি আশঙ্কা

বেআইনি: ডালহৌসি এলাকায় বিক্রি হচ্ছে কাটার তেল। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বেআইনি: ডালহৌসি এলাকায় বিক্রি হচ্ছে কাটার তেল। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২১ ০৫:৪৯
Share: Save:

প্রবল উত্তেজনা কাঁকুড়গাছির একটি পেট্রল পাম্পে। এক হাজার টাকায় যতটা পেট্রল পাওয়ার কথা, তার চেয়ে কম পেয়েছেন বলে চিৎকার করছেন এক ব্যক্তি। এর পরে এক লিটারের প্লাস্টিকের বোতলে এক লিটার তেল ভরতে বলেন তিনি। কিন্তু গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও পাত্রে তেল দেওয়া হয় না বলে পাম্পকর্মীরা জানাতেই শুরু হল নতুন তর্ক।

বোতলে তেল দিতে সমস্যা কোথায়? চাপের মুখে শেষে ওই বোতলে তেল ভরতেই দেখা গেল, পরিমাণে তা এক লিটারের চেয়ে কম। মাপ ঠিক নেই কেন? পাম্পকর্মীদের জবাব, “মাপ ঠিকই আছে। পেট্রল হাওয়ায় উড়ছে।” পরিস্থিতি সামলাতে এর পরে ঘটনাস্থলে যেতে হয় ফুলবাগান থানার পুলিশকে।

সেঞ্চুরি করা জ্বালানির দাম আরও বাড়বে কি না, সেই আতঙ্কের মধ্যেই জুড়েছে আরও একটি আশঙ্কা— শহরের পাম্পগুলিতে কি এ ভাবেই জ্বালানির মাপে কারচুপি করা হয়? দেখা গেল, স্রেফ মাপের কারচুপিই নয়, ডালহৌসি, রুবি, ময়দান এবং আলিপুরের মতো জায়গায় ‘কাটার তেল’ হিসেবে গোপনে বিক্রিও হয় এই বাড়তি তেল। শনিবার যেখানে ইন্ডিয়ান অয়েলের লিটারপিছু পেট্রলের দাম ছিল ১০২.০৮ টাকা এবং ডিজ়েল ছিল ৯৩.০২ টাকা, সেখানে ওই কাটার তেল বিক্রি হয়েছে লিটারে ৯৫ টাকায়, ডিজ়েল ৮৫ টাকায়।

এ জে সি বসু রোডের একটি পাম্পের কর্মী বললেন, “যে পাম্পে বোতল বা অন্য পাত্রে তেল বিক্রি হয় না, সেখানে নিশ্চিত ভাবেই মিটারে কারচুপি করা হয়। কোথাও কারচুপি করে লিটারে প্রায় ০.৩৫ মিলিলিটার, কোথাও ০.৫০ মিলিলিটার কম তেল দেওয়া হয়। শনিবারের ১০২.০৮ টাকা দামের হিসেবে এক হাজার টাকায় ৯.৭৯৬২৩৮২৪৪৫ লিটার তেল পাওয়ার কথা। কিন্তু গ্রাহক বুঝতেই পারবেন না যে, তাঁকে প্রতি লিটারে কতটা কম তেল দেওয়া হয়েছে।”

যাদবপুরের একটি পাম্পের এক কর্মী আবার বললেন, “প্রতি শিফটে পাম্পে এক জন মাপ দেখার দায়িত্বে থাকেন। দিনে কত হাজার লিটার তেল বিক্রি হল ও কত তেল বাঁচানো গেল, সেই হিসেবও তাঁকেই রাখতে হয়। সেই বাঁচানো তেল তাঁরা পাম্প মালিকের কাছে বিক্রি করেন। যে যত বেশি তেল বাঁচাতে পারবেন, তাঁর উপরি পাওনা তত বেশি।” কসবা কানেক্টরের একটি পাম্প থেকে জানা গেল, এত ক্ষুদ্র হিসেব কোনও গ্রাহকই দেখেন না। তাই একটি বড় গাড়ির ট্যাঙ্ক সম্পূর্ণ ভরতে পারলে ৬০-৭০ টাকা করে আয় হয় পাম্পকর্মীর। এর সঙ্গেই চলে ‘কাটার তেলের’ রমরমা।

দিন কয়েক আগেই বড়তলা থানায় কাটার তেলের কারবারিদের খপ্পরে পড়ার অভিযোগ করেন সুধীর গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, “গ্যারাজে গাড়ি সারাতে দিয়ে দেখি ১৯ লিটার তেল উধাও। বলেছিল, গাড়ি সারাতে গিয়ে নাকি লিক হয়ে তেল পড়ে গিয়েছে।” কলকাতা হাইকোর্টেও এমন কাটার তেলের রমরমা বাজারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, “কয়েকটি গ্যারাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। মূলত চালকদের একাংশ ও পেট্রল পাম্পের লোকজন এই ব্যবসায় যুক্ত। দিনে ১০ হাজার লিটার তেল বিক্রি হয়েছে দেখিয়ে বহু পেট্রল পাম্পই গ্যারাজে বাড়তি তেল বিক্রি করে। সেখান থেকে হাত ঘুরে তা চলে যায় কাটার তেলের বাজারে। আধুনিক গাড়ি থেকে এ ভাবে তেল বার করা কঠিন হলেও সংস্থার মনোনীত গ্যারাজ বাদে অন্য কোথাও যখন গাড়ি সারাইয়ের জন্য দেওয়া হয়, তখনই শুরু হয় হাত সাফাই।”

ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রসেনজিৎ সেন বললেন, “আগে পাম্পের বিরুদ্ধে প্রচুর এমন অভিযোগ আসত। কিন্তু এখন কড়া হাতেই সামলাচ্ছি। ৯০ শতাংশ পাম্প স্বচ্ছতার সঙ্গেই কাজ করছে। তা ছাড়া, তেল সংস্থাগুলিও ওটিপি-র মাধ্যমে যন্ত্রগুলি বেঁধে দিয়েছে। কারচুপি করা কঠিন।” তবুও এমন অভিযোগ বার বার ওঠে কেন? লালবাজার সদরের দায়িত্বপ্রাপ্ত, যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বললেন, “গত কয়েক দিনে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। পাম্পগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কয়েকটি পাম্পের মালিকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। গাফিলতি পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Petrol Pumps
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE