ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে ধস নেমেছে বাড়িতে। পাখি-সহ খাঁচা নিয়ে বেরিয়ে এলেন এক বাসিন্দা। রবিবার বৌবাজারে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
ক্ষীণ আশা ছিল শনিবার সন্ধ্যাতেও। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে কার্যত ‘উদ্বাস্তু’ হয়ে যাওয়ার দেওয়াল-লিখন পড়ে ফেলেছেন তাঁরা।
ওই সন্ধ্যায় ঝুরঝুরে বাড়িটায় একা কী ভাবে ঘণ্টা দুই ছিলেন, ভেবেই শিউরে উঠছেন বৌবাজারের ন’নম্বর সেকরাপাড়া লেনের গৃহিণী মমতা সেন। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গে ‘টানেল বোরিং মেশিন’ চলবে বলে কয়েকটি বাড়ির বাসিন্দাদের আগেই সরে যাওয়ার নোটিস দেওয়া হয়েছিল। ২৯ অগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ন’নম্বর বাড়ির সব বাসিন্দাকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের লাগোয়া গলির একটি হোটেলে সরে যেতে বলে মেট্রো রেল। সেই ‘নির্বাসন পর্ব’ মেটার ঠিক আগের দিনেই গোটা বাড়ি বা পাড়াটার একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। প্রৌঢ়া মমতাদেবীর কাছে ঘর ছেড়ে এই হোটেল-বাস অসহনীয় লাগতে শুরু করেছে। বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে যেন জেলে আছি! বাড়িতে পোষা পাখিগুলো বোধ হয় মরেই গেল!’’ অশীতিপর শ্বশুর-শাশুড়ি, তাঁর ছেলেমেয়েরা, সন্তানপ্রতিম পোষ্য চারটি কুকুর— সবার পক্ষেই হোটেলের খাবার খেয়ে থাকা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় এক বার বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন মমতাদেবী। মেয়ের দাঁতে অস্ত্রোপচার হওয়ায় একটু সুজি এবং চারটে কালচার পম আর লাসা কুকুরের জন্য গলা ভাত করার জন্য তিনি বাড়িতে ঢোকেন। তার জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে সই করতে হয়েছে। মমতাদেবী বলছেন, ‘‘দু’টি ঘরের দেওয়ালে এবং সিঁড়িতে ভাল রকম ফাটল দেখি তখনই।’’
মমতাদেবী বাড়ি ভাঙার খবর পান রবিবার সকালে, পাড়ার ফোনে। ওই পাড়ায় পাশাপাশি বাড়িগুলির দেওয়ালে ফাঁক নেই। সব বাড়ি এক দিকে হেলে গিয়েছে। শ্বশুরের বাবার আমলের বাড়িতে কবে ফিরতে পারবেন, জানেন না তিনি। একটু পেঁপে-কাঁচকলা দিয়ে হাল্কা বাঙালি রান্নার জন্য প্রাণ তাঁর হাঁকপাঁক করছে।
নিয়ম কী
• সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময় উপরের বাড়ির স্বাস্থ্য (বাড়ির বয়স, কাঠামোর শক্তি) পরীক্ষা করা।
• কোনও বাড়ির স্বাস্থ্য খারাপ হলে অনেক আগে মেরামত করা।
• কোনও বাড়ি ছাদ ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকলে শালকাঠ বা ইস্পাতের খুঁটি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া।
• মাটি বসে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে ‘গ্রাউটিং’ (বিশেষ ইমারতি মিশ্রণ) করে তা ঠেকানোর ব্যবস্থা করা।
প্রশ্ন যেখানে
• সুড়ঙ্গ খোঁড়ার আগে ওই এলাকার বাড়ির স্বাস্থ্যসমীক্ষা কতটা হয়েছিল?
• সমীক্ষায় গলদগুলো উঠে এল না কেন?
• সমীক্ষায় ওই এলাকার বাড়ির দুর্বলতা কতটা
ধরা পড়েছিল?
ধরা পড়লে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি?
দুর্গা পিতুরি লেনের বৃদ্ধ দম্পতি অনীতা ও চিন্ময় দত্তদের শনিবার রাতেই বাড়ি থেকে বার করে আনেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী চিন্ময়বাবু হোটেলে বসে বললেন, ‘‘পেনশনের কাগজগুলো পর্যন্ত ওই বাড়িতে পড়ে আছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পুলিশ মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছিল।’’
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির নীচে বসেছে পুলিশের ব্যারিকেড। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
দুর্গা পিতুরি লেনের প্রিন্টিং ব্যবসায়ী জয়ন্ত শীল জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য গড়ানো গয়না, দলিলপত্র সব নিয়ে ধসে পড়েছে সেই বাড়ি। থাকতে হচ্ছে হোটেলের রিসেপশনে। ঘর মেলেনি। দত্ত দম্পতি সারা ক্ষণ টিভি-তে পাড়ার খবরই দেখছেন। পাশের শীলদের বাড়িটা শেষ অবস্থা কী, গোয়েনকা কলেজে সরকারি কর্তাদের বৈঠকে মেয়র কী বললেন— প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে হোটেলের ঘরের ঠাসাঠাসি ভিড়ে। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, তালতলা বা বড়বাজারের চারটি হোটেলের প্রায় সব ঘরেই বিপন্ন পাড়ার বাসিন্দারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় রবিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মেট্রো-কর্তৃপক্ষ ঠিক সময়ে বিপদ আঁচ করায় প্রাণহানি আটকানো গিয়েছে বলে তাঁর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy