অপেক্ষা: সুভাষ সরোবরে এক প্রতিযোগী । ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
দিনভর ছিপ ফেলে বসে থেকেও মাছ উঠছিল না কারও বঁড়শিতে। ফিরতে হয়েছে শুধুই মাছের খাবার হাতে। কোনও দিন আবার মাছ উঠলেও সংখ্যায় তা মাত্র একটি! সুভাষ সরোবরের ‘ঘোলা জল’-এ মাছ ধরতে গিয়ে ‘সারা বাংলা মৎস্য শিকার প্রতিযোগিতায়’ অংশগ্রহণ করা কয়েকশো মৎস্য শিকারি গত এক সপ্তাহে এমনই নাস্তানাবুদ হয়েছেন বলে খবর। হতাশ হয়েছেন টিকিট কেটে মাছ শিকার দেখতে আসা দর্শকেরাও।
সম্প্রতি মরা মাছ ভেসে ওঠায় সুভাষ সরোবরের জলের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। সরোবরে গত ছট পুজোর তাণ্ডবের পরে সেই প্রশ্নই আরও জলবাতাস পায়। সরোবরের দায়িত্বে থাকা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) অবশ্য ছটপুজোর সময়ে দাবি করেছিল, জল দূষিত নয়। যদিও মৎস্য শিকারিদের বড় অংশের বক্তব্য, তাঁদের বঁড়শিতে মাছ ধরা না দেওয়ার মূল কারণই জলের দূষণ। এ জন্য তাঁরা দায়ী করছেন, সরোবরে মেশা বর্জ্য মিশ্রিত জলকে। রবিবার এক মৎস্য শিকারি বলেন, ‘‘সরোবরের জলের নীচে প্রচুর কাদা এবং গ্যাস জমে রয়েছে। বঁড়শিতে চালের গুঁড়ো, পোলাও, পাউরুটি দিয়ে তৈরি মণ্ড দিই আমরা। তাতেই আকৃষ্ট হয় মাছ। কিন্তু সেই খাবারের গন্ধ হয়তো এই গ্যাসের জন্য মাছ পর্যন্ত পৌঁছচ্ছেই না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বঁড়শি ফেলার পরে কয়েকটি মরা মাছ ভেসে উঠেছে। আমি অন্তত একটাও জ্যান্ত মাছ পাইনি।’’
সুভাষ সরোবরে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাঙ্গলার্স অ্যাসোসিয়েশন’। এ বছর তাদের ৪১তম বর্ষ। অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, গত ২৪ নভেম্বর শুরু হওয়া প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী, মাছের ওজনের ভিত্তিতে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় নির্ধারণ করা হয়। দিনের সব চেয়ে বেশি ওজনের যে মাছটি উঠবে, সেটি যিনি ধরবেন তিনিই ওই দিনের প্রথম স্থানাধিকারী। অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, ২৪ নভেম্বর একটিও মাছ ধরা পড়েনি। ২৫ নভেম্বর ধরা পড়ে প্রায় ছ’কিলোগ্রাম ওজনের একটি মাছ। ২৬ নভেম্বরও মাছ ধরা পড়েনি। এক উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘২৭ তারিখেও একটি মাছ ওঠে চার কিলোগ্রামের। অন্য মাছটির ওজন ছিল ছ’শোরও কম।’’ ২৮ এবং ২৯ নভেম্বর একটিও মাছ ধরতে পারেননি প্রতিযোগীরা। ৩০ তারিখেও মাত্র একটিই মাছ ওঠে। ওজন ছিল প্রায় আট কিলোগ্রাম। তবে প্রতিযোগিতার শেষ দিনে রবিবার, মোট তিনটি মাছ উঠেছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাঙ্গলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর অন্যতম সদস্য সুব্রত সেন বলেন, ‘‘খুবই হতাশায় ভুগতে হয়েছে এ বার। সরোবরের এমন অবস্থা আগে দেখিনি। জলের এই অবস্থা হলে প্রতিযোগিতা হবে কী করে?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেএমডিএ জল পরিষ্কার করাতে বনগাঁ থেকে লোক আনল। নতুন করে পরীক্ষা করল। তার পরেও তো কিছুই হল না!’’ কেএমডিএ-র আধিকারিক সুধীন নন্দী বলেন, ‘‘জল পরিষ্কার রাখার জন্য যা যা ব্যবস্থা, সবই করা হয়েছে। সম্প্রতি বাইরে থেকে মিশে যাওয়া খারাপ জলের উৎসও খুঁজে বার করা হয়েছে। দ্রুত এই সমস্যা মেটানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy