শ্রদ্ধা: প্রয়াত পর্বতারোহীদের স্মরণসভায়। রবিবার, সোনারপুরে। নিজস্ব চিত্র
মৃত্যু যতই থাবা বসাক, পাহাড়ে অভিযান বন্ধ হবে না। রবিবার সোনারপুরের একটি পর্বতারোহণ ক্লাবে, সম্প্রতি প্রয়াত চার পর্বতারোহী কুন্তল কাঁড়ার, বিপ্লব বৈদ্য, দীপঙ্কর ঘোষ এবং অমূল্য সেনের স্মরণসভায় এই শপথ নিলেন রাজ্যের অভিযাত্রীদের বড় একটি অংশ। ওই চার জনের মধ্যে প্রবীণ অমূল্যবাবু বাড়িতেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। বাকি তিন জনেরই মৃত্যু হয়েছে অভিযানে গিয়ে। গত মাসে কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে বিপ্লব-কুন্তল এবং মাকালু অভিযানে গিয়ে মৃত্যু হয় দীপঙ্করের।
সম্প্রতি কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ হিমালয়ের একাধিক আট হাজারি শৃঙ্গ অভিযানে গিয়ে কার্যত মৃত্যুমিছিল চলেছে। তার পরেই অভিযানে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। পর্বতারোহণে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা কী ভাবে করা উচিত, সে বিষয়েও গভীর বিশ্লেষণের দাবি উঠেছে এ দিনের সভায়।
হিমালয়ের শৃঙ্গ এমনিতেই দুর্গম। তার উপরে গত কয়েক বছর ধরে দুর্যোগও ঘটছে মাঝেমধ্যেই। যার পিছনে বিশ্ব উষ্ণায়ন দায়ী কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। কেউ কেউ এ-ও বলছেন, অভিযানের সংখ্যা যেন এক ধাক্কায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি এভারেস্টে আরোহণের পথে রীতিমতো জন-জট তৈরি হয়েছিল। পাহাড় চুড়োয় ওঠার আগে বরফে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অনেকে। কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছিল। ইদানীং যে ভাবে অভিযান বেড়েছে, তাতে সকলে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে পাহাড়ে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রুদ্রপ্রসাদ হালদার এবং রমেশ রায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে তাঁরা দু’জনে হারিয়েছেন দুই বন্ধু বিপ্লব ও কুন্তলকে। নিজেরা তুষারক্ষতের শিকার হয়েছেন। কী ভাবে সেই বিপদ ঘনিয়েছিল, এ দিন তার বর্ণনা দেন রুদ্র। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত এবং মলয় মুখোপাধ্যায়ও। ‘‘শুধু শারীরিক সক্ষমতা নয়, এ ধরনের অভিযানে মানসিক শক্তিরও পরীক্ষা দিতে হয়’’— দীর্ঘদিন অভিযাত্রীদের নিয়ে কাজ করে এটাই উপলব্ধি করেছেন বাংলাদেশের মনোবিদ মারুফা হক।
দুর্যোগ কাটিয়ে বন্ধুর কফিন কাঁধে ফেরা শুধু শরীর নয়, ভারী করে দেয় মনকেও। তবু শরীর-মনে জোর জুগিয়ে ফের পাহাড় জয়ের স্বপ্ন দেখছেন বাঙালি অভিযাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy