উদাসীন: মাস্ক পরেননি এক পথচারী। মাস্ক গলায় ঝুলছে এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরও। মঙ্গলবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
রাজ্যে করোনার লেখচিত্র ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, রবিবার রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪২২ জন। সোমবার সেই সংখ্যাটা সামান্য কমলেও দাঁড়িয়েছিল ৩৬৮-তে। যাঁদের মধ্যে শুধু কলকাতায় সংক্রমিত হয়েছিলেন ১২৮ জন। মঙ্গলবার বঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা ফের চারশোর গণ্ডি ছাড়িয়েছে। নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন মহল থেকে কঠোর ভাবে করোনা-বিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত রাস্তায় বেরোলে লোকজন যাতে মাস্ক পরেন, বার বার সে কথা বলছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তার পরেও শহর জুড়ে অসচেতনতার নানা ছবি প্রতিদিন সামনে আসছে। গণপরিবহণে তো বটেই, এমনকি শহরের জনবহুল স্থানেও মাস্ক ছাড়া দেদার ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। অভিযোগ, কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা সব দেখেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আর পুলিশের তরফে এই ‘ঢিলেমি’ চিন্তা বাড়াচ্ছে সচেতন শহরবাসীর।
কলকাতা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাস্ক না পরে ঘোরাঘুরি করার জন্য সোমবার সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ২৪২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই সংখ্যাটা ছিল ১৬২। তবে কী ব্যবস্থা, তা নিয়ে পুলিশের তরফে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। যদিও মাস্ক না পরার জন্য পুলিশের তরফে এই ব্যবস্থা নেওয়ার সংখ্যা কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত ছিল আরও কম। তবে তথ্য যা-ই বলুক, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ— প্রায় প্রতিটি জনবহুল জায়গা এবং শপিং মলে অধিকাংশ লোকজনের মুখে মাস্কের বালাই নেই। অভিযোগ, করোনা-বিধি না মেনে চলছে ভোটের প্রচারও। রাজনৈতিক দলগুলির মিছিল-সমাবেশে মানা হচ্ছে না দূরত্ব-বিধি। শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, করোনা-বিধি না মানা, বিশেষত মাস্ক না পরার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। গড়িয়ার বাসিন্দা পুবালি দাস বলেন, ‘‘শহরের মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা এখন কোথায়? পাড়ার দোকান-বাজার, শপিং মল, সর্বত্র মাস্ক ছাড়া বেশির ভাগ লোক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। লকডাউনের সময়ে পুলিশ যতটা সক্রিয় ছিল, সেই সক্রিয়তা এখন আর দেখছি না। ফলে লোকজনও বল্গাহীন হয়ে পড়েছেন।’’
এ দিন ধর্মতলার ভিড়ে বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরছিলেন হাওড়ার বাসিন্দা সুবীর বসু। কারও মুখে মাস্ক নেই। সংক্রমণ তো বাড়ছে, মাস্ক পরেননি কেন? সুবীরের উত্তর, ‘‘এত দিনেও যখন করোনা ছুঁতে পারেনি, আর কিছু হবে না। গরমে মাস্ক পরতেও খুব কষ্ট হয়। আর করোনার ভয়ে তো দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকব না! তা ছাড়া, এখন তো প্রতিষেধক এসে গিয়েছে।’’ কথা বলার ফাঁকে অবশ্য তাঁর বান্ধবী ব্যাগ থেকে মাস্ক বার করে তড়িঘড়ি পরতে শুরু করলেন।
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘করোনার শুরুতে সাধারণ মানুষের একাংশ সচেতন ছিলেন। তাঁরা হয়তো এখনও সচেতন আছেন। আর একটি অংশ প্রথম থেকেই ছিলেন অসচেতন। সংক্রমণের গোড়ার দিকে প্রশাসনের কড়াকড়ির জন্য অধিকাংশই করোনা-বিধি মেনে চলতেন। কিন্তু এখন প্রশাসন ততটা কড়া
মনোভাব না নেওয়ায় অসচেতনতার মাত্রা বেড়ে গিয়েছে।’’
মাস্ক না পরলে আইনত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়? কলকাতায় বিনা মাস্কে জনবহুল স্থানে ঘোরাঘুরি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশ আইনের ৬২বি এবং ৬৬ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা যেতে পারে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পুলিশের তরফে সতর্ক করা হয়। তবে মাস্ক না পরার জন্য কত জনকে জরিমানা করা হয়, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান কলকাতা পুলিশের দেওয়া তথ্যে থাকে না। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, ‘‘প্রতিটি ডিভিশনকে বলা হয়েছে, মাস্ক না পরা লোকজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে। পাশাপাশি, শহরবাসীকে সচেতন করার উপরেও জোর দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy