Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Water crisis

তীব্র গরমে নেমেছে জলস্তর, বিকল আর্সেনিক শোধন প্লান্ট, জলাভাব নিয়ে উদ্বেগ রাজারহাটে

এই তাপে রাজারহাটের অনেক জায়গায় জলস্তর নেমে গিয়েছে। যার জেরে বিকল হয়ে গিয়েছে ৩৫টি আর্সেনিক পরিশোধন প্লান্টের সিংহভাগই। এর প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে।

An image representing water crisis

পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে প্রাকৃতিক কারণে হলেও জলের সমস্যার এই বিষয়টি চাপে ফেলেছে প্রশাসনকেও। প্রতীকী ছবি

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৩৫
Share: Save:

একটানা তীব্র দহনজ্বালায় পুড়েছে সমগ্র বঙ্গ। আর এই তাপে রাজারহাটের অনেক জায়গায় জলস্তর নেমে গিয়েছে। যার জেরে বিকল হয়ে গিয়েছে ৩৫টি আর্সেনিক পরিশোধন প্লান্টের সিংহভাগই। এর প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতিতে আর্সেনিকমুক্ত জল তৈরির ওই প্লান্টগুলি তড়িঘড়ি মেরামত করার কর্মসূচি নিয়েছে রাজারহাট বিডিও-র দফতর।

আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, জলস্তর নেমে যাওয়ায় সব চেয়ে সমস্যা হচ্ছে ওই সব অঞ্চলের স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল রান্নার কাজে। গভীর নলকূপ বিকল হয়েছে দুই জায়গায়— একটি চাঁদপুর পঞ্চায়েতের অধীন পানাপুকুরে, অন্যটি রাজারহাট-বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েতের কাজিয়ালপাড়ায়। সম্প্রতি ওই দু’টি নলকূপ সারানো হলেও জলে আর্সেনিক চলে আসার আশঙ্কায় সর্বত্র সেই কাজও করা যাচ্ছে না। ফলে আর্সেনিকমুক্ত জলের প্লান্টগুলি জরুরি ভিত্তিতে সারাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

রাজারহাটের বিডিও ঋষিকা দাস জানান, তাঁর অধীনে থাকা পাঁচটি পঞ্চায়েতে ৩৫টি আর্সেনিক পরিশোধন প্লান্ট রয়েছে। সেগুলির বেশির ভাগই বিকল হয়ে গিয়েছে এই প্রবল গরমে। তাই সব ক’টি প্লান্টই সারাই করা হবে। বিডিও বলেন, ‘‘প্রতিটি ট্রিটমেন্ট প্লান্টের অধীনে একাধিক এলাকা রয়েছে। সেই সব এলাকার জলের উৎস সংশ্লিষ্ট প্লান্টগুলি। এ দিকে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নির্দেশ মেনে

ইচ্ছে মতো যে কোনও জায়গায় খননও করা যাবে না। তাই আগে আর্সেনিকমুক্ত জলের প্লান্টগুলি ঠিক করা হবে।’’

রাজারহাটের এই সব এলাকা নামে পঞ্চায়েত হলেও সব জায়গাতেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। অনেক জায়গায় গড়ে উঠেছে বহুতল। যেখান থেকে সারা বছর বিপুল পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হয়। তার উপরে এলাকার অনেক বড় বড় মাঠ সরকারি নির্দেশে উন্নয়নের নামে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তার জন্য বৃষ্টির জল মাটির মধ্যে দিয়ে নীচে পৌঁছতে পারে না। যে কারণে জলস্তর নেমে যাওয়ার এই সমস্যা প্রতি বছরই দেখা দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ।

এ দিকে, পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে প্রাকৃতিক কারণে হলেও জলের সমস্যার এই বিষয়টি চাপে ফেলেছে প্রশাসনকেও। রাজারহাট কিংবা পার্শ্ববর্তী বারাসত-২ নম্বর ব্লক, অর্থাৎ শাসনের মতো এলাকাগুলি ভূগর্ভস্থ জলের উপরেই বেশি নির্ভরশীল। কারণ, ওই সব এলাকায় ভেড়িতে মাছ কিংবা খেতে পাট-সহ অন্যান্য ফসলের চাষ হয়ে থাকে।

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি নতুন নয়। কিন্তু এ বার এত আগে থেকে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি হওয়ায় তাঁরা চিন্তিত কত দিন ধরে জলের সমস্যা চলবে, তা নিয়ে। বারাসত-২ ব্লকের বহু জায়গাতেও নেমে গিয়েছে জলস্তর। পাটচাষিরা জানান, চৈত্র মাসে পাটের বীজ ফেলা হয়। তার পরে জল না দিলে চারা বেরোয় না। শাসনের বাসিন্দা, আসগর আলি নামে এক পাটচাষির কথায়, ‘‘পুকুর ছেঁচে জল দিতে হচ্ছে। পাম্প বসিয়েও তেমন জল উঠছে না।’’

একই অবস্থা মাছ চাষের ক্ষেত্রে। বারাসত-২ নম্বর ব্লকে বিদ্যাধরীর যে শাখানদী রয়েছে, সেখানে এখন

মোটর বসিয়ে ভেড়িতে জল দেওয়া হচ্ছে।

বারাসত-২ ব্লকের বিডিও অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায় সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, বেশ কিছু গভীর নলকূপ খারাপ হওয়ার রিপোর্ট তাঁরা পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘চাষের জলের জন্য যে পাম্প রয়েছে, সেগুলির গভীরতা বেশি থাকায় গরমের প্রভাব এখনও তেমন ভাবে পড়েনি। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হত। কিছু আর্সেনিক ট্রিটমেন্ট প্লান্ট গত বছর শেষের দিকে চালু করা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Water crisis Arsenic waste Rajarhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE