Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
River Ganges

না-নদী আর না-মানুষের প্রতিবাদ মিশে যায় এক স্রোতে

গঙ্গা-আন্দোলনের অন্যতম মুখ বা সংগঠনগুলি এখন সরব হয়েছে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরোধিতায়।

গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার আন্দোলন চলছে দেশ জুড়ে। নিজস্ব চিত্র

গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার আন্দোলন চলছে দেশ জুড়ে। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০১:০৮
Share: Save:

এটা যেন না-নদী আর না-মানুষের লড়াই!

আর তাই আপাতদৃষ্টিতে গঙ্গা-আন্দোলন এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরোধিতার মধ্যে কোনও মিল না থাকলেও দুই আন্দোলনের স্রোত মিলেমিশে একাকার। কারণ, গঙ্গা-আন্দোলনের অন্যতম মুখ বা সংগঠনগুলি এখন সরব হয়েছে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরোধিতায়। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, গঙ্গা আন্দোলন দেশ বাঁচানোর জন্য, দেশের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে। একই ভাবে সিএএ, এনআরসি-র প্রতিবাদও দেশের স্বার্থেই।

তারই ফলস্বরূপ ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত ও দেশের গঙ্গা-আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ সন্দীপ পাণ্ডের নামে গত রবিবারই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন হিন্দু মহাসভার সহ-সভাপতি। সন্দীপবাবুর ‘অপরাধ’, তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হিন্দুত্ববাদ এবং বীর সাভারকরের বিরুদ্ধে ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য করেছিলেন। লখনউ থেকে ফোনে সন্দীপবাবু এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি শুধু বলেছিলাম, যেখানে সাভারকর ব্রিটিশদের কাছে বারবার মুক্তির জন্য মার্জনা ভিক্ষা করেছেন, সেখানে তিনি কী ভাবে দেশপ্রেমিক বা বিপ্লবী হতে পারেন? সেটা শুনেই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: সাধারণ মহিলা সেজে পথে পুলিশকর্মীরা, ইভটিজিং করলেই শ্রীঘরে

লখনউয়ের ঘণ্টা-ঘরে বা গোমতী নগরের একটি গ্রামে যেখানে মহিলারা গত কয়েক দিন ধরে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে আন্দোলনে বসেছেন, সেখানে যোগ দিচ্ছেন সন্দীপবাবুও। ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত ওই সমাজকর্মীর কথায়, ‘‘গঙ্গার অস্তিত্ব রক্ষা যেমন দেশের জন্য প্রয়োজন, তেমনই এই বিরোধিতাও দেশের কারণেই। ফলে এই দুই বিরোধিতা যে একসঙ্গে হবে, তাতে সংশয় নেই।’’

শুধু সন্দীপবাবুই নন, এ রাজ্যে যাঁরা গঙ্গা-আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত, তাঁরাও সিএএ ও এনআরসি-র বিরোধিতায় সরব হয়েছেন। তেমনই এক আন্দোলনকারী গৌতম দে সরকার বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে অনেকেই পার্ক সার্কাসের প্রতিবাদে শামিল হয়েছি। গঙ্গা না বাঁচালে যেমন দেশ বাঁচবে না, তেমনই সংবিধান-বিরোধী কোনও আইন হলেও দেশ বাঁচবে না।’’ গঙ্গা-আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কল্লোল রায় আবার বলছেন, ‘‘দুই আন্দোলনের ধরন আলাদা হলেও অভিমুখ একই। ফলে এ বিরোধিতায় যোগ না দিয়ে উপায় কোথায়!’’

নদী-বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, গঙ্গা যে পাঁচটি রাজ্য— উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, সেখানে একাধিক রাজ্যেই মুসলিম জনসংখ্যার হার উল্লেখযোগ্য। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ওই পাঁচ রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যার হার যথাক্রমে ১৩.৯৫, ১৯.২৬, ১৬.৮৭, ১৪.৫৩ ও ২৭.০১ শতাংশ। কিন্তু ওই পাঁচটি রাজ্যে গঙ্গা নিজের ২৫২৫ কিলোমিটার প্রবাহপথে কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে শিখ, কে জৈন, তার হিসেব রাখেনি। সব বিভাজন হেলায় উড়িয়ে সে নিজের স্রোতে সব কিছু মিশিয়ে সমুদ্রে মিশেছে। ফলে ‘বিভাজনের’ যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে গঙ্গা-আন্দোলন যে মিশবে, সে তো স্বাভাবিক!

তাঁরা জানাচ্ছেন, গঙ্গার অবিরল ধারা ও নির্মলতা অক্ষুণ্ণ রাখাই গঙ্গা-আন্দোলনের উদ্দেশ্য। কারণ, সেখানে রাষ্ট্রের তরফে গঙ্গা বাঁচানোর মিথ্যা আশ্বাস সত্ত্বেও বেআইনি খনন হচ্ছে এবং নদীর উপরে বাঁধের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে নদীর অস্তিত্বই বিপন্ন হচ্ছে। তেমন ভাবেই সিএএ এবং এনআরসি-ও একই পথ অনুসরণ করছে। নদী-বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলেন, ‘‘রাষ্ট্রের ঠিক করা কয়েকটা বিষয়ের ভিত্তিতে বলা হবে তুমি এখানকার নাগরিক, কী নাগরিক নও। আর যদি সেই বিষয়গুলি না মেলে তা হলে রাষ্ট্র তোমাকে এমন জায়গায় পাঠিয়ে দেবে যেখানে তোমার কোনও দেশ নেই। এই যে একটা না-মানুষের দলে নাম লেখানো এটা কিন্তু কোথাও গিয়ে না-নদীর সঙ্গে এক হয়ে গিয়েছে।’’

আর সেই এক হওয়ায় মিলে যাচ্ছে লখনউ থেকে কলকাতা, শাহিনবাগ থেকে পার্ক সার্কাস!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy