(বাঁ দিকে) মহম্মদ ইমরান ও রিজওয়ান আলম। —ফাইল চিত্র।
চেয়ারে বসেছিলেন মহম্মদ ইমরান। রাতে নিজের টালির বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করছিলেন শামা বেগম। গার্ডেনরিচের ফতেপুরের আজহার মোল্লা বাগানে রবিবার রাতে যখন তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সেই নির্মীয়মাণ বহুতল, তখন শামা বা ইমরানেরা নড়ার সময়টুকুও পাননি। যিনি যে অবস্থায় ছিলেন, সেই অবস্থাতেই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েন। সোমবার তাঁদের দেহ সে ভাবেই উদ্ধার করে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
দেহ উদ্ধারকারীদের সহযোগিতা করতে ধ্বংসস্তূপের কাছাকাছি থাকা বাসিন্দারা সেই সব দৃশ্যের কথা বলতে গিয়ে মঙ্গলবারও শিউরে উঠছিলেন। চোখের সামনে দীর্ঘদিনের পরিচিত এত জন মানুষের এমন ভয়ঙ্কর মৃত্যু দেখে তাঁরা সোমবার রাতে ঘুমোতে পারেননি। তাঁরা জানান, এলাকার পরিচিত তৃণমূল নেতা আব্দুল রউফ নিজামি ওরফে শেরুভাই ওই রাতে স্থানীয়দের নিয়ে দাওয়াতের আয়োজন করেছিলেন। বিরিয়ানির অর্ডার দিয়ে তিনি ওই বহুতলের সিঁড়িতেই দাঁড়িয়েছিলেন। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, হয়তো সে ভাবেই সিঁড়ির নীচে এখনও আটকে রয়েছেন শেরুভাই।
আজহার মোল্লা বাগানে এ দিনও চলেছে উদ্ধারকাজ। এখনও কত জন আটকে রয়েছেন, তার খোঁজে ধ্বংসাবশেষ কাটার কাজ চলেছে দিনভর। নিখোঁজদের ফিরে পেতে সেই ভগ্নস্তূপের অদূরে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছেন আত্মীয়েরা। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ভরসা দিতে দেখা গিয়েছে নিহতদের পরিজনদেরও।
ইমরান, শামা বা রিজওয়ান আলমদের দেহ সোমবারই উদ্ধার করা গিয়েছিল। ইমরানের দাদা আমির জানান, তাঁর ভাই একটি চেয়ারে বসেছিলেন। সেই অবস্থাতেই চাপা পড়েন। আমির বলেন, ‘‘ভাই যখন ভিতরে আটকে, তখন আমার সঙ্গে কয়েক বার ফোনে কথা হয়েছিল। ওকে তো শুনেছি চেয়ার-সহ বার করা হয়েছে।’’
মধ্যরাতে দুর্ঘটনার সময়ে রিজওয়ান আলম আবার ওই বাড়ির ভিতরে উবু হয়ে বসেছিলেন। উদ্ধারকারী প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেই অবস্থাতেই তিনি চাপা পড়েন। শরীর বেঁকে গিয়েছিল। রিজওয়ানের বাবা মনজুর আলমের কথায়, ‘‘ছেলে বড় হয়ে গেলে মা-বাবার কথায় গুরুত্ব দেয় না। অনেক বার বলেছিলাম, ওই বাড়িতে আড্ডা দিতে জড়ো না হওয়ার জন্য। কিন্তু কথা শোনেনি। এই ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে?’’
উদ্ধারকারী এক যুবক জানালেন, শামা তাঁর বাড়িতে সেলাই মেশিনের সামনে বসেছিলেন। রমজানের সময়ে বহু মহিলা বাড়িতে সেলাই করেন বাড়তি রোজগারের আশায়। আগে শামা পুরসভার কাজও করতেন। ওই বহুতল যে সব টালির চালের বাড়ির উপরে ধসে পড়েছে, সেগুলির একটির ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে ভাঙা সেলাই মেশিনের পাশেই মেলে শামার দেহ।
দুর্ঘটনার পরে ভগিনীপতিকে সোমবার বেলা পর্যন্ত খুঁজে পাচ্ছিলেন না মহম্মদ হাসান। দুপুরের পরে জানতে পারেন, ভগিনীপতি মহম্মদ জামিলও সেই দাওয়াতের রাতে ওই অভিশপ্ত বাড়িতে হাজির ছিলেন। এ দিন সকালে উদ্বিগ্ন হাসান বলেন, ‘‘জামিল ভিতরে চাপা পড়ে রয়েছেন। পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন। কাকে কী সান্ত্বনা দেব, বুঝতে পারছি না।’’ এ দিন সন্ধ্যায় জামিলের দেহও উদ্ধার হয়।
ধ্বংসস্তূপে যাঁর আটকে থাকা নিয়ে এ দিনও বিচলিত আজহার মোল্লা বাগানের বাসিন্দারা, সেই আব্দুল রউফ নিজামি ওরফে শেরুর দুই ছেলে মোজাম্মেল ও শাহরুখকে দেখা গেল, উদ্বিগ্ন মুখে উদ্ধারস্থলের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মোজাম্মেল বলেন, ‘‘বিরিয়ানি অর্ডার করে বাবা ওই বাড়ির সিঁড়িতে দাঁড়িয়েছিলেন। তার পরেই দুর্ঘটনা ঘটে। এখনও বাবার কোনও খবর পাইনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy