Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দুর্ঘটনার পরেও হেলমেট ছাড়া যাত্রা গার্ডেনরিচে

গত বছরের এপ্রিলেও গার্ডেনরিচ উড়ালপুলের গার্ড রেলে ধাক্কা মেরে নীচে পড়ে গিয়েছিল একটি স্কুটার। বছর ঘুরতে ফের একই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে নজরদারি নিয়ে।

অসুরক্ষিত: একে হেলমেট নেই, তার উপরে মোবাইলে কথা বলতে বলতে মোটরবাইক চালাচ্ছেন এক ব্যক্তি। সোমবার, গার্ডেনরিচ উড়ালপুলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

অসুরক্ষিত: একে হেলমেট নেই, তার উপরে মোবাইলে কথা বলতে বলতে মোটরবাইক চালাচ্ছেন এক ব্যক্তি। সোমবার, গার্ডেনরিচ উড়ালপুলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০১:০৭
Share: Save:

রাতের গার্ডেনরিচ উড়ালপুলে বেপরোয়া ভাবে স্কুটার চালানোয় প্রাণ গিয়েছে এক কিশোরের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তার দুই সঙ্গী। তিন জনের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। ওই দুর্ঘটনার পরের দিন সোমবার উড়ালপুলে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, হেলমেট ছাড়াই যাতায়াত করছেন মোটরবাইক চালক ও আরোহীরা। কেউ দেখার নেই। প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ, গার্ডেনরিচ থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত বিস্তৃত ওই উড়ালপুলের দু’প্রান্তে চোখে পড়ল না টহলরত পুলিশও।

পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার রাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উড়ালপুলের গার্ড রেলে ধাক্কা মেরে সোজা নীচে পড়ে বেপরোয়া গতিতে চলা স্কুটার। তাতে তিন জন ছিল। স্কুটার চালাচ্ছিলেন মহম্মদ ইনতিয়াজ নামে এক তরুণ। পিছনে বসে ছিল তার দুই সঙ্গী মহম্মদ আরসালান ও আসিফ আলি। গুরুতর জখম তিন জনকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হলে আরসালানকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সঙ্কটজনক অবস্থায় ইনতিয়াজ ওই হাসপাতালে ভর্তি। আসিফকে পরে একবালপুরের একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের মাথায়, বুকে ও পায়ে আঘাত রয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, পাহাড়পুরের কাছে যেখানে রবিবার দুর্ঘটনা ঘটে, সেখানে একটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। কিন্তু চালকের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বারবার ঘটছে দুর্ঘটনা।

উল্লেখ্য, গত বছরের এপ্রিলেও গার্ডেনরিচ উড়ালপুলের গার্ড রেলে ধাক্কা মেরে নীচে পড়ে গিয়েছিল একটি স্কুটার। বছর ঘুরতে ফের একই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে নজরদারি নিয়ে।

আরসালানের জেঠু মহম্মদ জাহাঙ্গির সোমবার বলেন, ‘‘কিছু দিন ধরেই তো দেখছি, রাতে হেলমেটহীন বাইকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ওই রাতে আমার ভাইপো ও তার বন্ধুদের মাথায় হেলমেট ছিল না। এ ব্যাপারে আমাদের দোষ তো আছেই। কিন্তু পুলিশ ওদের ধরলে হয়তো এ ভাবে ভাইপোকে হারাতে হত না।’’ এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘উড়ালপুলে রামনগরের দিকে এক পুলিশ আধিকারিক ছিলেন। তিনি ওই স্কুটারটিকে ধরতে গেলে চালক আচমকা গতি বাড়িয়ে দেন।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার রাত দশটা নাগাদ স্কুটার নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন আরসালান, ইনতিয়াজ ও আসিফ। প্রশ্ন উঠেছে, স্কুটারে তিন জন চড়া বেআইনি। তা সত্ত্বেও তাঁরা রাজাবাগান থেকে গার্ডেনরিচ উড়ালপুল পর্যন্ত চলে গেলেন। পুরো বিষয়টি ট্র্যাফিক পুলিশের নজরে এল না? সরাসরি সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন ডিসি (ট্র্যাফিক)।

পুলিশ সূত্রের খবর, নিরাপত্তার স্বার্থে গার্ডেনরিচ উড়ালপুলে দশটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পুলিশের একাংশের দাবি, দীর্ঘ ওই উড়াল-পথে মাত্র তিনটি স্পিড ব্রেকার। তার উপরে রাস্তার বেশির ভাগ অংশ আঁকাবাঁকা। ফলে সব সময়ে বেপরোয়া বাইকের উপরে নজরদারি সম্ভব হয় না। আহত আসিফের মা জামিলা খাতুন বলেন, ‘‘ওই উড়ালপুলে একাধিক বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশ থাকলে ভাল হয়।’’ পরপর দু’বার এমন ঘটনায় প্রশাসনকেই দুষছেন স্থানীয়দের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘উড়ালপুলে থাকা গার্ড রেল আর একটু উঁচু হলে হয়তো এমন দুর্ঘটনা ঘটত না।’’

যদিও উড়ালপুলের নির্মাণকারী সংস্থা কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই গার্ড রেলের উচ্চতা ঠিক করা হয়েছে। উড়ালপুলের নীচে রেল ও বন্দরের জমি রয়েছে। জমি-জট কাটাতেই এ ভাবে তৈরি হয়েছে উড়ালপুল।’’ তবে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘চালকেরা সচেতন না হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঠেকানো অসম্ভব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bike Riding Helmet Accident Garden Reach Flyover
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE