আতঙ্কিত: শব্দবাজির দাপটে বিচলিত পোষ্য। রবিবার, কসবায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
প্রায় মাঝরাত পৰ্যন্ত তারস্বরে মাইক বাজিয়ে চলছে কালীপুজোর জলসা। রাতের নৈঃশব্দ্য চিরে ভেসে আসছে বেসুরো গান। প্রতিবাদ করতে ফোন করেছিলাম পুলিশের কন্ট্রোল রুমে। তখনই জানা গেল, শব্দ-তাণ্ডবের মোকাবিলায় তখন নাস্তানাবুদ দশা পুলিশেরই। আইনভঙ্গকারীদের সঙ্গে তখন চলছে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা!
ঘটনার সূত্রপাত কালীপুজোর আগের রাতে। দক্ষিণ দমদমের কালিন্দী এলাকার একটি পাড়ায় কালীপুজো উপলক্ষে সন্ধ্যে থেকেই শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান-নাচ-নৃত্যনাট্য— অনুষ্ঠান জমে উঠেছিল ভালই। মাঝে একবার ঘুরে গিয়েছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলরও। কিন্তু পরে দেখা গেল, রাত বাড়লেও অনুষ্ঠানে ইতি টানার কোনও লক্ষণ নেই উদ্যোক্তাদের।
রাত তখন সওয়া ১১টা। দুরন্ত এক্সপ্রেসের গতিতে শিল্পী প্রায়-বেসুরো গান ধরলেন, ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে...’। ততক্ষণে এলাকা বেশ চুপচাপ। আশপাশ থেকে মাঝেমধ্যে বাজির সশব্দ উপস্থিতি ছাড়া আর তেমন কোনও আওয়াজ নেই। এর মধ্যে কানফাটা এই গান বেশিক্ষণ আর সহ্য করা গেল না। এত প্রচার, শব্দ-বিধি নিয়ে সংবাদপত্রে এত লেখালিখির পরেও কি উদ্যোক্তাদের হুঁশ নেই! একরাশ বিরক্তি নিয়ে গুগল ঘেঁটে লেক টাউন থানার নম্বর খুঁজে নিয়ে সটান ফোন করে বসলাম।
ফোন তুলে এক ব্যক্তি অবশ্য জানালেন, থানা নয়, বিধাননগর কন্ট্রোল রুমে গিয়েছে সেই ফোন। আচ্ছা, তা-ই সই। বিধি ভেঙে জলসা চলার খবর দিতে ওই ব্যক্তি থানার নম্বর দিলেন। জানালেন, তিনিও সংশ্লিষ্ট থানায় এই খবর যত দ্রুত সম্ভব দেবেন। কিন্তু থানার নম্বরে বার দশেক ফোন করেও কিছুতেই যোগাযোগ করতে পারা গেল না। তত ক্ষণে ঘড়ির কাঁটায় প্রায় পৌনে ১২টা। আরও খান দুই-তিন গানের পরে তখন এলাকা কাঁপিয়ে মাইকে বাজছে ‘মনিকা ও মাই ডার্লিং’।
অতএব দ্বিতীয় বার ফোন করা গেল সেই কন্ট্রোল রুমেই। এ বার ফোন ধরলেন অন্য এক ব্যক্তি। কালিন্দীর জলসার অভিযোগ শুনেই জানালেন, ইতিমধ্যেই লেক টাউন থানাকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সঙ্গেসঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কেন? কর্তব্যরত ব্যক্তি ফোনে বিনীত ভাবে বললেন, ‘‘আসলে বাঙুরের দিক থেকে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ আসছে। আর তা দেখতে গিয়েই লেক টাউন থানার তিন গাড়ি পুলিশ নাজেহাল।’’ কী রকম? জানালেন, বাঙুর এলাকা থেকে বারবার নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর অভিযোগ জানিয়ে ফোন আসছে। অথচ গাড়িভর্তি পুলিশ অকুস্থলে পৌঁছে দেখছে, বহুতলে ঢোকার দরজায় তালা। আর ছাদে চলছে শব্দবাজির দাপট। আইনভঙ্গকারীদের নাগাল তো পুলিশ পাচ্ছেই না, উল্টে তাদের আসতে দেখলেই বাসিন্দারা সেঁধিয়ে যাচ্ছেন ফ্ল্যাটের ভিতরে। পুলিশ চলে যেতেই ফের শুরু হচ্ছে শব্দ-দৌরাত্ম্য।
শব্দদানবের দাপট ঠেকাতে এ বার বহুতলের ছাদের চাবি নিজেদের কাছে রাখার পরিকল্পনা করেছিল বিধাননগর কমিশনারেট। স্থির হয়েছিল, কালীপুজোর আগের দিন থেকে পুজোর দু’দিন পর পর্যন্ত আবাসনগুলির ছাদের চাবি জমা থাকবে থানায়। সেই পরিকল্পনার কী হল? প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে কন্ট্রোল রুমের ওই কর্মী বললেন, ‘‘বাঙুর নিয়েই নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে লেক টাউন থানা। রীতিমতো চোর-পুলিশ খেলা চলছে এখন। জলসা থামাতে সঙ্গে সঙ্গে যাবে কী করে বলুন!’’ বোঝা গেল, বাঙুরের বাজির সৌজন্যে মধ্যরাতের গানের গুঁতো থেকে সহজে রেহাই মিলছে না। ফোন রাখার আগে ওই ব্যক্তি ক্লান্ত হেসে বললেন, ‘‘আজকেই এই অবস্থা। কালীপুজো-দীপাবলিতে তা হলে কী হবে ভাবুন।’’
বুঝলাম, শব্দদানবের দাপট নিয়ে আতঙ্কে খোদ পুলিশও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy