স্তব্ধ: রাজভবন অভিযানের জেরে থমকে যানবাহন। বৃহস্পতিবার, আশুতোষ মুখার্জি রোডে। —নিজস্ব চিত্র।
এমনিতেই নিম্নচাপের একটানা বৃষ্টিতে বেহাল পথঘাট। সেই সঙ্গে উপরি দুর্ভোগ মিছিলের চাপ। যার জেরে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল সপ্তাহের একটি কাজের দিন। নাস্তানাবুদ হলেন পথে বেরোনো মানুষ। যাঁদের মধ্যে রোগী, বয়স্ক ও শিশুদেরও দেখা গিয়েছে। ভুক্তভোগীদের ক্ষোভ, প্রশাসনিক ও পুলিশি অব্যবস্থার কারণেই বার বার এমন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। যদিও লালবাজারের দাবি, তাদের কাছে এত বড় মাপের একাধিক মিছিলের খবর ছিল না। ফলে আগাম পরিকল্পনা কাজে লাগেনি।
নিয়োগ-দুর্নীতি, বকেয়া ডিএ-র দাবি কিংবা আদিবাসীদের ডাকা মিছিলে সম্প্রতি বার বার শহরকে রুদ্ধ হতে দেখা গিয়েছে। বৃহস্পতিবারের শহর সাক্ষী থাকল শাসকদলের ডাকে রাজভবন অভিযান ঘিরে মিছিল ও সমাবেশের বিশৃঙ্খলার। একশো দিনের কাজের বকেয়া অর্থ কেন্দ্রের থেকে আদায়ের দাবিতে এ দিন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজভবন অভিযানের সৌজন্যে থমকে রইল মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার যান চলাচল।
আবার এ দিনই সিপিএমের অন্য একটি অভিযানে খানিকটা বিপর্যস্ত হয় পূর্ব কলকাতার যান চলাচল। উল্টোডাঙার হাডকো মোড় থেকে তাদের সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের জন্য দুপুরে যানজট হয় উল্টোডাঙা মেন রোড ও সিআইটি রোডে। তবে মিছিল দ্রুত সল্টলেকে পৌঁছে যাওয়ায় অবস্থা সামাল দেয় কলকাতা পুলিশ।
বেলা বাড়তেই রাজভবন অভিযানে যোগ দিতে শহরের দুই প্রান্ত থেকে ছোট ছোট মিছিল আসতে থাকে। এক দিকে রাজভবনের সামনে রেড ক্রস প্লেসে, অন্য দিকে রবীন্দ্র সদন সংলগ্ন মোহরকুঞ্জের সামনে জমায়েত করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। এর জেরেই তালগোল পাকাতে শুরু করে ট্র্যাফিক। মোহরকুঞ্জের সামনে থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মিছিল রাজভবনের দিকে রওনা দেয়। ওই মিছিল ক্যাথিড্রাল রোড দিয়ে জওহরলাল নেহরু রোড ধরে। পার্ক স্ট্রিট মোড় পেরিয়ে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ের বাঁ দিকে ঘোরে। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ হয়ে পৌঁছয় রেড ক্রস প্লেসের সমাবেশস্থলে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ওই রাস্তায়।
ঘড়িতে তখন দুপুর ২টো। এক্সাইড মোড়ে মেট্রো স্টেশনের সামনে কয়েক জন স্কুলপড়ুয়া দাঁড়িয়ে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে মেট্রোয় ঢুকতে পারছে না তারা। কারণ, মেট্রোর সিঁড়ি দিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে উঠছেন সমর্থকেরা। এক স্কুলপড়ুয়াকে বলতে শোনা গেল, ‘‘একে বাস নেই। তার মধ্যে মেট্রোয় ঢোকা যাচ্ছে না। বাড়ি যাব কী ভাবে?’’ এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে দেখা গেল, কাতারে কাতারে মানুষ। ছিলেন রোগীরাও। প্লাস্টার করা হাত নিয়ে এক রোগী বললেন, ‘‘বহু ক্ষণ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে। কিছুই পাচ্ছি না।’’
মা উড়ালপুল কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায় এ দিন। ফলে সন্তোষপুর থেকে ধর্মতলায় পৌঁছতে লেগে গিয়েছে দু’ঘণ্টারও বেশি। এক যাত্রী বললেন, ‘‘শুধু মা উড়ালপুলেই আটকে ঘণ্টা দেড়েক।’’ হাই কোর্ট থেকে হেঁটে ধর্মতলায় হাওড়াগামী বাস ধরতে যাচ্ছিলেন আশি ছুঁইছুঁই অসীম হালদার। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘জানতাম, আজ রাজভবনের সামনে একটা সভা আছে। কিন্তু তার জেরে এত হেঁটে বাস ধরতে হবে, ভাবিনি।’’
লালবাজারের দাবি, কথা ছিল, একটি মিছিল করে সমাবেশস্থলে যাবেন কর্মী-সমর্থকেরা। সেই মতো পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কিন্তু বেলা বাড়তেই হাওড়া, খিদিরপুর, সিঙ্গুর থেকে মিছিল আসতে থাকে। জেলা থেকে বাস নিয়েও সমর্থকেরা হাজির হন। অর্থাৎ, লালবাজার যে সম্ভাব্য চিত্র ভেবে পরিকল্পনা করেছিল, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশ জনসমাগম ঘটে। দিনের শেষে অভিষেক বলেন, ‘‘আমাদের কর্মসূচির জন্য অনেকের অসুবিধা হয়েছে। আমি ক্ষমা চেয়ে নেব।’’
এ দিকে, বঙ্গবাসী মাঠ ও ময়দানে বৃষ্টির জল জমে থাকায় জেলার সমর্থকদের বাসগুলিকে পার্কিং করাতে বিপাকে পড়ে পুলিশ। তাই কিংস ওয়ে-সহ বিভিন্ন রাস্তায় সমর্থকদের বাসের সারি দেখা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, রেড ক্রস প্লেস এবং গভর্নমেন্ট প্লেসে গাড়ি চলাচল বন্ধ হলেও জমায়েত ওই এলাকার বাইরে ছড়ায় দুপুর ১টার পরে। বন্ধ হয়ে যায় হেমন্ত বসু সরণি, কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট। ওই দুই রাস্তার গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে যানজটে পড়ে ব্রেবোর্ন রোড, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও মেয়ো রোড। লালবাজার জানিয়েছে, মূল মিছিল ক্যাথিড্রাল রোড দিয়ে জওহরলাল নেহরু রোড, পার্ক স্ট্রিট মোড়, ধর্মতলা যাওয়ার পথে বন্ধ হয় আশপাশের গাড়ির রাস্তা। মোহরকুঞ্জের সামনে জমায়েতের কারণে দুপুর দেড়টায় বন্ধ হয় যান চলাচল। ভবানীপুরমুখী গাড়ি হসপিটাল রোড দিয়ে পাঠানো হয়।
গত সাত দিনে দু’বার শহর রুদ্ধ হওয়ায় রাজনৈতিক দল ও পুলিশের পরিকল্পনার অভাবকেই দায়ী করছেন বিরক্ত জনগণ। তাঁদের প্রশ্ন, কাজের দিনে কী ভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মিছিল-সমাবেশের অনুমতি মেলে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy