Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Pavlov Mental Hospital

Mental Patients: ঘর হারিয়েও ঘরের খোঁজ পেলেন মীনা, মাধুরীরা

পঞ্চাশোর্ধ্বা মীনার ক্ষেত্রেও অনেকটা তেমনই হয়েছে। সুভাষগ্রামে একটি ছোট ঘরে তিনি থাকতেন। আত্মীয়দের টান আলগা।

আশ্রয়: গোপালচন্দ্র সাহার পরিবারের সঙ্গে মীনা (মাঝে)।

আশ্রয়: গোপালচন্দ্র সাহার পরিবারের সঙ্গে মীনা (মাঝে)।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩৭
Share: Save:

অতিমারি, ভাইরাস— এই শব্দগুলোর ছায়ায় ক্রমশ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো বাঁচাটাই স্বাভাবিক বলে মেনে নিচ্ছে মানুষ। ঠিক তখনই এ যেন উলটপুরাণ। কোনও রকম রক্তের সম্পর্ক নেই। তবু পাভলভ হাসপাতাল ফেরত মীনা মজুমদারকে এই দুর্দিনেও নিজের বাড়িতে পরিবারের এক জন হিসেবে ঠাঁই দিয়েছেন বাঘা যতীনের গোপালচন্দ্র সাহা।

সোদপুরে পড়শি অর্জুন সিংহরায়কে এক সময়ে ভাইফোঁটা দিতেন মাধুরী কর্মকার। জীবন মাধুরীকেও টেনে নিয়ে গিয়েছিল পাভলভ হাসপাতালের ঘেরাটোপে। চার বছর বাদে মুক্তির পরে অর্জুনবাবুরাই সহায়সম্বলহীন নারীকে তাঁদের বাড়িতে এনে রেখেছেন। মনোরোগী তকমা এক বার গায়ে লাগলে এ দেশে সহজে মুক্তি মেলে না। নিজের মা, ভাই, সন্তানও ফের তাঁকে গ্রহণ করতে ভরসা পান না। ফলে, সুস্থ হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে পড়ে থাকাই হয় ভবিতব্য। সেই স্বাভাবিকতার বাইরেও অন্য কিছু ঘটেছে মীনা বা মাধুরীর জীবনে।

মাধুরীর স্বামীর সোনার দোকান ছিল। দেনায় ব্যবসার দুরবস্থা, অনটনে বেসামাল হয়ে মানসিক স্থিতি হারিয়ে ফেলেন সোদপুরের পূর্বপল্লির বাসিন্দা ওই মহিলা। পাভলভে থাকতে পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল না। বছর ৪০-এর মহিলা সুস্থ, অথচ তাঁর যাওয়ার জায়গা নেই। এই অবস্থায় সোদপুরে গিয়ে তাঁর পরিজনের খোঁজখবর শুরু করেন মানসিক হাসপাতালে সক্রিয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আধিকারিকেরা। জানা যায়, মাধুরীর স্বামী মারা গিয়েছেন। তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে মাকে রাখার সঙ্গতি না-থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেশী অর্জুনবাবু, তাঁর স্ত্রী নীলিমাদেবী এগিয়ে আসেন মাধুরীর পাশে দাঁড়াতে।

পঞ্চাশোর্ধ্বা মীনার ক্ষেত্রেও অনেকটা তেমনই হয়েছে। সুভাষগ্রামে একটি ছোট ঘরে তিনি থাকতেন। আত্মীয়দের টান আলগা। জয়া মজুমদার নামে এক মহিলার বাড়িতে পরিচারিকার ভূমিকাতেই জীবনের বড় অংশ কেটেছে। মীনা তাঁকে ‘মামি’ বলে ডাকতেন। দফায় দফায় বারুইপুরে মানসিক হাসপাতাল বা পাভলভে ভর্তির পরে পড়শিরা চিন্তায় ছিলেন, কোথায় থাকবেন মীনা। বাড়িতে একা থাকলে ওষুধ খাবেন না। ফের সঙ্কট দেখা দেবে, এই আশঙ্কাও ছিল। এ যাত্রা জয়াদেবীই তাঁর পারিবারিক বন্ধু গোপালবাবুর সঙ্গে মীনার যোগাযোগ করিয়ে দেন।

গত মে মাসের গোড়া থেকে বাঘা যতীনে গোপালবাবুর স্ত্রী ডলিদেবীর স্নেহে প্রতিপালিত হচ্ছেন মীনা। ওষুধের ব্যবসায়ী গোপালবাবু বলছেন, “আমার নাতি, নাতনি, বৌমার সঙ্গেও মেয়েটা মিশে গিয়েছে। কোভিডের প্রতিষেধক দিয়েছি। আর সবার মতো নিয়মিত ডাক্তার দেখাই। বাড়িতে বা বাইরে টুকটাক কাজে মীনাকে সড়গড় করারও চেষ্টা করছি।’’

মাধুরীও ‘অর্জুনদা’র বাড়িতে খুশি। ওঁর নিজের ভাইয়েরা বাংলাদেশে। পরিস্থিতি বুঝে তাঁদের কাছে পাঠাতেও আপত্তি নেই কারও। পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদের মতে, “এই দু’টি দৃষ্টান্তই ইতিবাচক। সমাজের ভিতর থেকে যদি মনোরোগীরা সহৃদয়তা, আশ্রয় পান, তবে পুনর্বাসনের কাজটা সহজ হয়ে যাবে।”

মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের পুনর্বাসন বা মূল স্রোতে ফেরানো মানে, তাঁদের মানুষের মর্যাদা দান বা ক্ষমতায়নেরও একটা পদক্ষেপ। ২০১৭-র মানসিক স্বাস্থ্য আইনে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। তবে এ রাজ্যে তা কার্যকর করতে এখনও সক্রিয়তা কম। মীনা, মাধুরীদের ক্ষেত্রে তৎপর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার রত্নাবলী রায় বলছিলেন, “ছকে বাঁধা পরিবারের তুলনায় অনাত্মীয়েরাই অনেক সময়ে বেশি কাছের হয়ে ওঠেন। এ ক্ষেত্রে ‘ফস্টার ফ্যামিলি’ বা পালক পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন। বেলজিয়ামের গিল শহরের কয়েকটি নমুনা দেখেই মনে হয়েছিল, এখানেও তেমন হতে পারে।’’ বাইরে থেকে আসা এক জনের দুম করে একটি পরিবারে মিশে যাওয়াও সহজ নয়। তবু রাজ্য সরকার এই ব্যবস্থাটির পাশে থাকলে তা আরও কার্যকর হতে পারে বলেই মনে করছেন সমাজকর্মীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Mental Patient Pavlov Mental Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE