Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
National Medical College

আট গুণ বেশি দূরত্ব পেরিয়ে ইমার্জেন্সিতে অ্যাম্বুল্যান্স

গেট নিয়ে ভোগান্তির জেরে সরব বহির্বিভাগের রোগীরাও।

হাসপাতালের মূল গেটে অ্যাম্বুল্যান্স আটকাচ্ছেন রক্ষী। তিন নম্বর গেটে যাওয়ার পথে সিগন্যালে আটকে। দু’পাশের ভিড় ঠেলে এগোচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্স। অ্যাম্বুল্যান্স হাসপাতালে ঢুকল তিন নম্বর গেট দিয়ে। ছবি ঘড়ির কাঁটা অনুসারে।

হাসপাতালের মূল গেটে অ্যাম্বুল্যান্স আটকাচ্ছেন রক্ষী। তিন নম্বর গেটে যাওয়ার পথে সিগন্যালে আটকে। দু’পাশের ভিড় ঠেলে এগোচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্স। অ্যাম্বুল্যান্স হাসপাতালে ঢুকল তিন নম্বর গেট দিয়ে। ছবি ঘড়ির কাঁটা অনুসারে।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:২৯
Share: Save:

আট মাস ধরে প্রায় আট গুণ বেশি রাস্তা ঘুরে পৌঁছতে হচ্ছে ইমার্জেন্সিতে। বিষয়টি জানেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। তবু গেট নিয়ন্ত্রণের জেরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ ভাবেই হেনস্থার শিকার হচ্ছেন সঙ্কটাপন্ন রোগীরা। চিকিৎসা শুরুর আগে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময়।

এক চিকিৎসককে নিগ্রহের প্রতিবাদে গত জুনে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজ্য। সেই সময় থেকেই হাসপাতালের মূল গেটে রোগীদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এখনও মূল ফটকের একাংশ ব্যবহার করা হচ্ছে প্রবেশপথ হিসেবে। একটি ছোট গেট দিয়ে মাথা গলিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে রোগীদের। মূল ফটকের কাছেই জরুরি বিভাগ। কিন্তু সঙ্কটাপন্ন রোগীদের গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্সের সে পথে যাওয়ার অনুমতি নেই!

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম যুবক শরাফত মিদ্দেকে নিয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স হাসপাতালের মূল ফটকে পৌঁছতেই বাধা দিলেন রক্ষী। জানালেন, জরুরি বিভাগে যেতে হবে তিন নম্বর গেট দিয়ে। যেতে গিয়ে প্রথমেই গোবরা কবরস্থানের রাস্তার সিগন্যালে থমকাল অ্যাম্বুল্যান্স। এর পরে অপ্রশস্ত রাস্তায় ভিড় ঠেলে তিন নম্বর গেট। তার পরে রামমোহন ব্লকের সামনে ভিড় পেরিয়ে তবেই জরুরি বিভাগে পৌঁছল ‘ট্রমা পেশেন্ট’-এর অ্যাম্বুল্যান্স!

সায়েন্স সিটি এলাকায় ইটের গাদায় কাজ করার সময়ে বৃহস্পতিবার গুরুতর চোট পান বসিরহাটের বাসিন্দা ভদ্রেশ্বর পাত্র। বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়কে নিয়ে ট্যাক্সি দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছলেও ঘুরপথে যেতে বাধ্য হয় সেটিও। লাল শালু হাতে চালক ‘ইমার্জেন্সি, ইমার্জেন্সি’ বলে চিৎকার করলেও ছাড় মেলেনি।

আহত: অ্যাম্বুল্যান্সে শরাফত মিদ্দে। নিজস্ব চিত্র

গোসাবার বাসিন্দা শরাফতের মা ফতেমা মিদ্দে বলেন, ‘‘ডাক্তারেরা বলেছিলেন, ছেলেকে তাড়াতাড়ি বড় হাসপাতালে নিয়ে আসতে। কিন্তু এখানে পৌঁছনোর পরে জরুরি বিভাগে যেতেই এত দেরি হবে ভাবিনি!’’ রোগীর পরিজনদের প্রশ্ন, ঘুরপথে জরুরি বিভাগে পৌঁছতে যে সময় নষ্ট হচ্ছে, তার জেরে অঘটন ঘটলে কে দায় নেবেন? স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘হাসপাতালের পাশের রাস্তায় প্রায়ই যানজটে অ্যাম্বুল্যান্স আটকে যায়।’’

গেট নিয়ে ভোগান্তির জেরে সরব বহির্বিভাগের রোগীরাও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফুলবাড়ির বাসিন্দা, ক্যানসারে আক্রান্ত সুভাষ বারুই ছেলে সমীরণ এবং মেয়ে সুজাতার কাঁধে ভর দিয়ে কোনও ক্রমে হাঁটছিলেন। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘পা একেবারে চলতে চাইছে না। হাতে, পেটে, ফুসফুসে খুব যন্ত্রণা।’’ ছোট গেট দিয়ে তাঁকে বার করতে হিমশিম খেলেন ছেলে-মেয়ে।

সূত্রের খবর, রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এ নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্কও হয়েছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘হাসপাতালের গেট এ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বলা হচ্ছে, গন্ডগোল হলে কে সামলাবে! পথে দুর্ঘটনা হয় বলে কি যান চলাচল বন্ধ থাকে?’’ আর এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রোগীর দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছনোর বিষয়টিই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এখানে হচ্ছে ঠিক উল্টো।’’

এ বিষয়ে সুপার সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা বলেন, ‘‘এখন যে ভাবে গেট নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে তা সত্যিই রোগী স্বার্থের পরিপন্থী।’’

সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার ডিসি (কমব্যাট) নভেন্দ্র সিংহ পাল বলেন, ‘‘এ রকম হওয়ার কথা নয়। সঙ্কটজনক রোগী নিয়ে মূল ফটক দিয়েই ঢোকার কথা। ঠিক কী ঘটেছে তা দেখতে হবে।’’ ডিসি-র এই বক্তব্যের সূত্র ধরে শুক্রবার কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, মূল গেটের সামনে খুব ভিড় হয় বলে সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিন নম্বর গেট দিয়ে গাড়ি ঢোকানো হয়। তবে সঙ্কটজনক রোগীদের মূল গেট দিয়েই ঢুকতে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। ওই আধিকারিক জানান, ঘটনার সময়ে ডিউটিতে থাকা চার রক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

National Medical College Ambulance Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy