ফাইল চিত্র।
রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ যাদবপুর থেকে চক্রবেড়িয়া যাওয়ার জন্য অ্যাপ-ক্যাব বুক করেছিলেন সুপর্ণা বড়ুয়া। অ্যাপের মাধ্যমে চালককে ফোন করায় তিনি প্রথমেই গন্তব্য এবং কত টাকা ভাড়া দেখাচ্ছে, তা জানতে চাইলেন। সে কথা জেনে চালক আর কিছু বলেননি।
মিনিটখানেকের মধ্যেই গাড়ি ও চালক পরিবর্তিত হওয়ার বার্তা পান সুপর্ণা। এ বারও ধেয়ে এল একই প্রশ্ন। ফের এক দফা গাড়ি এবং চালক বদল। পরের চালককে ফোন করায় তাঁরও একই প্রশ্ন। এ বার আর গন্তব্য বলেননি সুপর্ণা। কিছুটা বিরক্ত হয়েই তিনি বলেন, ‘‘আপনি যাবেন কি?’’ চালকের নির্লিপ্ত উত্তর, ‘‘ক্যানসেল করে দিন।’’ ওই তরুণী রাজি না হওয়ায় চালক নিজেই ট্রিপ ‘পাস’ করে দিলেন। মিনিট কুড়ি অপেক্ষার পরে ও ছয়-সাত জন চালক বদলের পরে ক্যাব পেলেন সুপর্ণা।
সুপর্ণা একা নন। খুব সকালে, দুপুরে এবং রাতে এই অভিজ্ঞতা হচ্ছে অনেকেরই। ট্রিপ ‘পাস অন’ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। ভাড়া কম মনে হলে বা গন্তব্য গলির ভিতরে হলে ট্রিপ বাতিল করে দিচ্ছেন চালকেরা। এমনকি, গন্তব্য বা ভাড়া জানাতে না চাইলেও বাতিল করছেন তাঁরা। সব চেয়ে সমস্যায় পড়ছেন প্রবীণ ও মহিলা যাত্রীরা। ক্যাবে বাড়ি ফিরতে হলে উদ্বেগে ভুগছেন তাঁরা। অভিযোগ, ক্যাব সংস্থার কাছে অভিযোগ জানালেও প্রায় কেউই সদুত্তর পাননি।
চালকেরা জানাচ্ছেন, ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি যাত্রী টানতে কম ভাড়ায় নির্ধারণ করছে। নির্দিষ্ট সংখ্যক ট্রিপ করলেও দেখা যাচ্ছে, সংস্থার কমিশন বাদ দিয়ে সামান্য টাকা ঘরে আসছে।
সাধারণত, ট্রিপে মোট ভাড়ার ২৫ শতাংশের কিছু বেশি টাকা কেটে বাকিটা চালককে দেওয়া হয়। প্রতি ১৫টি ট্রিপ সম্পূর্ণ করলে চালকেরা কয়েকশো টাকা উৎসাহ-ভাতা পান। তবে অভিযোগ, উৎসাহ-ভাতা বাদ দিলে বাকি ট্রিপ থেকে খুব বেশি তাঁরা আয় করতে পারছেন না। কোনও যাত্রীর গন্তব্য ভিতরের দিকে হলে তাঁকে নামিয়ে পরের যাত্রীকে তুলতে প্রায় চার-পাঁচ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে। ডিজেলের যা দাম, তাতে খালি গাড়ি নিয়ে ঘোরা এড়াতেই গন্তব্য আগেভাগে জেনে নিতে চান তাঁরা। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, খরচ বাঁচাতে চালকেরা এসি চালাতেও অস্বীকার করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ভাড়া নিয়ে লুকোচুরি বন্ধ করতে আমরা অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির কাছে কিলোমিটার-পিছু ভাড়া বেঁধে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। যাত্রী-প্রত্যাখ্যান কখনও কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না।’’
এআইটিইউসি-র অ্যাপ-ক্যাব সংগঠন এবং ট্যাক্সিচালকদের সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ক্যাব সংস্থাগুলি ভাড়া নিয়ে অস্বচ্ছতা দূর করে তার পুনর্বিন্যাস করতে চাইছে না বলেই চালকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।’’
নওলকিশোর জানালেন, এ রাজ্যের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটকেও ক্যাব সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছেন চালকেরা। আগামী ১৫ মার্চ গণেশ অ্যাভিনিউ সংলগ্ন পরিবহণ দফতরের কার্যালয় ঘেরাও করে চার ঘণ্টার অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy