জরাজীর্ণ: বেলগাছিয়ার দত্তবাগানে পুরনো একটি জলাধারের এমনই অবস্থা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
পাটুলির গাজিপুরে জলাধার ভেঙে পড়ে গুরুতর আহত কলকাতা পুরসভার কর্মী পরিতোষ দাসের (৫৬) ডান পায়ের গোড়ালির নীচ থেকে বাদ গেল। বুধবার রাত ন’টা নাগাদ পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের গাজিপুরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওই জলাধারটি। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েন পরিতোষ। রাতেই তাঁকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। তখনই তাঁর ডান পায়ের গোড়ালির নীচ থেকে কাটা পড়েছিল।
ওই হাসপাতালের তরফে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, ভর্তির সময়ে পরিতোষের ডান পা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া গোড়ালির নীচের অংশটি আনা হয়নি। বৃহস্পতিবার ভোরে জলাধারের ভগ্নস্তূপ থেকে ওই অংশটি উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। হাসপাতালের সিইও চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘‘রোগীর ডান পায়ের গোড়ালির কাটা অংশ পুলিশ আনলেও সেটি আর জোড়া লাগানোর সুযোগ ছিল না। রোগীর পাঁজরের একাধিক হাড় ভেঙেছে। পাঁজরে রক্ত জমেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাঁকে একটানা রক্ত দিতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা ওঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।’’
আহত পরিতোষের বাড়ি পাটুলির রবীন্দ্রপল্লিতে। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, এক মেয়ে ও জামাই। রোজ সাইকেলে চেপে বাড়ি থেকে গাজিপুরে ডিউটি করতে আসতেন তিনি। বুধবারও বিকেল চারটে নাগাদ ডিউটি করতে এসেছিলেন। জামাই বিজয় গুপ্তের কথায়, ‘‘শ্বশুরমশাই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। মেয়রের কাছে আমাদের আবেদন, ওঁর যাবতীয় চিকিৎসার খরচ যেন পুরসভা বহন করে।’’ স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান তারকেশ্বর চক্রবর্তীর আশ্বাস, পরিতোষের চিকিৎসার পুরো খরচ পুরসভা বহন করবে বলে ইতিমধ্যেই মেয়র জানিয়েছেন।
এ দিকে, বুধবারের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে একাধিক। পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের প্রশ্ন, ‘‘ওই জলাধারটির মাধ্যমে জল সরবরাহ হচ্ছিল। নিশ্চয়ই ভেঙে পড়ার আগে কিছু লক্ষণও দেখা গিয়েছিল। তা হলে কেন সেটি সংস্কার করা হয়নি?’’ সূত্রের খবর, ১৯৭৮ সালে জলাধারটি তৈরি হয়েছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তা দীর্ঘ বছর সংস্কার হয়নি। অথচ জলাধারের গায়ে ফাটল দেখা গিয়েছিল। স্থানীয় বরো চেয়ারম্যানের অবশ্য দাবি, ‘‘কেএমডিএ-র ওই জলাধারটি ২০১৫ সালে অধিগ্রহণ করে সংস্কার করেছিল পুরসভা। সম্প্রতি সেটি থেকে চাঙড় খসে পড়তে দেখা গিয়েছিল।’’ তা হলে কেন আমূল সংস্কার হয়নি? বরো চেয়ারম্যানের সাফাই, ‘‘ওই জলাধার সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার পরিকল্পনাই ছিল। কিন্তু সেই কাজ করার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেল।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, মূল কলকাতায় বেশির ভাগ জলাধারই রয়েছে মাটির নীচে। তবে টালিগঞ্জ, যাদবপুরের মতো শহরের সংযুক্ত এলাকায় মাটির উপরে এমন পুরনো জলাধার রয়েছে মেরেকেটে ৭-৮টি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দিনের বেলায় ওই জলাধার ভেঙে পড়লে আরও বড় বিপদ ঘটত। কারণ, জলাধার লাগোয়া ওয়ার্ড অফিসের দোতলায় স্বাস্থ্য ক্লিনিক চলে। প্রচুর মানুষ করোনার প্রতিষেধক নিতে সেখানে আসেন। এ ছাড়া জঞ্জাল অপসারণ বিভাগ-সহ একাধিক পুর দফতরও চলে ওয়ার্ড অফিসে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়েবুধবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার অরূপ বলেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের ডিজি। শহরের পুরনো জলাধারগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার আবেদন জানিয়েছি তাঁকে।’’ দুর্ঘটনার পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিমও পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের ডিজি-কে একই নির্দেশ দিয়েছেন।
পুরসভার বাম সমর্থিত কর্মী সংগঠন ‘জয়েন্ট ফোরাম অব ট্রেড ইউনিয়ন’-এর আহ্বায়ক রতন ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘নীল-সাদা রং করলেই হবে না। সব জলাধারের দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। আহত কর্মীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে পুরসভাকেই।’’ আর বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘পুরসভার গাফিলতিতে এক পুরকর্মীর পা বাদ গেল। এর দায় পুর কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। আগেভাগে জলাধারটি মেরামতি করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy