দেবস্মিতা ঘোষ ও সপ্তাংশু ঘোষ
পিগি ব্যাঙ্কটা বিছানার উপরে উপুড় করে দিয়েছিল ছ’বছরের দেবস্মিতা। জানতে চেয়েছিল, ‘‘এতেও কি আমার ওষুধ কেনা যাবে না?’’ তারই মতো একই প্রশ্ন, বেলঘরিয়ার সপ্তাংশু ঘোষেরও। ক্লাস টু-এর পড়ুয়া সপ্তাংশু তার বয়সী আর পাঁচ জনকে দেখিয়ে জানতে চায়, কবে সে ওদের মতো খেলতে পারবে? কবে ছোটখাটো যে কোনও কাজে তাকে আর বাবা-মায়ের সাহায্য নিতে হবে না?
প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন ওদের বাবা-মায়েরাও। ওরা জিনঘটিত রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি-তে আক্রান্ত। চালু কথায় ‘এসএমএ’। এত দিন এই রোগটির তেমন কোনও ওষুধ ছিল না। গত বছর ডিসেম্বর মাসে আমেরিকায় এসএমএ-র একটি ওষুধ বেরিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার খরচ বিপুল। বছরে সাত কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এখনও পর্যন্ত ওষুধটি এ দেশের বাজারে আসার কোনও রকম সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি। তাই একজোট হয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন ওদের বাবা-মায়েরা, যে করেই হোক আমাদের সন্তানকে বাঁচান।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যদি বাবা-মা দুজনেই এই জিনের বাহক হন, তা হলে শিশুর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায় ২৫ শতাংশ। ভ্রূণের বয়স পাঁচ সপ্তাহ পেরোলে বিশেষ ধরনের স্ক্যানের মাধ্যমে জানা যেতে পারে শিশুটির এসএমএ রয়েছে কি না। সাধারণ ভাবে, জন্মের ছ’মাসের মধ্যে এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে সেই সমস্ত শিশুরা দু’বছরের বেশি বাঁচে না। আর ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে যদি এই রোগ ধরা পড়ে, তবে বড় জোর কৈশোর উত্তীর্ণ হতে পারে। ধীরে ধীরে হাত-পা, ঘাড়, মেরুদণ্ড, পাচনতন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র, হৃৎপিণ্ড— সমস্তই অচল হতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্তেরা বেশির ভাগ সময়েই শ্বাসকষ্টে মারা যায়।
এ রাজ্যে কয়েক জন এসএমএ আক্রান্ত শিশুর বাবা-মায়েরা নিজেদের একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। এখনও পর্যন্ত ১০০ জন শিশুর হদিস রয়েছে সেই গ্রুপে। কী ভাবে ওই নতুন ওষুধটি এ দেশে আনার ব্যবস্থা করা যায়, সেই চেষ্টা শুরু করেছেন ওঁরা। দেবস্মিতার মা মৌমিতা কিংবা সপ্তাংশুর বাবা বরুণের কথায়, ‘‘এত দিন আমরা জানতাম এই অসুখের কোনও রকম চিকিৎসা নেই। তাই সেটা ভেবেই আমরা আক্ষেপ করতাম। কিন্তু এখন যখন জেনে গিয়েছি যে এই অসুখের ওষুধ রয়েছে, তখন বিনা চিকিৎসায় আমাদের সন্তানেরা চলে যাবে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সরাসরি নিজেদের আবেদন পৌঁছে দিতে চান ওঁরা। ওঁদের বক্তব্য, বিরল রোগের চিকিৎসার জন্য আলাদা তহবিল থাকে সরকারের। সেই তালিকায় এসএমএ-কে এনে ওঁদের সন্তানদের বাঁচার সুযোগ করে দেওয়া হোক।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, এই বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। আমেরিকার বাজারে আসা ওই ওষুধটি কী ভাবে এ দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা যায়, আলোচনা চলছে তা নিয়েও।
চিকিৎসকদের একটি অংশও এই লড়াইয়ে ওই শিশুদের পরিবারের পাশে রয়েছেন। তাঁদের অন্যতম দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসক আই সি বর্মা বলেছেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট ওষুধ সংস্থার কাছেও এ বিষয়ে আমরা চিঠি লিখেছি। এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি। তবে আমাদের এই লড়াই থামবে না।’’
এসএমএ কী
এক ধরনের জিনঘটিত অসুখ। মেরুদণ্ডের ‘মোটর নার্ভ সেল’কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আক্রান্তরা ক্রমে হাঁটাচলা, খাওয়া, এমনকী শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষমতাও হারায়। জিনঘটিত কারণে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণএই রোগ। মূল উপসর্গ শ্বাসকষ্ট, খাওয়ার অসুবিধা, কোনও কিছু ধরতে না পারা, মাথা ঘোরাতে না পারা, কোনও অবলম্বন ছাড়া বসতে না পারা ইত্যাদি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy