প্রতীকী ছবি।
অপরাধের সঙ্গে নাবালকদের যোগাযোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ আর্থ-সামাজিক টানাপড়েন। শৈশব থেকে বঞ্চনার শিকার হওয়াও এর অন্য কারণ। গত দু’বছরে কলকাতার বুকে সংগঠিত একাধিক ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে কিশোরদের যোগ দেখে এমনটাই মনে করছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। শুধু তাঁরাই নন। এক সময়ের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষালেরও বক্তব্য, ‘‘শৈশব থেকে বাড়ির অবহেলা এবং পর্যবেক্ষণের অভাবের জন্যই অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কিশোরেরা!’’
পঞ্চসায়র গণধর্ষণে অভিযুক্ত নাবালকের বাড়ি গিয়েও এই বক্তব্যের সত্যতা মিলল। শনিবার গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, খালপাড়ে টিনের ছাউনির চিলতে ঘর। সেখানেই বাবা-মা এবং বছর ছয়েকের ভাইয়ের সঙ্গে থাকত অভিযুক্ত কিশোর। ওই কিশোরের মা পরিচারিকার কাজ করেন। বেলা বাড়লে ভ্যানে করে মাল গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজে বেরিয়ে পড়েন কিশোরের বাবা। গ্রেফতারের পর থেকে ছেলের সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁদের। তাই ওই দিন তাঁরা গিয়েছিলেন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অভাবের সংসার হওয়ায় স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ধৃত কিশোরের। বাবা-মাকে সাহায্য করতে সে-ও মাঝেমধ্যে ভ্যানে ইট, বালি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত। কাজ না থাকলে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াত সে। ছোট ভাই সম্প্রতি এলাকারই একটি অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ দুই ভাই-ই অভিভাবকহীন ভাবে বেড়ে উঠছে। রবিবার কিশোরের বাবা বলেন, ‘‘২০০৯ সালে আয়লার ঝড়ে সুন্দরবনে বাড়ি-ঘর তলিয়ে গিয়েছিল। সব হারিয়ে চলে আসি। কোনও রকমে সংসার চলে। ছেলেদের পড়াশোনা নিয়ে কী করে মাথা ঘামাব?’’
আবার জোড়াসাঁকোর রত্ন ব্যবসায়ী খুনে জড়িত বন্দর এলাকার বাসিন্দা কিশোরের পরিবারে ছিল অন্য টানাপড়েন। বাবা কর্মসূত্রে দুবাইয়ে থাকতেন। ছেলেকে নিয়ে মা থাকলেও সন্তানের দেখাশোনায় সময় দিতে পারতেন না। পড়াশোনা ছেড়ে গ্যারাজে কাজে ঢুকেছিল কিশোর। তখনই জড়িয়ে পড়ে অপরাধের সঙ্গে। যার পরিণতিতে জোড়াসাঁকোর রত্ন ব্যবসায়ী খুনে জড়িত থাকার অপরাধে আপাতত তার ঠাঁই ‘বিশেষ হোমে’। অন্য দিকে, খারাপ সঙ্গে মিশে ছেলে অপরাধে জড়িয়েছিল বলে মনে করেন কসবার শীলা চৌধুরী খুনের অভিযুক্ত কিশোরের মা। এক সময়ে তিনি শীলাদেবীর বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। টেগোর পার্কের বাসিন্দা ওই কিশোর কী করে যে শীলাদেবীকে খুনে সাহায্য করেছিল, তা মানতেই পারেন না তার মা!
অন্য দিকে, নিউ আলিপুরে বৃদ্ধ মলয় মুখোপাধ্যায় খুনের ঘটনায় ধরা পড়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির এক কিশোর। সে-ও কলকাতায় এসেছিল কাজের সূত্রে। প্লাস্টিক কুড়োনোর কাজ করতে করতেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে। যদিও নিউ আলিপুরের অভিযুক্ত কিশোরের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা রয়েছে বলে হোম সূত্রের খবর। একই সূত্র জানাচ্ছে, গত দু’বছরের মধ্যে ওই কিশোর এক বার হোম থেকে পালিয়েওছিল।
মনোরোগ চিকিৎসক প্রথমা চৌধুরীর মতে, ‘‘বেশ কয়েকটি কারণে বয়ঃসন্ধিকালে অপরাধের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। যার মধ্যে রয়েছে —১) ছোট থেকে হিংসা দেখে বড় হলে তাদের মধ্যে সেই মানসিকতার প্রকাশ দেখা যায়। ২) জিনগত ভাবে অপরাধের যোগ থাকা এবং সর্বোপরি শৈশব থেকে তীব্র লড়াই করায় নিজেদের ‘বড়’ হিসেবে ভাবতে শুরু করা। ভাল-মন্দ না বুঝে বড়দের নকল করতে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তারা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy