Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Heat Wave in Kolkata

তাপপ্রবাহের দোসর কি ফের বিদ্যুৎ-বিভ্রাট? আতঙ্কে কলকাতাবাসী

হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, এক দিনের তাপমাত্রার হিসাবে রাজ্যের অন্তত ২২টি জায়গা সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি পার করেছে এই মরসুমে।

An image of heat wave

যৎসামান্য: তীব্র গরমে রাস্তায় ঘুরে কাজের সময়ে প্রৌঢ়ের ভরসা গামছার আড়ালটুকু। শুক্রবার, ধর্মতলায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ০৫:২৬
Share: Save:

দিনভর ছিল ঝলসানো গরম। সূর্যাস্তের পরেও গায়ে বাতাস লাগেনি। বরং ভয়াবহ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় ঘামের ধারাস্নান চলেছে! এই দুর্বিষহ অবস্থা আরও কঠিন করে তুলেছে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ না থাকার ঘটনা। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ— এমনই অভিযোগ শোনা গেল বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত। এই অভিযোগ চলেছে শুক্রবার সন্ধ্যার পরেও।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ না থাকায় কোথাও ভুগতে হয়েছে ঘণ্টাখানেক, কোথাও তারও বেশি। যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, গত এপ্রিলের ১০ দিন প্রবল তাপপ্রবাহের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা পেতে যে ভাবে ভুগতে হয়েছে, জুনেও কি তেমনই পরিস্থিতি তৈরি হবে? বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিলেও আশার কথা শোনাতে পারল না আবহাওয়া দফতর!

হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, এক দিনের তাপমাত্রার হিসাবে রাজ্যের অন্তত ২২টি জায়গা সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি পার করেছে এই মরসুমে। এককালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধুমাত্র এপ্রিলেই টানা ১০ দিন তীব্র তাপপ্রবাহে ঝলসেছে বাংলা। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সেই স্মৃতিই ফিরতে পারে এ মাসে। শুক্রবার থেকেই রাজ্য জুড়ে ফের তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আগামী ৬ এবং ৭ জুন কলকাতায় তাপপ্রবাহ হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। এ দিনই কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস,যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি বেশি। আবহাওয়া দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর হাত ধরে রাজ্যে বর্ষার আগমন আসন্ন হলেও নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানা যায়নি। তার আগেই ফের রাজ্যের সিংহভাগ এলাকা তীব্র গরমে পুড়বে। কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও গরম কমবে না। এটা ম্যাচের ইনজুরি টাইমে জোর আক্রমণ করার মতো ব্যাপার। এই আক্রমণই কাহিল করে ছাড়বে।’’

এই কাহিল হওয়ার পরিস্থিতিতেই বিদ্যুৎহীন অবস্থায় সময় কাটানো বেহালার বাসিন্দা, পেশায় স্কটিশ চার্চ স্কুলের কর্মী নীলরতন ঘোষ বললেন, ‘‘গরম পড়লেই দেখছি, নাজেহাল অবস্থা তৈরি হচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। সিইএসসি-তে ফোন করলে লোক পাঠিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়। রাত আড়াইটের পরে পাখা ঘুরেছে। তত ক্ষণে গরমে যা অবস্থা হয়েছে, তা বলে বোঝানোর নয়।’’

একই দাবি হালতুর বাসিন্দা সুমনা সাহার। বললেন, ‘‘ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরে এসি-র ঠান্ডায় ঘুমোব ভেবেছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যা থেকেই বিদ্যুৎ নেই। এক বার সাড়ে ৮টার পরে এল কিছু ক্ষণের জন্য। তার পরে রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত বন্ধ।’’

উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশেও একই ভাবে ভুগতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কাশীপুরের বাসিন্দা, সোনার দোকানের মালিক যদুনাথ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘এমনিতেই গরমে টেকা যাচ্ছে না। পাখার তলায় বসেও হাওয়া গায়ে লাগছে না। তার উপরে দুপুরের পরে এ দিন বেশ কিছু ক্ষণ তো কারেন্টই ছিল না।’’ বরাহনগরের এক বাসিন্দার আবার দাবি, ‘‘তাপপ্রবাহের ঘোষণা হলেই যদি এমন লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি হয়, তা হলে তো টেকাই মুশকিল।’’

প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে তাপপ্রবাহের কয়েক দিনেই রাজ্যে বিদ্যুতের রেকর্ড চাহিদা তৈরি হয়। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকায় মোট চাহিদা নজির গড়ে পৌঁছয় ৯০২৪ মেগাওয়াটে। বিদ্যুৎ দফতর থেকে জানানো হয়, এটি স্বাধীনতার পর থেকে সর্বকালীন রেকর্ড। সিইএসসি-র এলাকাতেও সর্বোচ্চ চাহিদা ওঠে ২৫২৪ মেগাওয়াট। সেটিও নজির। সিইএসসি-র এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘ওই অভিজ্ঞতা মনে রেখে বহু এলাকায় বিদ্যুৎ সংবহনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। তার পরেও প্রবল চাহিদার মধ্যে কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ইউনিটে গোলমাল হয়েছে বৃহস্পতি ও শুক্রবার। দ্রুত তা সারিয়েও ফেলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই আশা করা যায়।’’ কিন্তু তাতেও কি স্থায়ী স্বস্তি মিলবে? আবহাওয়া দফতর বলছে, বর্ষা না আসা পর্যন্ত অস্বস্তির আশঙ্কা থাকছে ষোলো আনাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Heat Wave Power Cut
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy