Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বাস চালাতে বাইরের লোক ভরসা নিগমের

বাস চালানো থেকে মেরামতি— কোনও কিছুতেই আর নিজেদের কর্মীদের উপরে ভরসা রাখতে পারছে না রাজ্যের পরিবহণ নিগমগুলি। বাধ্য হয়ে কোথাও চুক্তিবদ্ধ কর্মী নিয়োগ করে বাস চালাতে হচ্ছে, কোথাও আবার বাইরের সংস্থাকে দিয়ে মেরামতি হচ্ছে বাসের।

অশোক সেনগুপ্ত ও সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০০:১৯
Share: Save:

বাস চালানো থেকে মেরামতি— কোনও কিছুতেই আর নিজেদের কর্মীদের উপরে ভরসা রাখতে পারছে না রাজ্যের পরিবহণ নিগমগুলি। বাধ্য হয়ে কোথাও চুক্তিবদ্ধ কর্মী নিয়োগ করে বাস চালাতে হচ্ছে, কোথাও আবার বাইরের সংস্থাকে দিয়ে মেরামতি হচ্ছে বাসের।

যেমন, ঘটা করে কেন্দ্রীয় সহায়তায় নতুন ৬৩২টি বাস কিনেছে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি)। বর্তমানে তাদের বাসের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ দিনই একটি শিফ্‌টে সাতশো বাসও নামাতে পারছে না তারা। কিন্তু কেন?

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কারণ মূলত দু’টি। এক, সংস্থার চালক-কন্ডাক্টরের গড় বয়স পৌঁছেছে ৫৮-এ। বেশির ভাগেরই আর পেল্লায় সাইজের বাস চালানোর ক্ষমতা নেই। তা ছাড়া, অবসরের সময় কাছাকাছি চলে আসায় অনেকেই দিনের পর দিন ছুটি নিয়ে বসে থাকছেন। দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই পুরনো বাসগুলির সঠিক মেরামতির অভাব।

তাই নতুন বাস কিনলে কী হবে, নিজেদের কর্মীরা না আসায় অগত্যা সেগুলি চালাতে চুক্তির ভিত্তিতে বাইরে থেকে কর্মী নিয়োগ করতে হচ্ছে নিগমগুলিকে। সিএসটিসি সূত্রের খবর, সংস্থার মোট ৪৬০০ কর্মীর মধ্যে ১৩২১ জন চালক, ১৪০০ জন কন্ডাক্টর। এর একটা বড় অংশই কাজে আসছেন না। গরমে এই গরহাজিরার মাত্রাও ক্রমশ বাড়ছে। আবার নতুন বাস চালাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী দরকার। পুরনো, বয়স্ক কর্মীদের ওই প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন বাসের দায়িত্ব তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের অনেকেই কায়িক শ্রম করতে আগ্রহীও নন। এই অবস্থায় মাস দুই আগে নিগম চুক্তিবদ্ধ ২০০ চালক ও ৫০ কন্ডাক্টর নিয়োগ করে। সিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভীষ্মদেব দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘চালক-কন্ডাক্টরদের ১০-১৫ শতাংশ গরহাজির থাকলেও অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু এই শতাংশ ৩০ হয়ে গেলে তো সমস্যা হবেই! দ্রুত আরও চালক-কন্ডাক্টর নিয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছি।’’

একই অবস্থা বাস মেরামতির ক্ষেত্রেও। সম্প্রতি ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) এবং সিএসটিসি-র বেশ কয়েকটি বাসে আগুন লাগে। পরপর আগুন লাগার ঘটনায় নড়েচড়ে বসে পরিবহণ দফতর। বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে আগুন লাগার কারণ খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয় দুই নিগমকেই। সেই কাজে নেমে বিশেষজ্ঞ কমিটি দেখে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাসগুলির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ঠিকমতো মেরামত না-করে জোড়াতালি দিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে গোটা বাসেই বিদ্যুতের তারগুলি বিপজ্জনক ভাবে জোড়াতালি দেওয়া রয়েছে। কোথাও ছিঁড়ে যাওয়া তারের দু’টি মুখ দায়সারা ভাবে জোড়া লাগানো, কোথাও বা ঝুলছে ছেঁড়া তারের অংশও। ফলে যে কোনও সময়ে শট শার্কিট হয়ে বাসে আগুন লেগে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক বলে দাবি পরিবহণ কর্মীদেরও। ফলে বৈদ্যুতিক কোনও গণ্ডগোল হলেই তা থেকে ভয়াবহ আগুন লেগে যাচ্ছে। পরিস্থিতি যা, তাতে বাসগুলিকে পুরোপুরি মেরামত না-করে রাস্তায় বার করাই মুশকিল বলে মনে করছেন পরিবহণ কর্তারা।

বাধ্য হয়ে গত দু’বছরে নতুন কেনা বাস রাস্তায় নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে নিগমগুলি। এক পরিবহণ কর্তার কথায়, ‘‘বসে থাকা বাসগুলিও খুব পুরনো বলা যাবে না। বড়জোর সাত-আট বছর পুরনো। কিন্তু শুধুমাত্র রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাসগুলি কার্যত বুড়ো হয়ে গিয়েছে। ভাগ্যিস নতুন বাস কেনা হয়েছিল। না হলে এখন রাস্তায় সরকারি বাস মেলাই মুশকিল হয়ে পড়ত।’’

কর্মীদের গাফিলতিতেই যে বাসগুলির এমন হাল, তা মানছেন পরিবহণ-কর্তারা। তবে নতুন বাস মেরামতে নিজেদের কর্মীদের উপরে ভরসা রাখা যাচ্ছে না, এমনটা মানছেন না তাঁরা। নিগমের অধিকর্তা ভীষ্মদেববাবু বলেন, ‘‘নতুন জেএনএনইউআরএম বাসগুলি সবই বিএস৪ (অত্যাধুনিক) মানের। ওই মানের কারিগর নিগমের নেই। তাই দিল্লি ও আমদবাদ থেকে বিশেষজ্ঞ কারিগর আনতেই হতো।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE