নেতাজি নগরে বন্ধ বাস্তুহারা সমিতির দফতরে তৃণমূল সমর্থকেরা দেওয়াল বেয়ে বারান্দায় উঠে পতাকা টাঙিয়ে দেন। নিজস্ব চিত্র
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন (২ মে) এবং তার আগে-পরে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা পুরসভার নির্বাচনেও ভোটগ্রহণ ও ফলপ্রকাশের দিনে বিভিন্ন জায়গায় শাসক দলের বিরুদ্ধে হামলা-অশান্তির অভিযোগ তুলল বিরোধী শিবির। শুধু তা-ই নয়, ভোটের দিনের মতো মঙ্গলবার, ফল ঘোষণার দিনের গোলমালে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা এবং পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে।
লালবাজার অবশ্য নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘কোনও বড় গোলমাল হয়নি। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।’’
মহানগরে পুলিশকে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের দায়িত্ব দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই নির্দেশ পুলিশ এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন পালন করেনি বলে অভিযোগ তুলে সোমবার মামলা দায়ের করেছেন সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা সরকার এবং বিজেপি নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কাল, বৃহস্পতিবার পুরভোটের নিরাপত্তা সংক্রান্ত মামলার শুনানির সঙ্গে নতুন দু’টি মামলারও শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রের খবর। ওই দিনেই কমিশন, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে রিপোর্ট দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সেই মামলার শুনানিতেই ভোটের ফল ঘোষণার পরে অশান্তির বিষয়টি উল্লেখ করা হতে পারে।
কয়েক দশক পরে এ বার কলকাতা পুরসভার ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এত দিন ওই ওয়ার্ডে বাম শিবিরই জিতত। বামেদের অভিযোগ, এ দিন ফলপ্রকাশের পরেই শাসক দলের কর্মীরা ওই এলাকায় বাস্তুহারা সমিতি, এসএফআই, ডিওয়াইএফ-সহ বাম শিবিরের বিভিন্ন অফিসের দখল নিতে হানাদারি শুরু করে। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, দখল সম্পূর্ণ হওয়ার পরে পুলিশ আসে এবং পুলিশের সামনেই শাসক দলের লোকেরা বামেদের অফিসে নিজেদের তালা লাগিয়ে চলে যায়। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ এবং রাজ্যের এক মন্ত্রীর সামনে গুন্ডাবাহিনী লেলিয়ে বাস্তুহারা সমিতির অফিস দখল করা হয়েছে!’’
তবে স্থানীয় তৃণমূলকর্মীদের দাবি, বাস্তুহারা সমিতির অফিস দখল করা হয়নি। ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছিঁড়ে দিয়েছিল বাম পক্ষ। তাই জেতার আনন্দে ছাত্র-যুবকেরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ‘‘বাস্তুহারা সমিতির নামে ওখানে সিপিএমের অফিস চলত। এ বার সত্যিই বাস্তুহারাদের অফিস হবে।’’
শহরের আরও কিছু জায়গা থেকে বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর এসেছে। এমনকি তৃণমূল সমর্থকের বাড়িও হামলা-ভাঙচুর থেকে রক্ষা পায়নি। পুরসভার ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের (শখেরবাজার) বাসিন্দা কৌশিক ভট্টাচার্য এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। অভিযোগ, এ দিন বিকেলে ফল ঘোষণার পরেই এক দল স্থানীয় তৃণমূলকর্মী তাঁর বাড়িতে হাজির হয় এবং কৌশিকবাবুকে গালিগালাজ শুরু করে। অভিযোগ, তিনি প্রতিবাদ করতেই তাঁর মুখে থুতু ছিটিয়ে দেন ওই তৃণমূলকর্মীরা। তার পরে তাঁকে শাবল দিয়ে মারতে যায়। কৌশিকবাবুর বৃদ্ধ মা এবং স্ত্রী কোনও মতে গেটের তালা বন্ধ করে দেন। তখন বাইরে থেকেই ভাঙচুর চালানো হয়। বিষয়টি পুলিশকেও জানিয়েছেন কৌশিকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এলাকায় আমাদের দলে দুষ্কৃতীরা ঢুকছে। আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম বলেই ওদের রাগ!’’ স্থানীয় এক নেতার দাবি, উত্তেজনার বশে
কিছু সমর্থক বাড়াবাড়ি করেছে। ঘটনার খবর পেয়েই স্থানীয় নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ করেন এবং ওই সমর্থকদের সরিয়ে দেন।
পুর নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ ১৩৪বি, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে ময়ূরাক্ষী দাস নামে এক মহিলার বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে রাতেই তিনি কালীঘাট থানায় অভিযোগ জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy