বাবা-মা এইচআইভি সংক্রমিত। এই ‘অপরাধে’ সহপাঠীদের অভিভাবকদের একাংশের হুমকির মুখে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে স্কুলে আসা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ। গ্রামীণ হুগলির ওই ঘটনা জানাজানি হতে শোরগোল শুরু হয় শনিবার। বালককে কেন স্কুল থেকে বঞ্চিত হতে হবে এবং ওই দম্পতির এইচআইভি সংক্রমণের কথা ছড়াল কী করে, সে প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতর কেন এলাকাবাসীকে বুঝিয়ে শিশুটিকে স্কুলে ফেরাতে পারছে না, রয়েছে সে প্রশ্নও। তা ছাড়া, এইচআইভি নিয়ে সার্বিক সচেতনতা কর্মসূচি কতটা কাজে আসছে, তা-ও প্রশ্নাতীত নয়।
ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দাবি, অন্য অভিভাবকেরা চাপ সৃষ্টি করায় এবং গণস্বাক্ষর করা স্মারকলিপি দেওয়ায় বাধ্য হয়েই আট-দশ দিন আগে বালককে স্কুলে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অভিভাবকদের বোঝানোর জন্য আমার একার উপরে অন্যায় ভাবে প্রশাসন চাপ দিচ্ছে। ওই বাচ্চাটাকে ঢুকতে দিলে স্কুলে তালা মেরে দেওয়া হবে বলে যেখানে প্রায় প্রতিদিন হুমকি আসছে, সেখানে আমার একার পক্ষে বোঝানো সম্ভব?’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে ওই শিশুর বাবার সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরে মায়ের। তবে বাচ্চাটির সংক্রমণ হয়নি। এক গ্রামবাসীর বক্তব্য, “এইচআইভি নিয়ে আমরা সচেতন। কিন্তু ছোটরা নয়। খেলতে খেলতে মারপিট, খামচা-খামচি করে জখম হয় প্রায়ই। তা হলেই মুশকিল।” আর এক গ্রামবাসীর দাবি, হুমকি নয়, ওই ছেলেটি স্কুলে এলে তাঁরা ছেলেদের পাঠাবেন না বলে প্রধান শিক্ষিকাকে জানিয়েছেন। শিশুটির মা বলেন, ‘‘সম্প্রতি একটি দুর্ঘটনায় স্বামীকে কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে রক্ত পরীক্ষার সময় পড়শিরা বিষয়টি জেনেছেন বলে মনে হয়।’’
স্বেচ্ছাসেবী একাধিক সংস্থার সদস্যদের খেদ, এইচআইভি-এডস নিয়ন্ত্রণ প্রচারে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করলেও সংক্রামিতদের উপরে যথাযথ নজরদারি হচ্ছে না। তাই তাঁদের সামাজিক বয়কটের স্বীকার হতে হচ্ছে। সচেতনতা প্রচারে খামতি নেই দাবি করে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্কমৌলি কর বলেন, ‘‘ওই শিশুর থেকে কারও এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই। স্কুল যদি পাড়ার লোকের কথা অনুযায়ী চলে, খুবই দুর্ভাগ্যজনক। স্বাস্থ্য দফতর থেকে স্কুলে গিয়ে বৈঠক হয়েছে। লাগাতার প্রচারেও মানুষ শুনছেন না। কুসংস্কার আর অজ্ঞতা ছাড়া, কিছু নয়।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান বলেন, ‘‘খুব লজ্জার ঘটনা। গ্রামবাসীদের নিয়ে পঞ্চায়েতে বসা হয়েছিল। বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা চলছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)