রাস্তার একটি বড় অংশ আটকে তৈরি হচ্ছে কালীপুজোর মণ্ডপ। (বাঁ দিকে) বৌবাজার ও ভবানীপুরের নরেশ মিত্র সরণিতে (ডান দিকে)। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
২০ ফুট চওড়া রাস্তা। প্লাই, বাঁশ দিয়ে ঘেরায় সেই রাস্তার অর্ধেকের বেশি মণ্ডপের দখলে। বাকি যে জায়গা পড়ে, সেই পথে গাড়ি যাতায়াতের উপায় নেই প্রায়! দ্বিমুখী রাস্তায় উল্টো দিক থেকে একটি মোটরবাইক এলেও অন্য দিকে গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছে।
কালীপুজোর এক সপ্তাহ আগে ভবানীপুর থানা এলাকার নরেশ মিত্র সরণির উপরে ‘হাজরা বারোয়ারি সমিতি’র মণ্ডপের পাশ দিয়ে কোনও মতে গাড়ি যাতায়াত করলেও পুজোর ক’দিন সেটাও সম্ভব নয় বলে অভিযোগ। ফলে বিকল্প রাস্তা ধরে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয় বলে দাবি এলাকাবাসীর। রাস্তাতেই খাওয়াদাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলতে থাকে বলেও অভিযোগ। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা বাবলু সাউয়ের দাবি, অসুবিধা যাতে না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশকে বলা থাকে। মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, সেই চেষ্টা করা হয়।’’
পুজো ঘিরে ‘দখলদারি’র ছবি শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই রয়েছে। কোথাও এমন ভাবে গলি আটকে মণ্ডপ করা হয়েছে যে, বাসিন্দাদের বেরোনোর রাস্তা নেই। অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স যাতায়াতের চিন্তাও করছেন না ওই সব পুজোর উদ্যোক্তারা। কোথাও আবার মণ্ডপের সৌজন্যে মাসখানেক ধরে গাড়ি রাখতে হচ্ছে অনেকটা দূরে।
কালীপুজোর জন্য এক সপ্তাহ আগেই রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছে ব্রহ্মপুরের একটি মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায়। হরিশ মুখার্জি রোডেও পুজোর উদ্বোধনের জন্য গলি আটকে দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তারা যদিও উদ্বোধনের পরে রাস্তা খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
উত্তরের রাজা রামমোহন রায় সরণিতে প্রতি বছর একাধিক পুজো কমিটির বিরুদ্ধে রাস্তা আটকে কালীপুজো করার অভিযোগ ওঠে। সেখানে মেলাও বসানো হয়। দিনের বেলা গাড়ি চালানো গেলেও সন্ধ্যার পরে রাস্তা আটকে দেওয়া হয় বলে দাবি। এ বছরও সেখানে রাস্তার একাংশ আটকে মণ্ডপ তৈরি করতে দেখা গেল। অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় ‘ইয়ং স্পোর্টিং ক্লাব’ আয়োজিত কালীপুজোর এক উদ্যোক্তা সুশান্ত চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘দিনে যাতে স্বাভাবিক ভাবে গাড়ি চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা প্রতি বার থাকে। ক্লাবের সদস্যেরা পুলিশকে সাহায্য করেন। রাতে এত মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েন যে, উপায় থাকে না। তখন দুর্ঘটনা এড়াতে যান চলাচল বন্ধ থাকে।’’
ভোগান্তি জেনেও ‘উপায় নেই’ বলে দায় সারছেন ‘ফাটাকেষ্টর পুজো’ নামে খ্যাত মধ্য কলকাতার একটি কালীপুজোর উদ্যোক্তারা। এ বারেও কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিট সংলগ্ন সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট বন্ধ করে ওই মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। পুজোর এক উদ্যোক্তা সুকৃতি দত্ত বললেন, ‘‘মানুষের অসুবিধা হয় জানি। কিন্তু কোনও উপায় নেই। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। এত বছর ধরে এখানে পুজো হচ্ছে। এখন আর সরানো যাবে না।’’
রাস্তা আটকে মণ্ডপ তৈরির পরেও পুলিশি অনুমতি কী ভাবে মিলছে? এই প্রসঙ্গে লালবাজারের পুলিশকর্তাদের কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘কালীপুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় থানাগুলিকেও নির্দেশ দেওয়া আছে। যান চলাচল যাতে স্বাভাবিক থাকে, তা দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy