ডেবিট কার্ড হাতে থাকা সত্ত্বেও অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে টাকা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ফের এটিএম জালিয়াতির শিকার শহরের বাসিন্দারা! শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর এলাকায় একের পর এক ব্যক্তি বুঝতে পারলেন, ডেবিট কার্ড হাতে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে টাকা। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ২৭ জন অভিযোগ দায়ের করেছেন পুলিশের কাছে।
লালবাজার সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা। তবে এখনও স্পষ্ট নয় ঠিক কোন পদ্ধতিতে এ বার এটিএম জালিয়াতি হচ্ছে। তবে প্রাথমিক ভাবে জালিয়াতির ধরন দেখে তদন্তকারীদের ধারণা, এই প্রতারণা স্কিমারদের কাজ। তদন্তকারীদের সন্দেহ সোমবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও অভিযোগ বা প্রতারণার খবর মিলবে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) সুদীপ সরকারের জানিয়েছেন, রবিবার রাত পর্যন্ত তাঁরা ১৭টি অভিযোগ পেয়েছেন। সোমবার সকালে তা ২৫ ছাড়িয়েছে।
ঠিক কী ভাবে হঠাৎ গায়েব হয়ে যাচ্ছে এটিএমের টাকা?
জালিয়াতির ধরন দেখে তদন্তকারীদের ধারণা, এই প্রতারণা স্কিমারদের কাজ। গ্রাফিক:শৌভিক দেবনাথ।
একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী পিয়ালি ভট্টাচার্য যাদবপুর থানায় করা অভিযোগে জানিয়েছেন, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তাঁর বেতনের অ্যাকাউন্ট। সেই অ্যাকাউন্টে ৬৭ হাজার টাকা ছিল। রবিবার সকালে পর পর তিনি দু’টি মেসেজ পান। ২০ হাজার টাকা করে পর পর দু’বার তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়েছে। ওই মেসেজ দেখে ঘাবড়ে যাওয়া পিয়ালি এটিএমে গিয়ে অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স দেখেন। কিন্তু, অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা ছিল না। তাড়াহুড়ো করে যাদবপুর থানায় অভিযোগ জানাতে যান তিনি। কিন্তু তার আগেই পর পর টাকা ‘ডেবিট’ হওয়ার মেসেজ ঢোকে তাঁর মোবাইলে। ফলে মোট ৬৭ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নিয়েছে প্রতারকরা।
আরও পড়ুন: গার্ডেনরিচে যুবককে লক্ষ্য করে পর পর গুলি, আহত বীরবাহাদুর ভর্তি এসএসকেএমে
একই অভিজ্ঞতা যাদবপুর এলাকার আরও এক বাসিন্দার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলা জানিয়েছেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে ৩০ হাজার টাকা ছিল। হঠাৎ করে রবিবার সকালে সেই টাকা দু’দফায় তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে উঠে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ১৭ জন রবিবার রাত পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা জোর দিয়ে বলছেন, তাঁদের ডেবিট কার্ড বেহাত হয়নি বা কখনও তাঁরা এটিএমের পিন কাউকে দেননি। ফলে প্রাথমিক ভাবে ‘স্কিমিং’ বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
স্কিমারদের এই গণপ্রতারণা শহরে নতুন নয়। ২০১৮ সালের মে মাসে গড়িয়াহাট, লেক গার্ডেন্স, ঢাকুরিয়া, কসবা এলাকার একের পর এক স্কিমিংয়ের ঘটনা ঘটেছিল। কয়েকশো মানুষের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে রোমানিয়ার একটি চক্র পাকড়াও করেছিল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। সেই অভিযুক্তরা এখনও জেলে। সেখান থেকেই তদন্তকারীদের ধারণা, শহরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে নতুন কোনও চক্র।
আরও পড়ুন: দূষণে দিল্লিকে টক্কর কলকাতার, মাসুল দিচ্ছে শরীর
তবে, গোয়েন্দাদের চিন্তা বাড়িয়েছে অন্য একটি তথ্য। ২০১৮-র ঘটনার পরেই পুলিশ এবং ব্যাঙ্ক কর্তাদের বৈঠকে ঠিক হয়, রাজ্যে থাকা প্রায় ১ হাজার ২০০টি এটিএমে ‘অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস’ বসাবেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সেই মতো ২০১৮-র সেপ্টেম্বর মাসেই অধিকাংশ ব্যাঙ্ক দাবি করেছিল যে, তারা ৫০ শতাংশের বেশি এটিএমে ‘অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস’ ‘ইনস্টল’ করে দিয়েছে। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করছি, কোন কোন এটিএম থেকে তাঁরা ইতিমধ্যে টাকা তুলেছেন। সেখান থেকে স্পষ্ট হবে, ওই এটিএমগুলিকেই হয়তো স্কিমাররা টার্গেট করেছিল এবং স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করেছে।” এ দিন দুপুর পর্যন্ত যাদবপুর এলাকার বিভিন্ন এটিএমে তদন্ত চালানোর পর গোয়েন্দাদের ধারণা, সুকান্ত সেতু সংলগ্ন এটিএমগুলোকেই ‘টার্গেট’ করেছে এই চক্র। তবে, এখনও কোনও এটিএম থেকে স্কিমিং ডিভাইস পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তার ফাঁক গলে মেট্রোয় বাড়ছে পকেটমারি
রবিবার যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশের অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা উঠেছে কলকাতার বাইরে থেকে। নিজস্ব চিত্র।
তদন্তকারীরা আরও একটি সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। সম্প্রতি ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা ত্রিপুরা পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে তুরস্কের একটি স্কিমিং চক্রকে পাকড়াও করেছেন। সঙ্গে পাকড়াও হয়েছিল ওই চক্রের এক বাংলাদেশি সদস্য। ওই চক্রটি ত্রিপুরা থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা প্রতারণা করেছে। তবে ওই চক্র ধরা পড়ার পর জানা যায়, চক্রটি গত ৬ মাস ধরে ঘাঁটি গেড়েছিল বেলঘরিয়ার একটি ফ্ল্যাটে। অন্য দিকে, রোমানীয় গ্যাং পাকড়াও হওয়ার পর জানা গিয়েছিল, গ্রাহকদের টাকা হাতানোর অন্তত তিন মাস আগে ‘স্কিমার ডিভাইস’ বিভিন্ন এটিএমে বসিয়ে গ্রাহকদের কার্ডের তথ্য হাতিয়েছিল তারা। তার পর সেই তথ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ক্লোন বা নকল কার্ড।
ওই পদ্ধতির কথা মাথায় রেখেই তদন্তকারীদের সন্দেহ, তুরস্ক গ্যাং হয়তো ধরা পড়ার অনেক আগেই গ্রাহকদের তথ্য হাতিয়েছিল। সেই তথ্য পাচার করে দিয়েছিল চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে। তারাই এ বার শহরের বাইরে বসে ওই তথ্য কাজে লাগিয়ে টাকা তুলছে! কারণ, রবিবার যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশের অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা উঠেছে কলকাতার বাইরে থেকে। কারও নয়ডা, কারও আবার উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের কোনও এটিএম থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy