Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

স্বামীর লাগাতার ‘অত্যাচারে’ পুলিশে বৃদ্ধা

মুচিপাড়া থানার ক্রিক রো-র বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা জানিয়েছেন, ২০০১ সালে দেখাশোনা করে তাঁর বিয়ে হয়েছিল এলাকারই বাসিন্দা এক ব্যক্তির সঙ্গে। মহিলার কথায়, ‘‘আমায় দেখতে খুবই খারাপ। তাই কম বয়সে বিয়ের জন্য অনেক দেখাশোনা করলেও কোনও পাত্রপক্ষের পছন্দ হয়নি।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০২:৩৪
Share: Save:

স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বছর ষাটের এক মহিলা। বিচার চেয়ে মাসখানেক আগে তিনি গিয়েছিলেন মহিলা কমিশনেও। কিন্তু বৃদ্ধার অভিযোগ, পুলিশ বা মহিলা কমিশন— কেউই কোনও পদক্ষেপ করেনি। উল্টে কয়েক দিন আগে তাঁকে ফের মারধর করা হয়। এমনকি, জোর করে একাধিক ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামী তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ভয় এবং আতঙ্কে এখন কোনও রকমে দিন কাটছে ওই মহিলার।

মুচিপাড়া থানার ক্রিক রো-র বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা জানিয়েছেন, ২০০১ সালে দেখাশোনা করে তাঁর বিয়ে হয়েছিল এলাকারই বাসিন্দা এক ব্যক্তির সঙ্গে। মহিলার কথায়, ‘‘আমায় দেখতে খুবই খারাপ। তাই কম বয়সে বিয়ের জন্য অনেক দেখাশোনা করলেও কোনও পাত্রপক্ষের পছন্দ হয়নি।’’

২০০১ সালে তাঁর বয়স যখন ৪২, তখন ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়। ওই ব্যক্তি পেশায় কলকাতা পুরসভার সাফাই বিভাগের গাড়িচালক। এটি তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে। তাঁর দাবি, বনিবনা না হওয়ায় ২০০০ সালে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। তার পর থেকেই তিনি দ্বিতীয় বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। তিনি আরও জানান, তাঁর তরফে প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে খোরপোষ দিতে হচ্ছিল। শেষমেশ দুই পরিবারের সদস্যেরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে এই বিয়ে ঠিক করেন। ২০০১-র ১১ নভেম্বর রেজিস্ট্রি করে অণিমাদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় ওই ব্যক্তির। বৃদ্ধার অভিযোগ, বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই স্বামীর ব্যবহার বদলাতে শুরু করে। কিন্তু এক দিকে বেশি বয়সে বিয়ে। অন্য দিকে, বাপের বাড়ি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। ফলে মুখ বুজে প্রথম দিকে সব সহ্য করে নিতেন তিনি। অণিমাদেবীকে আর্থিক সাহায্য করতেন তাঁর ভাই এবং এক মামাতো বোন। এ ভাবেই চলছিল।

সমস্যার সূত্রপাত ২০১৬ সালে। অণিমাদেবী জানিয়েছেন, ওই বছর অবসর নেন তাঁর স্বামী। এর মধ্যে মারা যান অণিমাদেবীর ভাইও। বৃদ্ধা জানিয়েছেন, অবসর নেওয়ার পরে কল্যাণীতে পৈতৃক জায়গায় বাড়ি করেন স্বামী। সেখানে মাঝেমধ্যে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। স্বামীর সঙ্গে কখনও সখনও তিনিও যেতেন। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে কল্যাণীর বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধা দেখেন, ওই ব্যক্তির সঙ্গে সেখানে রয়েছেন তাঁর প্রথম প‌ক্ষের স্ত্রী। অণিমাদেবীর অভিযোগ, ওই মহিলা তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি। এর পরে মে মাসে হঠাৎই তাঁর স্বামীর প্রথম পক্ষের এক মেয়ে ক্রিক রো-র বাড়িতে এসে অণিমাদেবীকে একটা রফাসূত্রে আসতে বলেন। প্রায় ১৮ বছর পরে আচমকা প্রথম পক্ষের মেয়ে আসায় চমকে যান ওই বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘‘আমায় সে সময়ে বলা হয়, ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদই হয়নি!’’

এ কথা শুনে ঘাবড়ে যান ওই বৃদ্ধা। কী করবেন বুঝতে না পেরে পুরো বিষয়টি তিনি জানান ভাইয়ের স্ত্রী এবং মামাতো বোনকে। বৃদ্ধার অভিযোগ, এরই মধ্যে একাধিক বার স্বামী তাঁকে মারধর করে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বাধ্য হয়ে তিনি মুচিপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এক রাতে মারধরের পরে স্বামী তাঁকে জোর করে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন বলেও অভিযোগে জানিয়েছেন অণিমাদেবী। পরের দিন সকালে ওই অবস্থাতেই তাঁকে ফের মারধর করে, ঠেলে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। খবর পেয়ে অণিমাদেবীর বাড়ির লোকজন এসে দেখেন, অচৈতন্য অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছেন তিনি। তাঁরাই তাঁকে উদ্ধার করে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিছু দিন পরে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে অণিমাদেবী দেখেন, দরজায় তালা ঝুলছে। স্বামীর খোঁজ নেই। বৃদ্ধার অভিযোগ, থানায় পুরো বিষয়টি জানানো হলে তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে বাড়ির তালা ভেঙে তাঁকে ঢুকতে হবে বলে দায় সেরেছে।

এ বিষয়ে অণিমাদেবীর স্বামীকে ফোন করা হলে তিনি সব শুনে ফোন কেটে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি। এমন ভাবে বৃদ্ধ বয়সে বারবার স্বামী এবং তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও মেয়েদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ অণিমাদেবী গত মাসে রাজ্যের মহিলা কমিশনেও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু মুচিপাড়া থানা বা মহিলা কমিশন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে কারও তরফেই কোনও সদুত্তর মেলেনি। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনকে ফোন এবং এসএমএস করা হলেও জবাব আসেনি।

অণিমাদেবীর এখন আশঙ্কা, সুরাহা মেলার আগে স্বামী আরও বড় কোনও ক্ষতি পারেন। এই ভয়ে তিনি রীতিমতো ঘরে নিজেকে বন্ধ করে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর এখন প্রশ্ন, ‘‘দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল। আমার দোষ কোথায়?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Polic Domestic Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy