Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Accident

ছেলের কাছে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে বাসে পিষ্ট প্রৌঢ়া

ঘটনাটি ঘটেছে উল্টোডাঙা মেন রোডের মুচিবাজারে। পুলিশ জানায়, বাসের চাকায় প্রৌঢ়ার মাথার এক দিক সম্পূর্ণ থেঁতলে যায়।

রাস্তায় তখনও পড়ে বৃদ্ধার দেহ, ঘটনাস্থলে পুলিশ। বুধবার, মুচিবাজারে। নিজস্ব চিত্র

রাস্তায় তখনও পড়ে বৃদ্ধার দেহ, ঘটনাস্থলে পুলিশ। বুধবার, মুচিবাজারে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২০ ০৪:০৮
Share: Save:

আজ, বৃহস্পতি এবং আগামী কাল শুক্রবার— পর পর দু’দিন লকডাউন। তাই বুধবার সকালে অবিবাহিত ছেলেকে রেশনের চাল পৌঁছে দিতে বেরিয়েছিলেন প্রৌঢ়া মা। কিন্তু ছেলের কাছে তাঁর যাওয়া হল না। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল প্রৌঢ়ার। ঘটনাটি ঘটেছে উল্টোডাঙা মেন রোডের মুচিবাজারে। পুলিশ জানায়, বাসের চাকায় প্রৌঢ়ার মাথার এক দিক সম্পূর্ণ থেঁতলে যায়। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তবে রাত পর্যন্ত বাসটিকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনাস্থল মানিকতলা থানা এলাকায় হলেও তদন্তভার নিয়েছে কলকাতা পুলিশের ফেটাল স্কোয়াড।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ষাটেকের ওই প্রৌঢ়ার নাম পূর্ণিমা ঘোষ। উত্তর কলকাতার ক্যানাল ইস্ট রোডের একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া ছিলেন তিনি। প্রৌঢ়ার এক ছেলে, দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে আশিস বিয়ে করেননি। তাঁর ব্যবসা রয়েছে হাতিবাগানে। প্রতিবেশীদের দাবি, আশিসকে নিয়ে প্রৌঢ়ার শান্তি ছিল না। প্রায়ই মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে তিনি মায়ের সঙ্গে ঝামেলা করতেন। মাসখানেক আগে বাবা শিবনাথ ঘোষের মৃত্যুর পরে দুই মেয়ে উমা এবং সীমা পালা করে মাকে নিজেদের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখতেন। ক্যানাল ইস্ট রোডের বাড়িতে একা থাকতেন আশিস। তবে প্রায়ই ছেলেকে দেখতে যেতেন পূর্ণিমাদেবী। এ দিনও বাগুইআটির এক মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের জন্য চাল পৌঁছে দিতে তিনি বেরিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আত্মীয়েরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জেনেছে, ভিআইপি রোড থেকে ২১১ নম্বর রুটের একটি বাসে উঠেছিলেন পূর্ণিমাদেবী। তাঁর হাতে বাজারের থলি ছিল। অরবিন্দ সেতুর মুখে মুচিবাজারের কাছে নামতে গিয়ে বাস থেকে পড়ে যান তিনি। বাসের পিছনের চাকা প্রৌঢ়ার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারাই পুলিশে খবর দেন। মানিকতলা থানার পুলিশ গিয়ে প্রৌঢ়াকে দ্রুত আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে তিনি মারা গিয়েছেন। সন্ধ্যায় ময়না-তদন্তের পরে প্রৌঢ়ার দেহ তাঁর ছেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এ দিন ক্যানাল ইস্ট রোডের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, আশিসদের ১০ ফুট বাই ১২ ফুটের এক কামরার বাড়িতে একটি চৌকি ছাড়া আর কোনও আসবাব নেই। আশিস বলেন, ‘‘কত করে বলেছি, বোনেদের সঙ্গে আছ, ভাল আছ। আমার কথা ভাবতে হবে না। কিন্তু কোনও কথাই শুনত না। কাল থেকে দু’দিনের লকডাউন, সেটাই মায়ের চিন্তা হয়ে গেল! দু’টাকা কেজির চাল রেশন থেকে তুলে এ দিন আমায় দিতে আসছিল। ওই ভাত আমার গলা দিয়ে নামবে না। আমার জন্যই মায়ের এই পরিণতি হল।’’ বৃদ্ধার দুই মেয়েও বলেছেন, ‘‘আমরা যত ভাল করেই রাখি, ছেলের মায়া কাটাতে পারেনি মা। দাদার কাছে যেতে গিয়েই সব শেষ হয়ে গেল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy