অপেক্ষা: হেরিটেজ গ্রেড ঠিক না হওয়ায় থমকে এমনই বহু বাড়ি সংস্কারের কাজ। উত্তর কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র
ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে কি? গত দশ বছরেও সে উত্তর খুঁজে পেল না কলকাতা পুরসভা! ফলে শহরের প্রায় সাড়ে চারশো বাড়ি এখনও পুরসভার হেরিটেজ তালিকায় ‘গ্রেড পেন্ডিং’ শ্রেণিভুক্ত। ঐতিহ্য-সরণিতে ওই বাড়িগুলি কোন গ্রেডের হবে, তা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি পুরসভা।
হেরিটেজ গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, হেরিটেজ তালিকায় ‘গ্রেড পেন্ডিং’-এর বিষয়টি ধোঁয়াশার জায়গা। কারণ, পুর-হেরিটেজ তালিকাভুক্ত ওয়ান, টুএ, টুবি ও থ্রি গ্রেডের বাড়ি বা ভবনগুলির সংস্কারের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে, হেরিটেজ আইনে তা নিয়ে পরিষ্কার নির্দেশিকা রয়েছে। কিন্তু ‘গ্রেড পেন্ডিং’-এর ক্ষেত্রে তেমন কিছু না থাকায় ওই সব বাড়ি সংস্কার বা সারাইয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকদের।
বাড়ি সারাতে গেলে বা বাড়ি ভেঙে নতুন নির্মাণ করতে গেলেই পুরসভার কাছ থেকে বাধা আসছে। অথচ বাড়িগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বা স্থাপত্যশৈলীর বিশেষত্ব রয়েছে কি না, তা-ও পরিষ্কার করে বলতে পারছে না পুরসভা! কারণ, বিষয়টি সমীক্ষা করে দেখাই হয়নি। ২০০৯ সালে যখন পুরসভার হেরিটেজ তালিকা চূড়ান্ত ভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল, তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তালিকার ‘গ্রেড পেন্ডিং’ বাড়িগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব যাচাই করে দেখা হবে। সেই অনুযায়ী সেগুলি কোন গ্রেডের, তা ঘোষণা করা হবে। কিন্তু প্রায় এক যুগেও সে কাজ সম্পূর্ণ করে উঠতে পারেনি পুরসভা।
সম্প্রতি এ নিয়ে লাগাতার আবেদন জমা পড়েছে পুরসভায়, যেখানে ‘গ্রেড পেন্ডিং’ তালিকাভুক্ত বাড়ির মালিকেরা তাঁদের বাড়ি ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কারণ, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাড়ি সারাতে চান। কিন্তু ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সেই আবেদনে সাড়া দিতে পারছে না পুরসভা। সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকদের অনেকেই আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় পুরো বিষয়টিই জটিল আকার ধারণ করছে বলে জানাচ্ছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ।
হেরিটেজ গবেষকদের একাংশের আবার আশঙ্কা, ‘গ্রেড পেন্ডিং’ তালিকার ধোঁয়াশার জায়গাটি হাতিয়ার করে কিছু প্রোমোটার চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যেহেতু ওই বাড়িগুলি গ্রেডেশনের তালিকাভুক্ত নয়, তাই সেগুলির উপরে সেই অর্থে নজরদারি কম। ফলে কিছু বাড়ির মালিকদের যেমন বাড়ি সারাইয়ের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, তেমনই কেউ কেউ আবার আবেদন করা মাত্রই কোনও অজ্ঞাত কারণে তাঁদের অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোন ‘আঁতাত’-এর ফলে তা সম্ভব হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হেরিটেজ গবেষকদের একাংশ। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘পুরসভার হেরিটেজ কমিটির উপরে শহরের ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু কমিটির বৈঠকগুলো তেমন ভাবে হয় বলে মনে হয় না! শুধুমাত্র মিউটেশনের অনুমতি দেওয়া বা নতুন নকশার জন্য অনুমতি দেওয়া ছাড়া তো তারা আর কোনও কাজ করে না!’’
যদিও পুরসভার বক্তব্য, ‘গ্রেড পেন্ডিং’-এর তালিকাভুক্ত বাড়ির মালিকদের প্রতিটি আবেদন পৃথক ভাবে যাচাই করে দেখা হচ্ছে। যদিও গ্রেডেশন নিয়ে ধোঁয়াশার দিকটা পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছে পুরসভা। আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ওই বাড়িগুলির সত্যিই ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে কি না, তা প্রমাণ করাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেই সঙ্গে অর্থের দিকও রয়েছে। এক পদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘গ্রেডেশনের ব্যাপারটা ঠিক করতে হলে ঐতিহাসিক বা বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে। সার্ভেয়ার লাগবে। প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। পুরসভার বর্তমান পরিকাঠামোয় তা সম্ভব নয়!’’
ফলে ‘গ্রেড পেন্ডিং’-এর গোলকধাঁধা থেকে আপাতত মুক্তি নেই এ শহরের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy