ঐত্রী।
অক্সিজেনের অভাবেই মৃত্যু হয়েছিল একরত্তি মেয়েটির। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট সে কথাই বলছে। গড়িয়ার কামালগাজির বাসিন্দা, আড়াই বছরের ঐত্রী দে-র মৃত্যুর ঘটনায় মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেছিলেন তার মা শম্পা দে। এ নিয়ে তাঁরা রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। শুক্রবার সেই অভিযোগের প্রথম শুনানিতে আমরি হাসপাতালের তৎকালীন ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়কে ভর্ৎসনা করল স্বাস্থ্য কমিশন।
গত ১৭ জানুয়ারি ওই হাসপাতালে ঐত্রীর মৃত্যুর পরে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করেন তার মা-বাবা ও পরিজনেরা। সেই সময়ে তাঁদের সঙ্গে জয়ন্তী ‘দুর্ব্যবহার’ করেছিলেন বলে অভিযোগ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার থেকে বড় মস্তান কেউ নেই।’’ এমনকী, জয়ন্তী শম্পাকে ধাক্কাও দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। প্রথমে জয়ন্তীকে ছুটিতে পাঠিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার পরে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার
মধ্যেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। সূত্রের খবর, কমিশন এ দিন সেই ‘দুর্ব্যবহারের’ প্রসঙ্গ তুলে বিঁধেছে জয়ন্তীকে। বলা হয়েছে, ঘটনার পরে আরও ‘মানবিক’ হওয়া উচিত ছিল জয়ন্তীর। এ নিয়ে জয়ন্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তর দেননি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর সাসপেনশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমিশনে ঐত্রীর বাবা-মা এবং জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)।
ঐত্রীর ময়না-তদন্ত রিপোর্টে অক্সিজেনের অভাবের পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে, তার হার্ট, কিডনি এবং লিভারে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, হাসপাতালের দেওয়া ভুল ইঞ্জেকশনই তাঁর মেয়ের মৃত্যুর কারণ বলে দাবি করেছিলেন শম্পা। এমনকী, ঐত্রীকে যে পর্যাপ্ত অক্সিজেন দেওয়া হয়নি, সে অভিযোগও করেছিলেন তিনি। শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্ট কেন হয়েছিল, তা বোঝা মুশকিল। কারণ, অক্সিজেন না পৌঁছলে মস্তিক, হার্ট, কিডনিতে ওই রকম দাগ হতে পারে।’’ চিকিৎসকদের একাংশের মতে, রুগ্ণ শিশুদের হঠাৎ শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতেই পারে। ঐত্রীর হয়তো তেমনই হয়েছিল। আর এক অংশের মতে, ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে ঐত্রীর খিঁচুনি ওঠে। তার জেরেই তার দেহে অক্সিজেন চলাচল বন্ধ
হয়ে যায়।
প্রথম শুনানিতে এ দিন অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী— দুই পক্ষেরই বক্তব্য শোনেন কমিশনের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার রায়। শুনানি শেষে কোনও মন্তব্য করতে চাননি শম্পা। তাঁর স্বামী জয়ন্ত দে বলেন, ‘‘দু’পক্ষের কথাই শুনেছে কমিশন।’’ শুনানিতে হাজির ছিলেন মৃত শিশুর চিকিৎসক জয়তী সেনগুপ্তও। তিনি বলেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয়। মন্তব্য করব না।’’ আমরি-র সিইও রূপক বড়ুয়া জানান, ঐত্রীর ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাসপাতালের কাছে পৌঁছেছে। অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি তা খতিয়ে দেখছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্রের খবর, প্রথম দিনের শুনানি পর্বের ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমবাবু বলেন, ‘‘দু’পক্ষের বক্তব্যই শোনা হয়েছে। লিখিত আকারে দু’পক্ষকেই তাঁদের বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে।’’ সূত্রের খবর, আগামী বুধবার পরবর্তী শুনানির দিন ঐত্রীর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত নার্স-সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যদের হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশনের মতে, অভিযোগ এবং অভিযোগকারী—উভয়কেই সমান সুযোগ দেওয়া উচিত।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy