Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
চিত্তরঞ্জন ক্যানসার

শুধু ওষুধ নয়, নার্স নিয়োগের চুক্তিও তামাদি

মেয়াদ পেরোনো কেমোথেরাপি ইঞ্জেকশন দেওয়া কিংবা অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর কাঁচা সেলাই কেটে দেওয়া— পরপর দু’টি ঘটনায় সম্প্রতি শিরোনামে উঠে এসেছিল ‘চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট’ (সিএনসিআই)। আর দু’টি ঘটনাতেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল হাসপাতালের নার্সিং স্টাফদের বিরুদ্ধে।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৬
Share: Save:

মেয়াদ পেরোনো কেমোথেরাপি ইঞ্জেকশন দেওয়া কিংবা অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর কাঁচা সেলাই কেটে দেওয়া— পরপর দু’টি ঘটনায় সম্প্রতি শিরোনামে উঠে এসেছিল ‘চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট’ (সিএনসিআই)। আর দু’টি ঘটনাতেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল হাসপাতালের নার্সিং স্টাফদের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরে জানা যায়, তাঁরা আদৌ স্টাফ নন। হাসপাতালের বাইরে থেকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা নার্স। এ বার জানা গেল, চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা নার্সরাও যে দুই সংস্থা থেকে এসেছেন, তাদের সঙ্গে ২০০৯ সালের পরে আর কোনও চুক্তিই করা হয়নি।

শুধু তা-ই নয়, ২০০৯ সালে দরপত্র দেখে আবেদনকারী দুই সংস্থার একটি সংস্থা ঠিক মতো কাগজপত্র জমা দিতে না পারায়, কর্তৃপক্ষ সেই সময়েই ‘সেবিকা’ নামের ওই সংস্থার আবেদন বাতিল করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সংস্থার নার্সেরা এখনও কাজ করে চলেছেন ওই হাসপাতালে!

হাসপাতাল সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চুক্তির ভিত্তিতে নার্স নিয়োগ করতে নির্দেশিকা জারি করে। আবেদনকারী কয়েকটির মধ্যে আমহার্স্ট স্ট্রিটের ‘সেবিকা’ ও দমদম রোডের ‘ক্লাসিক নার্সিং সেন্টার’ নার্স দেওয়ার বরাত পেয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সেবিকা ‘ফার্ম রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট’ জমা করতে পারেনি। এর পরেই সেবিকা নামের সংস্থার বরাত বাতিলের চিঠি দেন কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি পরপর দু’টি ঘটনায় নার্সদের গাফিলতির ঘটনা জানাজানির পরেই এই তথ্য উঠে এসেছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে নতুন করে টেন্ডার ডাকার কথা বলছেন। সিএনসিআই-এর অধিকর্তা জয়দীপ বিশ্বাসের দাবি, ‘‘খুব শীঘ্রই নতুন টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য কাগজপত্র তৈরি করা হবে। নিয়মও কড়াকড়ি করা হবে।’’ কী রকম?

হাসপাতাল সূত্রে খবর, এর পরে দরপত্রে রোগী-পিছু এক জন করে নার্স নিয়োগের কথা বলা হবে। পাশাপাশি, কোনও রোগী বা রোগীর পরিবার সেই নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ছাঁটাই করাও হবে। শুধু নার্স নন, যে সংস্থাগুলি বরাত পাবে, তাদের নার্সদের বিরুদ্ধে পরপর অভিযোগ উঠলে সেই সংস্থার বরাতও বাতিল হবে। তবে কবে দরপত্র ডাকা হবে, তা কর্তৃপক্ষ জানাননি।

কিন্তু তাঁদেরই বাতিল করে দেওয়া সংস্থার নার্সেরা গত ছ’বছরের উপরে কী করে কাজ করে চলেছেন ওই হাসপাতালে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও মুখ না খুললেও খোদ সেবিকার মালিক দীপ্তি চট্টোপাধ্যায় বিনা টেন্ডারে নার্সিং স্টাফ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, গত কুড়ি বছর ধরে তাঁর সংস্থা সিএনসিআই-এ নার্সিং স্টাফ দিয়ে আসছে। তিনি আরও জানান, তাঁর সংস্থা কোনও দরপত্র দেখে আবেদন করেনি। মেয়েদের নার্সিং কোর্স পাশ করা সার্টিফিকেট আর চিঠির ভিত্তিতেই সিএনসিআই-এ তিনি নার্স দেওয়ার কাজ করে আসছেন। বর্তমানে তাঁর সংস্থার কুড়ি জন নার্স ওই হাসপাতালে রয়েছেন।

তবে দীপ্তিদেবীর দাবি, তাঁর সংস্থার দুই নার্সের হাতে মেয়াদ উত্তীর্ণ কেমোথেরাপির ইনজেকশন দিয়েছিলেন হাসপাতালের কিছু লোকজনই। কিন্তু তাঁরা কে বা কারা, তা তিনি বলতে চাননি।

অপর সংস্থা ‘ক্লাসিক নার্সিং সেন্টারের’ মালিক খোদ সিএনসিআই-র ল্যাব সহায়ক আশিস বাগচীর স্ত্রী মিনু বাগচী। এ বিষয়ে আশিসবাবু জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নোটিসের ভিত্তিতে তাঁর স্ত্রী সংস্থার কাগজপত্র জমা করেই বরাত পেয়েছেন।

যদিও হাসপাতালের একটি সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে সিএনসিআই-এর নার্স থেকে শুরু করে নিরাপত্তারক্ষী কিংবা কোনও ওষুধের সংস্থার হাসপাতালে প্রবেশাধিকার— সবটাই নির্ভর করে তৃণমূল পরিচালিক কর্মচারী ইউনিয়নের অঙ্গুলিহেলনে। কিন্তু সব জায়গার মতো এখানে হাসপাতালের ভিতরেও ইউনিয়নের মধ্যে দু’টি গোষ্ঠী হয়ে গিয়েছে। আর সেই গোষ্ঠী নিজেদের আধিপত্য কায়েমের পাশাপাশি, হাসপাতাল দখল রাখতে নিজেদের লোকদের হাসপাতালে ঢোকাচ্ছে। চুক্তির ভিত্তিতে নার্স নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এমনকী, সম্প্রতি এক সংস্থার নার্সকে সেখান থেকে বার করে এনে অন্য সংস্থায় ঢোকানো হয়েছে। পুরোটাই নিজেদের স্বার্থে। কী বলছে কর্মচারী ইউনিয়ন?

ইউনিয়নের সভাপতি কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেদের স্বার্থের কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, এই নার্সদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। যোগ্যতা যাচাই না করেই নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া নার্সেরা কেউই ইউনিয়নের স্টাফ নন। ফলে তাঁরা ইউনিয়নের সদস্যও নন। তাই আমরা তাঁদের নিয়ন্ত্রণও করি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Chittaranjan Cancer Hospital Kolkata nurse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy