Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

থিমের আঙিনায় সরস্বতী পুজোও

এত দিন দুর্গাপুজো, কালীপুজোয় থিমের বাহার ছিল। এ বার সেই দিকে পা বাড়াতে দেখা যাচ্ছে বীণাপাণির উপাসকদেরও। বহু বছর ধরেই সরস্বতীর মণ্ডপ সেজে উঠত থার্মোকল, দরমার বেড়া, শোলার ফুলে। কিন্তু এ বার পাড়ার ক্লাব হোক কিংবা স্কুলের পুজো, বহু জায়গাতেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নজরে আসছে থিমের মেজাজ। 

হাসি-খুশি: ময়দানে পুজোর আমেজ। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

হাসি-খুশি: ময়দানে পুজোর আমেজ। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০৪
Share: Save:

এ বার কি বদলে যাবে সরস্বতী পুজোর চেনা ছবিও? রবিবার বসন্ত পঞ্চমীর দিন সেই প্রশ্নই তুলে দিল শহর কলকাতা।

এত দিন দুর্গাপুজো, কালীপুজোয় থিমের বাহার ছিল। এ বার সেই দিকে পা বাড়াতে দেখা যাচ্ছে বীণাপাণির উপাসকদেরও। বহু বছর ধরেই সরস্বতীর মণ্ডপ সেজে উঠত থার্মোকল, দরমার বেড়া, শোলার ফুলে। কিন্তু এ বার পাড়ার ক্লাব হোক কিংবা স্কুলের পুজো, বহু জায়গাতেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নজরে আসছে থিমের মেজাজ।

এন্টালির বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব এ বার থিম হিসেবে তুলে ধরেছে ‘গুপি গাইন, বাঘা বাইন’-কে। ভাস্কর সুনীল পাল একাধিক মূর্তিতে ‘গুগাবাবা’-র ভূতের রাজার বরপ্রাপ্তি থেকে বিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে প্রতিমা রয়েছে সাবেক রূপেই।

আগরপাড়ার উষুমপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মণ্ডপ সেজেছে মহারাষ্ট্রের ওয়ারলি চিত্রে। প্রধান শিক্ষক সৌমিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের জনজাতির চিত্রকলা এ বার রূপ পেয়েছে আমাদের পড়ুয়াদের হাতে।’’ এ বার থিম করেছে যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলও। ওই স্কুলের প্রাক্তনী অভীক বড়ালের পরিকল্পনায় শামিল হয়েছিল বর্তমান পড়ুয়ারাও। কাগজ, রঙে ছেলেদের স্কুলের মণ্ডপ সেজেছে ‘নারীশক্তির জাগরণ’-এ। অভীকের নিজের বাড়ির পুজোতেও ‘থিম’ হয়েছে। উত্তর কলকাতার টালা সরকারবাগানের দেবজ্যোতি দে ছোট পরিসরে থিমের মণ্ডপ করতে পারেননি। কিন্তু কুমোরটুলি থেকে থিমের প্রতিমা ঘরে এনেছেন তিনি।

সত্যিই কি তবে বদলে গেল বসন্ত পঞ্চমী? পুজোর ঘরানায় যতই বদলের হাওয়া মালুম হোক না কেন, কলকাতার পথঘাট কিন্তু এ দিন প্রেমের হাওয়ায় মেতেছিল। ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ যতই হুজুগে মাতিয়ে দিক না কেন, বাঙালির চিরাচরিত ‘প্রেম দিবসের’ মেজাজ বদলাতে নারাজ নতুন প্রজন্মের নাগরিকেরাও। তাই সকাল-সকাল অঞ্জলি দিয়ে পথমুখো হয়েছে কিশোর-কিশোরী কিংবা সদ্য তরুণ-তরুণীরা। শিরশিরে হাওয়া আর মিঠে রোদ গায়ে মেখে যৌবনের উত্তাপের ছোঁয়াও নিয়েছেন কেউ কেউ।

আদতে নীল-সাদা-কালো শহরের রং যেন বদলে গিয়েছিল এ দিন। হলুদরঙা শাড়ি, পাঞ্জাবিতে শহর যেন বসন্ত এসে যাওয়ার বার্তাই ছড়িয়ে দিচ্ছিল। সেই বার্তা সকালের দিকে ছিল স্কুল-কলেজের চৌহদ্দিতে। বেলা যত গড়িয়েছে, স্কুল-কলেজের সামনের ভিড় ধীরে ধীরে সরে গিয়েছে গঙ্গার পাড় কিংবা গড়ের মাঠের দিকে। নাগরিক ভিড়ের মাঝেও কেউ কেউ খুঁজে নিয়েছেন এক চিলতে নিভৃতি।

সকাল থেকে সন্ধ্যা, শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিল এমনই নানা টুকরো টুকরো মিঠে প্রেমের ছবি। সকালে দমদম স্টেশনের সামনে দুই কিশোরীর অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছিল না। চেনা মুখ দেখে হাজার ওয়াটের আলো ঝিলিক খেলে গেল তাঁদের মুখে। দুপুরে ময়দানে শুকনো গাছের পাশে দাঁড়ানো কলেজ পড়ুয়ার দলটি যেন উল্লাসে মাতোয়ারা। কলেজের খিচুড়ি নয়, সোজা চিনেপাড়া ঘুরে হাওয়া খেতে চলে এসেছেন তাঁরা। বিকেলে শ্যামবাজারের কাছে এক যুগলকে দেখা গেল, বন্ধ দোকানের সিঁড়িতেই বসে পড়েছেন। সদাব্যস্ত শহরের দিকে কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই তাঁদের।

দিনভর উঁকিঝুঁকি চলেছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে। রোজকার জিনস, স্কার্ট, টপের বদলে বাসন্তী রঙা শাড়ির ছবি ‘#সরস্বতীপুজো’ বলে আপলোড করেছেন পাড়ার যুবতী থেকে সেলেব্রিটি— সক্কলেই। কোনও কোনও স্কুলে আবার এই ফাঁকেই দেখা হয়েছে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে। ব্যস্ত পাড়ায় এমনই আড্ডার পরিসর তুলে ধরেছে গাঙ্গুলিবাগানের বৈতালিক ক্লাব। সকালে খুদেদের হাতেখড়ি ছিল, রাতের পংক্তিভোজনে ছিল পোলাও, মাংসের আয়োজন। প্রতিমাও সেখানে সাবেক ডাকের সাজে সেজেছে।

বাঙালির বসন্ত পঞ্চমী বদলাবে কি না, সেই উত্তর এখনও কালের গর্ভে। তবে চড়া রোদ ও শিরশিরে হাওয়ার যুগলবন্দি বলছে, শহরে বসন্ত এসে গিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Saraswati Puja Theme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE