সকালবেলা গায়ে জল পড়লেই হি-হি করে উঠছে শরীর! গভীর রাতে ট্রেনের গেটে দাঁড়াচ্ছেন না নিত্যযাত্রীরা। সিটে বসলেও জানলা বন্ধ করে দিচ্ছেন। ভোরবেলা প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে অনেকেই গায়ে চাদর কিংবা হাল্কা জ্যাকেট চাপাচ্ছেন।
সাগর থেকে নিম্নচাপের বাধা সরতেই হিমেল হাওয়া ঢুকতে শুরু করেছিল রাজ্যে। নভেম্বরের মাঝামাঝি পেরোতেই মহানগরে জোরালো হয়েছে শীতের আগমনী। গত ক’দিন ১৮-১৯ ডিগ্রির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছিল রাতের তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার এক ধাক্কায় তা নেমে গিয়েছে ১৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
১৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এ সময়ের স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি কম। এবং আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের মতে, এখন সপ্তাহখানেক কলকাতার রাতের তাপমাত্রা এমনই থাকবে। মিলবে শীতের আভাসও।
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, উত্তুরে হাওয়া এবং বঙ্গোপসাগরের যুগলবন্দিতেই শীতের এমন জোরালো আভাস মিলছে মহানগরে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং এ রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা অনেকটাই কমে গিয়েছে। এ দিন শ্রীনিকেতন, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো পশ্চিমাঞ্চলের এলাকাগুলিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। সেখান থেকে উত্তুরে হাওয়া জোরালো ভাবে মহানগরের দিকে বয়ে আসছে। সাগরেও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু দুর্বল। কোনও ঘূর্ণাবর্তও নেই। ফলে জোলো হাওয়া ঢুকতে পারছে না মহানগরে।
গভীর রাতে উত্তুরে হাওয়া কেমন খেল দেখাচ্ছে, তা বুধবার রাতেই টের পেয়েছিলেন এক যুবতী। কর্পোরেট অফিসের নাইট শিফটের মাঝে দফতর ছেড়ে রাস্তায় চা খেতে নেমেছিলেন তিনি। হিমেল হাওয়ার দাপটে কোনও মতে চায়ে চুমুক দিয়েই অফিসের ভিতরে ঢুকে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই প্রশ্ন, শীতের আগমনী না হয় হল! কিন্তু মহানগরে শীত আসবে কবে?
বর্ষাকালের মতো শীতের আসা-যাওয়া নিয়ে কোনও সরকারি ঘোষণা জারি হয় না। নির্দিষ্ট অঞ্চলের তাপমাত্রার পতন দেখে আবহাওয়া দফতর শীত পড়েছে বলে জানায়। আবহবিদেরা জানান, নভেম্বরের মাঝামাঝি মহানগরে তাপমাত্রা ১৬-১৭ ডিগ্রিতে নেমে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। ডিসেম্বর মাসের আগে মহানগরে শীতও পড়ে না। গণেশবাবুর ব্যাখ্যা, কলকাতায় ডিসেম্বরের মাসের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীত পড়তে গেলে রাতের পারদ সেই মাত্রায় নামতে হয়। ‘‘অন্তত ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নামলেও শীত বলে ঘোষণা করা যায়,’’ মন্তব্য আলিপুরের অধিকর্তার।
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের পর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ক্রমশ নামতেই থাকে। ১৫-১৬ ডিগ্রিতে নামার ঘটনা গত এক দশকে আকছার ঘটেছে। ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর মহানগরের তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রিতে নেমেছিল। ফলে সে বার শীত এসেছিল ডিসেম্বরের গোড়াতেই। আবার বহু সময়ই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরে শীত হাজির হয়েছে শহরে।
আবহবিজ্ঞানীদের অনেকের মতে, নভেম্বর থেকে তাপমাত্রার পতন থিতু হওয়ার অর্থ শীতের ভিত মজবুত হচ্ছে। কিন্তু ইদানীং আবহাওয়া যেমন খামখেয়ালি হয়ে উঠছে, তাতে এই ভিত মজবুত হওয়ার তত্ত্ব কতটা খাটবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy