Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Street Dogs

Street dogs: পরিষেবা শূন্য, পথেই পথকুকুরের চিকিৎসা আটকে

খোঁজ করে জানা গেল, এ বছর দোল এবং হোলির দিনে কলকাতা পুরসভার ডগ-পাউন্ডের সঙ্গে যোগাযোগের অভিজ্ঞতা সব চেয়ে খারাপ।

অমানবিক: দোলের পরে এমনই রং মাখা অবস্থায় দেখা মিলেছে বহু পথকুকুরের।

অমানবিক: দোলের পরে এমনই রং মাখা অবস্থায় দেখা মিলেছে বহু পথকুকুরের। নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:১৯
Share: Save:

সারা মুখে রং মাখানো। গায়েও জায়গায় জায়গায় রঙের ছোপ। এই অবস্থায় ফাঁকা রাস্তায় কখনও কোনও বাড়ির দরজার গ্রিলে, কখনও বাতিস্তম্ভে ধাক্কা খাচ্ছে পথকুকুরটি। তাকে ঘিরে দাঁড়ানো লোকজনের কেউ কাছে ঘেঁষতে গেলে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে কামড়াতে যাচ্ছে বটে, কিন্তু কাউকেই কামড়ে উঠতে পারছে না। কারণ, চোখে রং ঢুকে গিয়ে দেখতেই পাচ্ছে না সে। পরে সব চুপচাপ হয়ে গেলেই চিৎকার জুড়ছে করুণ সুরে।

উত্তর কলকাতার গ্যালিফ স্ট্রিট এলাকায় একটি পথকুকুরের এমনই অবস্থা হয়েছিল দোলের দুপুরে। পরিস্থিতি বুঝে স্থানীয় পশুপ্রেমীরা এগিয়ে এলেও কোনও পশু হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি তাঁরা। দিনভর ছোটাছুটি করেও আতঙ্কিত কুকুরটিকে ধরতে না পেরে শেষে একের পর এক ফোন করা হলেও কোথাও থেকে জানানো হয়, কুকুর তুলে নিয়ে যাওয়ার গাড়ি নেই। আবার কোথাও থেকে বলা হয়— দোলের ছুটি চলছে, তাই কিছু করার নেই। একই কথা জানায় সরকারি সংস্থাও!

শেষে এক পশুপ্রেমী নিজের উদ্যোগে স্থানীয় ভাবে কুকুরটির শুশ্রূষার ব্যবস্থা করেন। আপাতত তার অবস্থা অনেকটাই ভাল। কিন্তু পশুপ্রেমী থেকে সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ জানাচ্ছেন, উৎসবের দিনে এমন জরুরি পরিষেবা মেলে না প্রায়ই। অভিযোগ, দূরত্বের অজুহাত দেখিয়ে অনেক সময়েই পৌঁছতে অনীহা দেখায় বহু বেসরকারি সংস্থা। সরকারি সংস্থা আবার ‘পরিকাঠামো নেই’ বলে দায় ঝেড়ে ফেলে।

খোঁজ করে জানা গেল, এ বছর দোল এবং হোলির দিনে কলকাতা পুরসভার ডগ-পাউন্ডের সঙ্গে যোগাযোগের অভিজ্ঞতা সব চেয়ে খারাপ। ফোনে সাহায্য করা সম্ভব নয় জানিয়ে সেখান থেকে বলা হয়, গাড়ি থাকলেও ছুটির দিনে কাজ করার লোক নেই। সেখানকার এক কর্মী বললেন, ‘‘লোক থাকলেও কাজ করবেই বা কী করে! আমাদের ধাপা ডগ-পাউন্ডে পোকা গিজগিজ করছে। সেখানকার বহু কুকুরের টিগ-ফিভার হয়েছে। শুধুমাত্র দোলেই দুশোটিরও বেশি ফোন এসেছিল। সকলকেই বলতে হয়েছে নিরুপায় পরিস্থিতির কথা। ইতিমধ্যে যে কুকুরগুলি রয়েছে, তাদের না সরিয়ে সাফসুতরো না করে আর নতুন কাউকে আনা সম্ভব নয়।’’ যদিও ধাপা ডগ-পাউন্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মানস সোম বললেন, ‘‘এমন কখনও কখনও ঘটে ঠিকই। কিন্তু এটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। মানুষের হাসপাতালেও সমস্যা তৈরি হলে পরিষেবা কিছুটা ব্যাহত হয়।’’

দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি সংস্থায় বার বার ফোন ও মেসেজে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও একটি পথকুকুরকে ভর্তি করানো যায়নি বলে অভিযোগ। কখনও তারা জানিয়েছে, দোলের ছুটি চলছে বলে লোক নেই। কখনও বলেছে, তাদের একটাই গাড়ি, তাই দূরে পাঠানো সম্ভব নয়। আহত কুকুরটিকে নিয়ে যাওয়া হলে ভর্তি করে নেওয়া হবে। বারাসত এলাকার একটি বেসরকারি সংস্থা আর একটি পথকুকুরের অভিভাবককে জানায়, তাদের গাড়িটি বিকল। কুকুরটিকে ধরে পাঠাতে পারলে ভর্তি করে নেওয়া হবে। এমনই এক ভুক্তভোগীর মন্তব্য, ‘‘তিন দিন ধরে ডেকেও কোনও সংস্থা থেকেই সাহায্য পেলাম না। উল্টে কুকুর ধরে দিতে পারবেন এমন ব্যক্তিদের ফোন করে দেখলাম, যেমন খুশি দর হাঁকছেন! টাকা দিতে রাজি হওয়ার পরে এক জন ধরতে এসে এমন কাণ্ড ঘটালেন যে, কুকুরটির মুখ কেটে গিয়ে রক্তারক্তি অবস্থা!’’

এই পরিস্থিতি কেন? পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়ির পোষ্যদের জন্য যেটুকু যা আছে, পথকুকুরদের জন্য তার কিছুই নেই। জরুরি ভিত্তিতে পরিষেবা সত্যিই সমস্যার। সরকারি তৎপরতার পাশাপাশি বড় সংস্থাগুলির বেশি করে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে।’’ দীর্ঘ দিন ধরে পথে কুকুরদের চিকিৎসার কাজ করা স্বর্ণালী ঘোষ যদিও বললেন, ‘‘আদতে করোনা ও লকডাউনের পরে এ জন্য টাকা আসা খুব কমে গিয়েছে। ফলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কাজ হলেও সব সংস্থাই ধুঁকছে। আর পথের কুকুর বিনা চিকিৎসায় পথেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Street Dogs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy