Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

‘ছুটির দিনেও শুধুই প্রতিবাদ মিছিল’! আক্ষেপ বিক্রেতার, হারিয়েছে পুজোর রেশ, ক্রেতার ভিড় নেই উত্তর-দক্ষিণে

আর জি কর-কাণ্ডের জেরে বিষণ্ণতার সুর এবং প্রতিবাদের জোয়ারে এ বছরের পুজোর বাজার আদৌ জমবে কি না, সেই আশঙ্কার কালো মেঘ ঘনাচ্ছে অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের মনে।

হাতিবাগানে পুজোর কেনাকাটার ভিড়।

হাতিবাগানে পুজোর কেনাকাটার ভিড়। ছবি: রনজিৎ নন্দী।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:১৪
Share: Save:

গড়িয়াহাটের ফুটপাতে নেই ক্রেতাদের ধাক্কাধাক্কি। দোকানে দোকানে বিক্রেতাদের সেই চরম ব্যস্ততা উধাও। তার বদলে গলির মুখে দাঁড়ালে বেশ কিছু দূর পর্যন্ত প্রায় ফাঁকা ফুটপাত স্পষ্ট নজরে পড়ছে। ফুটপাতের উপরে সারি সারি দোকানের দু’-একটিতে মাত্র দু’-এক জন করে ক্রেতা দাঁড়িয়ে। কার্যত ফাঁকা বাজারে ব্যবসায়ীদের ‘কম দাম’ বলে হাঁকডাকেও বিশেষ কাজ হচ্ছে না। এরই মধ্যে এক দোকানদার শুধু বললেন, ‘‘কেউ বলবে যে তিন সপ্তাহ পরে মহালয়া? সারা সপ্তাহে তো লোকজন আসছেনই না, ছুটির দিনেও শুধুই প্রতিবাদ মিছিল। কেউ দোকানমুখোই হচ্ছেন না।’’

ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পুজো শুরু হতে আর এক মাসও বাকি নেই। যদিও শহর কলকাতার বাজার ঘুরে এ বার তার আভাস পাওয়া মুশকিল। উল্টে ছুটির দিনগুলিতেও কার্যত ক্রেতাশূন্য ফাঁকা বাজারের ছবিটা মিলিয়ে দিচ্ছে উত্তরের হাতিবাগান থেকে দক্ষিণের গড়িয়াহাটকে। আর জি কর-কাণ্ডের জেরে বিষণ্ণতার সুর এবং প্রতিবাদের জোয়ারে এ বছরের পুজোর বাজার আদৌ জমবে কি না, সেই আশঙ্কার কালো মেঘ ঘনাচ্ছে অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের মনে।

নিউমার্কেটে পুজোর কেনাকাটার ভিড়।

নিউমার্কেটে পুজোর কেনাকাটার ভিড়। ছবি: রনজিৎ নন্দী।

রবিবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় দু’-এক পশলা বৃষ্টিতে গত কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরম কিছুটা কমেছে। কিন্তু তার পরেও হাতিবাগানে ‘বাজার-ভাগ্যের’ বিশেষ বদল হয়নি। ক্রেতাদের ভিড়ে গমগম করার বদলে বরং একের পর এক প্রতিবাদ মিছিলে সরগরম থেকেছে শ্যামবাজার সংলগ্ন এই এলাকা। আর জি কর মেডিক্যাল হাসপাতাল থেকে কাছেই হাতিবাগান চত্বরে এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ গিয়ে দেখা গেল, ফুটপাতের স্টল থেকে শুরু করে বড় দোকান— সর্বত্র জনা কয়েক ক্রেতা ঘোরাঘুরি করছেন। পুজোর আগের কেনাকাটার সেই চেনা ভিড় উধাও। রাস্তাতেও কেনাকাটার জন্য তেমন ক্রেতার দেখা নেই। বিকেলে ফাঁকা দোকানে বসে এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘বাজার দেখে মাঝেমধ্যে তো নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না।’’

একই ছবি গড়িয়াহাটেও। রাস্তার দু’পাশে ফুটপাতের উপরে সারি দেওয়া দোকানগুলিতে ক্রেতাদের ভিড় তেমন নেই। বিকেলে ওই চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। ফলে বাজারে কেনাকাটার জন্য আসা অনেককেই দোকানে ঘোরা বাদ দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হতে দেখা গিয়েছে। পুজোর বিক্রিবাটা নিয়ে প্রশ্ন করতেই গড়িয়াহাটের এক ব্যবসায়ী, পাঁচু সাহা বললেন, ‘‘এই সময়ে বিকেল হলে গলিতে ঢোকা যেত না। রাত ৯টা পর্যন্ত একই রকম ভিড় থাকত। আর এখন যা অবস্থা, মনে হচ্ছে ফুটবল খেলা যাবে!’’ গড়িয়াহাট মোড়ে ভিড় সামলাতে পুলিশের তরফে বুম ব্যারিয়ারের পাশাপাশি, দড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যদিও পুজোর বাজারের ভিড় তেমন না থাকায় সে সবের ব্যবহার করতে দেখা গেল না। কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী শুধু বললেন, ‘‘পুজোর আগে এখানে গাড়ি পার্কিং করতে নাজেহাল অবস্থা হত। এ বছর মিছিল সামলাতে সেই অবস্থা হচ্ছে।’’

গড়িয়াহাট, হাতিবাগানে পুজোর কেনাকাটার ভিড় তেমন চোখে না পড়লেও কিছুটা ভিন্ন ছবির দেখা মিলল নিউ মার্কেটে। রবিবার দুপুরের পর থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে সেখানে। কেনাকাটার ব্যাগ হাতে নিউ মার্কেট চত্বরে ঘুরে অস্মিতা সেনগুপ্ত নামে এক তরুণী বললেন, ‘‘পুজোর মাসখানেক আগে থেকেই কেনাকাটার মাধ্যমে উৎসবের আমেজ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এ বার যা পরিস্থিতি, তাতে সে সব করতে নিজেরই খারাপ লাগছে। তবে বাচ্চারা তো অত বোঝে না, তাই শুধু ওদের জন্য কিছু কেনাকাটা করে নিলাম।’’ যদিও বিকেলের পরে ধর্মতলা চত্বরেও বড় প্রতিবাদ মিছিল বেরোলে তার প্রভাব পড়ে বাজারেও। নিউ মার্কেটের ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসা মৌসম খান সেই মিছিল দেখিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘এখন মানুষের মনে পুজোর রেশমাত্র নেই। শুধু প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Hospital Durga Puja 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE