Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
COVID19

কোভিড-বিধি শিকেয় তুলে দেদার রঙে ভাসল শহর

বিভিন্ন আবাসনের রং খেলার চেহারাটা ছিল সব চেয়ে বেশি বেপরোয়া। মানিকতলার একটি আবাসনে এ দিন ৮০টি ফ্ল্যাটের প্রায় ৩০০ জন একসঙ্গে রং খেলেছেন বলে জানা গিয়েছে।

অসচেতন: বার বার সাবধান করা সত্ত্বেও দোলে করোনা-বিধি মানল না শহর।এনএসসি বসু রোডে চলছে রং খেলা।

অসচেতন: বার বার সাবধান করা সত্ত্বেও দোলে করোনা-বিধি মানল না শহর।এনএসসি বসু রোডে চলছে রং খেলা।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২১ ০৫:০৫
Share: Save:

দূরত্ব-বিধির কিছুই রইল না। মাস্ক পরে থাকারও বালাই নেই। জমায়েত বা ভিড় এড়ানোর যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল, তা-ও রয়ে গেল খাতায়-কলমেই। পরিবারের মধ্যেও আবদ্ধ থাকল না ‘রং মেখে সং’ সাজার বেহিসেবি হুল্লোড়। রবিবারের বেপরোয়া দোল উৎসব কাটল এ ভাবেই। যা দেখে সচেতন নাগরিক থেকে চিকিৎসকদের বড় অংশের প্রশ্ন, ‘‘রং মেখে পথে বেরোনো এই ভিড়কেই দিন কয়েক বাদে হাসপাতালে ভিড় করতে হবে না তো? অতিমারির জেরে ফের শুরু হবে না তো রুজি-রুটির হাহাকার?’’

এমন আশঙ্কা থেকেই দুর্গাপুজো বা ছটপুজোর মতো একাধিক উৎসবে কড়া অবস্থান নিয়েছিল আদালত। লকডাউন-পরবর্তী সময় চললেও ভিড় এড়াতে রীতিমতো তৎপর ছিল পুলিশ-প্রশাসনও। কিন্তু নতুন করে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখন কেন এই তৎপরতা দেখা গেল না, তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। যদিও গত শুক্রবারই রং খেলার নামে জমায়েত বা ভিড় নিষিদ্ধ করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। তার পরেও এ দিন দেদার রং খেলা চলল শহর জুড়ে। সেই সঙ্গেই বাড়ল নেশাগ্রস্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে দাপাদাপি। অভিযোগ, মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য ছিল চোখে পড়ার মতো। কিছু ক্ষেত্রে ধরপাকড়ও চালিয়েছে পুলিশ। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলে অভিযোগ।

শনিবার বেলার দিকে বিভিন্ন অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে রং খেলা শুরু হয়। রবিবার ছুটির দিন হলেও যা বন্ধ ছিল না। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একটি সরকারি অফিসের সামনে স্রেফ রং খেলবেন বলেই জড়ো হয়েছিলেন কয়েক জন। তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। ছিল না ছোঁয়াচ এড়ানোর কোনও রকম চেষ্টাও। তাঁদেরই এক জন নিমতার সুমনা কর্মকার বললেন, ‘‘প্রতি বছর রং খেলাটা অফিসের রীতি। করোনাকে ভয় পেয়ে কত দিন চলবে?’’ বাগবাজারের একটি কলেজের সামনে রং খেলতে জড়ো হওয়া ভিড়টা আবার মিশে গিয়েছিল সদ্য পুড়ে যাওয়া বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘রং খেলার পরে খানা-পিনার ব্যবস্থাও আছে। ভাইরাসের ভয়ে এ জিনিস ছাড়া যাবে না।’’

এর পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বিভিন্ন আবাসনের রং খেলার চেহারাটা ছিল সব চেয়ে বেশি বেপরোয়া। মানিকতলার একটি আবাসনে এ দিন ৮০টি ফ্ল্যাটের প্রায় ৩০০ জন একসঙ্গে রং খেলেছেন বলে জানা গিয়েছে। সেখানকারই বাসিন্দা নিমাই ঘোষের মন্তব্য, ‘‘আজ উৎসব রাত পর্যন্ত চলবে। পরিবারের মধ্যেই রং খেলতে হবে, এমনটা বলা হয়েছে শুনছি। এক আবাসনের বাসিন্দারা কি পরিবার নয়?’’ কামারহাটির একটি রং-উৎসবে নিজের লেখা গান শুনিয়ে এক ভোটপ্রার্থীর আবার মন্তব্য, ‘‘অনেকে এমন রং বদলায়, মুখ আর মুখোশ চেনা যায় না। আমি বলি, করোনার মুখে পড়ার চেয়ে রঙের মুখোশ পরে নেওয়া ভাল। সবটাই লাভলি।’’

চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘এ তো আমরা ভাবতেই পারি না। সাধারণ মানুষ থেকে বিশিষ্ট জন, এত প্রচারের পরেও কারও হুঁশ হল না! আশঙ্কার সময় আসছে।’’ আর এক চিকিৎসক কুণাল সরকারের মন্তব্য, ‘‘প্রথম বারে ভেবেছিলাম, আমরা অনেকের চেয়ে ভাল আছি। কতটা ভাল আছি, পরে তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। এ বারও ভাল আছি ভেবে রং-রুটে গিয়ে সবটাই হারাতে হবে না তো?’’

এই হারানোর কথা তুলেই করোনায় স্বামীহারা, যাদবপুরের দোলা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘এত মৃত্যু দেখেও হুজুগ কমে না? ফের মৃত্যু-মিছিল শুরু হলে কি প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে?’’ মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘‘প্রশাসনের বাঁধন না থাকলে যে স্রেফ স্রোতে ভাসাই ভবিতব্য, তা ফের প্রমাণ করল এ দিনের দোল উৎসব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Corona coronavirus COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy