Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

‘সুরক্ষিত’ নম্বর প্লেটের নিরাপত্তা যাচাইয়ে কমিটি

সর্ষের মধ্যেই ভূত! ‘হাই সিকিওরিটি রেজিস্ট্রেশন প্লেট’ (এইচএসআরপি) লাগিয়ে চোরাই এবং বেআইনি গাড়ি ধরার ভাবনা ছিল সরকারের। সেই এইচএসআরপি তৈরির ক্ষেত্রেই বড়সড় অনিয়মের অভিযোগ উঠল। যার জেরে এখন প্রশ্নের মুখে ওই প্লেটের মান এবং তা জাল করা আটকানোর পদ্ধতিই।

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০২:১০
Share: Save:

সর্ষের মধ্যেই ভূত!

‘হাই সিকিওরিটি রেজিস্ট্রেশন প্লেট’ (এইচএসআরপি) লাগিয়ে চোরাই এবং বেআইনি গাড়ি ধরার ভাবনা ছিল সরকারের। সেই এইচএসআরপি তৈরির ক্ষেত্রেই বড়সড় অনিয়মের অভিযোগ উঠল। যার জেরে এখন প্রশ্নের মুখে ওই প্লেটের মান এবং তা জাল করা আটকানোর পদ্ধতিই। এই পরিস্থিতিতে পরিবহণ দফতরের তিন কর্তাকে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে পুরো বিষয়টির তদন্ত এবং এইচএসআরপি-র মান বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।

কলকাতার রাস্তায় এখনও দশ হাজারেরও বেশি বেআইনি অটো চলে বলে বারবারই অভিযোগ উঠেছে। প্রতি ক্ষেত্রেই অধুনা জেলবন্দি পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র আশ্বাস দিয়েছেন, আইনি অটোয় হাই সিকিওরিটি নম্বর প্লেট বসানো হলেই বেআইনি অটো ধরা সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু অনিয়মের এই অভিযোগ ওঠার পরে দেখা যাচ্ছে, যে ভাবে এইচএসআরপি-ও নকল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তাতে শুধু অটো নয় বেআইনি যে কোনও গাড়ি ধরার সম্ভাবনা ক্রমশই কমছে। নিম্ন মানের হাই সিকিউরিটি নম্বর প্লেট নকল করাও সহজ। সে ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ-সহ বিভিন্ন ধরনের দুষ্কর্মের থেকে নিরাপত্তার প্রশ্নেও তা যথেষ্ট ভয়াবহ বলেই মনে করা হচ্ছে।

রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, শুধু এ রাজ্যেই নয়, দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোড়ন শুরু হয়েছে। দফতরের এক কর্তা জানান, বছরখানেক আগে নিম্ন মানের হাই সিকিওরিটি নম্বর প্লেট লাগানোর বিষয়টি প্রথম গোচরে আসে মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি এবং পঞ্জাবের পরিবহণ দফতরের। তখন ওই তিন সরকার এইচএসআরপি-র দায়িত্বে থাকা ‘উৎসব সেফটি সিস্টেম প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে এক সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করে। এর পরেই ‘অল ইন্ডিয়া অ্যান্টি টেররিস্ট ফ্রন্ট’-এর চেয়ারম্যান মনিন্দর সিংহ বিট্টার আবেদনের ভিত্তিতে সব রাজ্যকেই বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

তার আগেই অবশ্য এ রাজ্যে দু’টি অঞ্চলে ভাগ করে হাই সিকিওরিটি নম্বর প্লেট লাগানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। একটি অঞ্চলে (জোন এ) রয়েছে কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মালদহ, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর। অন্য অঞ্চলটিতে (জোন বি) রয়েছে দুই ২৪ পরগনা ও মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া। রাজ্য পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম দু’টি জোনের জন্য দু’টি সংস্থাকে হাই সিকিওরিটি নম্বর প্লেট সরবরাহ করার দায়িত্ব দিয়েছিল। এর মধ্যে জোন বি-র দায়িত্বে থাকা একটি সংস্থা অন্য রাজ্যের কালো-তালিকাভুক্ত সংস্থাটির কাছ থেকেই ওই নম্বর প্লেট কিনছে জেনেই নড়েচড়ে বসে এ রাজ্যের পরিবহণ দফতর। এর পরেই পুরো বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন জনের একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে দফতরের এক যুগ্মসচিব ছাড়াও রয়েছেন এক জন আইন-অফিসার এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের এক কর্তা।

পরিবহণ দফতরের এক কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমাদের রাজ্যে কোনও অনিয়ম ধরা পড়েনি। ‘উৎসব সেফটি সিস্টেম’ নামের সংস্থাটি অসম এবং হিমাচল প্রদেশ— দু’টি জায়গা থেকে নম্বর প্লেট নিচ্ছিল। এর মধ্যে অসমের থেকে নেওয়া নম্বর প্লেটটি নিম্ন মানের। আমাদের ওখান থেকে একটিও নম্বর প্লেট আসেনি।’’ ওই কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পরে আমরা দেশের অটোমোবাইল রিসার্চ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এআরএআই)-কেও খবর দিয়েছিলাম। তারাও এসে নম্বর প্লেট পরীক্ষা করে নিঃসংশয় হয়ে গিয়েছে।’’

তার পরেও কমিটি গড়া হল কেন?

ওই কর্তার জবাব, ‘‘বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। এর সঙ্গে নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িয়ে। তাই সরকার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। সে কারণেই কমিটি গড়ে পুরো বিষয়টিতে নজরদারি করতে চাইছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE