ডায়মন্ড হারবারে সেজে উঠছে নতুন কফিহাউস। —নিজস্ব চিত্র।
জানলার ও-পাশে কলেজ স্ট্রিট বা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, হিন্দু স্কুল নেই। তার বদলে গঙ্গা। টেবিলে চলকে পড়া ইনফিউশন বা কফিহাউস-ছাপ চিকেন ওমলেট, ফ্রাই, কবিরাজি। এমন স্বপ্নও আর অধরা নয়। কলকাতার কফিহাউসের আমেজ শ্রীরামপুর, ডায়মন্ড হারবারের গঙ্গাতীরেও পাড়ি দিচ্ছে। কলেজ স্ট্রিটের ‘কফিহাউস মডেল’-এ ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারও হাত দিয়েছে। নিউ টাউনে হিডকোর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কফিহাউস রমরমিয়ে চলছে। কিন্তু কোভিড-উত্তর আর্থিক সঙ্কটের আবহে কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসের জেলা-অভিযান বা অন্যত্র ডানা মেলার কাহিনি খানিকটা উলটপুরাণ। অথচ দীর্ঘ দিন ধরেই কফিহাউসের খাবারের মান পড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগও শোনা যায়। তবু কর্মচারী সমবায়ের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানো কফিহাউসের ডায়মন্ড হারবার, শ্রীরামপুর যাত্রা অনেককে ভুল প্রমাণ করছে।
১৯৪১ সালে সুভাষচন্দ্রের মহানিষ্ক্রমণের মাসখানেকের মধ্যে কলকাতার সাবেক অ্যালবার্ট হলে জন্ম কফিহাউসের। অল্প দিনেই তা বাঙালির সংস্কৃতি জগতের একটি তীর্থক্ষেত্র বা সদ্য লায়েক ছেলেমেয়েদের জন্য রোমাঞ্চকর পটভূমি হয়ে ওঠে। আদি পর্বে কফিহাউসের কর্ণধার ছিল ইন্ডিয়ান কফি বোর্ড। ১৯৫৮ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের সহায়তায় কফিহাউস পরিচালনার ভার নেয় কর্মচারীদের সমবায়। তখনও কফিহাউস তল্লাটের লিজ় মালিক ছিল কফি বোর্ডই। ১৯৯৬ নাগাদ লিজ়ের মেয়াদ ফুরোলে কফিহাউস রক্ষায় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তৎপরতায় তা কিনে নেয় রাজ্য সরকার। পরিচালনা ভার সমবায়েরই হাতে থাকে। পাঁচ বছর অন্তর তাদের ভোটাভুটি চলে। কোভিডের জন্য সমবায়ের ভোট পর্যন্ত ভেস্তে যেতে বসেছিল। নির্দিষ্ট সময়ের এক বছর বাদে সেই ভোট হয়েছে।
‘ইন্ডিয়ান কফি ওয়ার্কার্স কোঅপারেটিভ সোসাইটি’র নবনির্বাচিত সম্পাদক সরফরাজ আহমেদ বলছিলেন, “কিছুটা লাভের মুখ দেখছি বলেই নতুন শাখার কথা ভাবতে পারছি! কফিহাউস রক্ষার এটাই রাস্তা।” খাবারের মান রক্ষাতেও তিনি মাছ, মাটনের সরবরাহকারী বদলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে গরমের মরসুমে ভাল ধাক্কা খেতে হয়ে়ছে। কফিহাউসের তেতলায় কিছু টেবিল বাড়িয়ে প্রায় শ’খানেক টেবিল বসিয়েছেন সরফরাজ। ভবিষ্যতে কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসের কিছু অংশে অন্তত এসি বসানোর ইচ্ছে আছে। কিন্তু যাদবপুর কফিহাউস চলছে কোনও মতে। শ্রীরামপুরে কফিহাউস শুরু হয়েছে গত ডিসেম্বরে।
ডায়মন্ড হারবার কফিহাউস শুরু হচ্ছে খান ৩০ টেবিল নিয়ে। নতুন শাখার সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগ করবে কলেজ স্ট্রিট কফিহাউস। তাদের তিন হেঁশেল কর্মী ডায়মন্ড হারবারে রান্না শেখাচ্ছেন। ডায়মন্ড হারবার থানার পাশে তেতলায় কফিহাউসে এসি অংশ থাকছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নতুন কফিহাউসের পথ চলা শুরু। মালিক নুর ইসলাম লস্কর বললেন, “বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতার কফিহাউসে অনেক গিয়েছি। সুযোগ পেয়ে তা ডায়মন্ড হারবারে নিয়ে এলাম!” পর্যটনের হাত ধরে কফিহাউসেরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy