Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘আমাদের মারা? এ বার তোমরা বুঝবে’

চড়া রোদে দাঁড়িয়ে তখন ভাবছি, এইটুকু মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাব? ডাক্তারবাবুদের অনেক করে বললাম, একটি বার ঢুকতে দিন। মেয়েটার অপারেশন হয়েছে। যদি ডাক্তারবাবুরা বলে দেন মেয়েকে দেখবেন না, তা হলে ফিরে যাব।

অসহায়: একরত্তি মেয়েকে নিয়ে সায়নারা ও নাসিরুল। মঙ্গলবার, এন আর এসে। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: একরত্তি মেয়েকে নিয়ে সায়নারা ও নাসিরুল। মঙ্গলবার, এন আর এসে। নিজস্ব চিত্র

সায়নারা বিবি (সদ্যোজাত মেয়ের মা)
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০৩:৩১
Share: Save:

আমাদের বাড়ি মুর্শিদাবাদের নিউ ফরাক্কায়। সপ্তাহ তিনেক আগে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আমার একটা মেয়ে হয়। জন্মানোর পরে ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, ওর মলদ্বারে সমস্যা রয়েছে। পায়খানা করতে অসুবিধা হতে পারে। ওঁরাই অপারেশন করে জায়গাটা ঠিক করে দেন। পাঁচ দিন পরে আমাকে ও মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার সময়ে বলেছিলেন, দু’সপ্তাহ পরে আবার দেখাতে আসতে। সেই মতো স্বামী নাসিরুল শেখ আমাদের নিয়ে তখন বাড়ি চলে যান।

ডাক্তারবাবুদের কথা মতো গত শনিবার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। সঙ্গে স্বামীও ছিলেন। কিন্তু এসে শুনলাম, যে ডাক্তার অপারেশন করেছিলেন, তিনি নেই। অগত্যা ফিরে যাই। এই গরমে মঙ্গলবার সকালে আবার মেয়েটাকে নিয়ে আসি। এসে দেখি, হাসপাতালের গেট বন্ধ। খোঁজ নিয়ে আমার স্বামী জানতে পারেন, ডাক্তারবাবুরা বিক্ষোভ করছেন। কাউকেই নাকি ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

চড়া রোদে দাঁড়িয়ে তখন ভাবছি, এইটুকু মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাব? ডাক্তারবাবুদের অনেক করে বললাম, একটি বার ঢুকতে দিন। মেয়েটার অপারেশন হয়েছে। যদি ডাক্তারবাবুরা বলে দেন মেয়েকে দেখবেন না, তা হলে ফিরে যাব। সব শুনে বোধহয় ওঁদের দয়া হল। কাকে এক জন যেন বললেন, ‘‘এক বার ঢুকতে দে। কেউ তো নেই। কাকে আর দেখাবে? ফিরেই তো যাবে।’’

ওঁরা গেট একটু ফাঁক করতেই মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঢুকে পড়লাম। ভিতরে গিয়ে এক জায়গায় দেখলাম, পাখা চলছে। ভাবলাম, সেখানে খানিক ক্ষণ জিরিয়ে নিই। ছায়া রয়েছে। মেয়েটাকে বুকের দুধও একটু খাইয়ে নিতে পারব। একটা প্লাস্টিক বিছিয়ে তার উপরে কাঁথা দিয়ে মেয়েকে শুইয়ে রাখলাম।

কিন্তু কাকে বোঝাব, ডাক্তার না দেখালে মেয়েটার মলদ্বারে সংক্রমণ হয়ে যাবে। সারা দিন ধরে হাসপাতালের সর্বত্র মেয়েটাকে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছি। সব জায়গা থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। ডাক্তারবাবুরা খালি বলছেন, ‘‘আমাদের মারা? এ বার তোমরা বুঝবে। কোনও চিকি‌ৎসা করব না।’’

কী যে করব, বুঝেই উঠতে পারছি না। আমার স্বামী যে বেরিয়ে একটু খাবার কিনে আনবেন, তারও উপায় নেই। এক বার বেরিয়ে গেলে তো আর ঢুকতে পারব না। অতটুকু মেয়ের যে কী হবে, ঈশ্বরই জানেন!

অন্য বিষয়গুলি:

Protest Violence NRS Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy