(বাঁ দিক থেকে) ধৃত আজিজুর রহমান (বাঁ দিকে) হাতুড়ে চিকিৎসক ও কাশ্মীরা বিবি। —নিজস্ব চিত্র
চুক্তি হয়েছিল আট লক্ষ টাকার। তিন লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা হাতে পেয়েও গিয়েছিল সে। মাত্র চার হাজার টাকা খরচ করলেই বাকি টাকাটা আত্মসাৎ করা যাবে। এ কথা ভেবেই এক ভুয়ো চিকিৎসককে দিয়ে ২৬ সপ্তাহের গর্ভস্থ ভ্রূণকে হত্যা করিয়েছিল গর্ভদাত্রী মা (সারোগেট মাদার)। পরে তথ্য-প্রমাণ লোপাট করতে নাম ভাঁড়িয়ে সেই গর্ভদাত্রী মা-ই ভর্তি হয়েছিল ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিউ আলিপুর থানার সারোগেসি-প্রতারণার পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইতিমধ্যেই জেল হেফাজতে রয়েছে ওই গর্ভদাত্রী মা কাশ্মীরা মোল্লা। গ্রেফতার করা হয়েছে ডায়মন্ড হারবার মন্দিরবাজার এলাকার গোপাল মালিক নামে ওই ভুয়ো চিকিৎসককে। গোপালের সঙ্গে কাশ্মীরার পরিচয় করিয়ে দেওয়ায় জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে আজিজুর রহমান নামে আর এক জনকেও। পুলিশ জানিয়েছে, গোপাল উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিন বছর ওটি-কর্মী হিসেবে কাজ করেছে সে। সেই বিদ্যেতেই সে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী দেখত। মন্দিরবাজার এলাকায় নিজের ছয় কামরার বাড়িতে আট শয্যার একটি হাসপাতালও বানিয়েছিল।
পুলিশের দাবি, সেখানেই শনিবার পর্যন্ত অন্তত ১৫০০ জনের অস্ত্রোপচার করেছে সে। সেখানেই ভর্তি হয়েছিল কাশ্মীরা। গত ১০ ডিসেম্বর বেপাত্তা হয়ে যায় কাশ্মীরা। ধরা পড়ার পরে পুলিশকে কাশ্মীরা জানায়, পুকুরে স্নান করতে গিয়ে পড়ে যাওয়ায় তার গর্ভপাত হয়ে গিয়েছে। সে ভ্রূণটিকে জলে ফেলে দিয়েছে। যদিও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, ২৬ সপ্তাহের মাথায় গর্ভপাত হলে কারও সাহায্য ছাড়া কারও পক্ষেই ভ্রূণ শরীরের বাইরে বার করা সম্ভব নয়।
কাশ্মীরার মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান ধরে পুলিশ নিশ্চিত হয়, যা ঘটার ১১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারির মধ্যে ঘটেছে। তখন কাশ্মীরার মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান ছিল মথুরাপুরের তিওয়ানি নামে একটি গ্রামে। সেখানেই তার বাড়ি। ১৪ থেকে ১৭ ডিসেম্বর কাশ্মীরার টাওয়ারের অবস্থান ছিল মন্দিরবাজারের সদাশিবপুর। তার পরে ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি তা ছিল ডায়মন্ড হারবার শহরে।
সেই সূত্রে ডায়মন্ড হারবার শহরে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে মীনা হালদার নামে গর্ভে মৃত ভ্রূণ নিয়ে ১৭ জানুয়ারি ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল কাশ্মীরা। ১৯ জানুয়ারি সেখান থেকে ছুটি পায় সে। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাডমিশন স্লিপে লেখা ছিল, ‘গর্ভে মৃত ভ্রূণ থাকায় মীনা হালদারের (আদতে কাশ্মীরা) ক্রমাগত রক্তপাত হওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রক্তপাত একেবারে বন্ধ ছিল।’ পুলিশের ধারণা হয়, ১৪ থেকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মন্দিরবাজারের সদাশিবপুরে কী ঘটেছিল, সেই রহস্য সমাধান করলেই সবটা জানা যাবে।
সদাশিবপুরে ছোট-বড় বিভিন্ন হাসপাতাল চষে ফেলে পুলিশ। শেষে মথুরাপুরের বিজয়গঞ্জ বাজারের কাছে এক ফল বিক্রেতা কাশ্মীরার ছবি দেখে চিনতে পারেন। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘ওই ফল বিক্রেতা জানান আজিজুর রহমান নামে হাসপাতালে কাজ করা এক যুবক কাশ্মীরাকে নিয়ে গত জানুয়ারির মাঝামাঝি পাড়ায় ঘুরছিল। সেই সূত্রেই আজিজুরকে গ্রেফতার করা হয়। আজিজুরই ওই ভুয়ো ডাক্তারের কাছে আমাদের নিয়ে যায়। কাশ্মীরা পরিবারের সমস্যার কথা বলে বাচ্চা নষ্ট করতে চেয়েছিল বলে আজিজুর দাবি করেছে।’’
মন্দিরবাজার এলাকায় ওই ভুয়ো চিকিৎসক ‘গোপাল ডাক্তার’ নামে পরিচিত। তার হাসপাতালের নাম ‘মাতৃ সেবাসদন’। গোপালকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি উদ্ধার হয় কোনও রকম কাগজপত্র ছাড়াই মজুত রাখা প্রচুর ওষুধ। পুলিশের দাবি, ‘‘গোপাল জেরায় বলেছে, বহু মহিলাকেই সে এ ভাবে সাহায্য করে থাকে। কাশ্মীরার কাছ থেকে তার চার হাজার টাকা পাওয়ার কথা ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy