ছবি: সংগৃহীত
রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো এবং রাতের অনুষ্ঠানের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করল জাতীয় পরিবেশ আদালত। বুধবার রবীন্দ্র সরোবের পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সেখানে কোনও পুজো ও নৈশালোকে অনুষ্ঠান করা যাবে না। এ বার থেকে কোনও নির্মাণ করতে হলে জাতীয় পরিবেশ আদালতের অনুমতি নিতে হবে। কোনও মেরামতির কাজ করতে হলেও সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা কেএমডিএ-র অনুমতি দরকার হবে।
এই নির্দেশের পরে মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের অনেকেই বলছেন, ছটপুজো ও রাতে আইএসএল ম্যাচ নিয়ে অভিযোগ ছিল পরিবেশকর্মীদের। বিশেষত, ছটপুজো ঘিরে শব্দ ও প্লাস্টিক দূষণের অভিযোগ ভূরি ভূরি। অবশেষে পুজো ও নৈশালোকে অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করে আদালতের রায় কার্যত সেই অভিযোগে সিলমোহর দিল। আদালতের এমন নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীদের অনেকেই। তাঁরা বলছেন, বারবার বলা সত্ত্বেও প্রশাসন কিছুই করেনি। শেষে আদালতই তাঁদের আর্জি শুনেছে।
কেএমডিএ-র কৌঁসুলি পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশ রক্ষার উপায় নিয়ে ছ’মাসের মধ্যে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দিতে বলা হয়েছে। এ কাজে সাহায্য নিতে বলা হয়েছে ওই সরোবরের পরিবেশ রক্ষায় আদালতের নিযুক্ত কমিটির বিশেষজ্ঞদের। মামলার আবেদনকারী তথা পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানান, দিনের বেলা খেলা হলেও বাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাশ টানতে বলা হয়েছে গাড়ি পার্কিং এবং শব্দে।
কলকাতার এই সরোবর প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট নয়। কিন্তু মহানগরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় এর ভূমিকা অপরিসীম। জাতীয় হ্রদ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে এই সরোবরকে। কিন্তু দূষণের জেরে এখানকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ করছিলেন পরিবেশকর্মীরা। শব্দ এবং বাজির দূষণে সরোবরের পক্ষীকুলও যারপরনাই বিপদে পড়েছিল। এক পক্ষীপ্রেমীর কথায়, এক সময়ে শীতে পরিযায়ী পাখির দেখা মিলত সরোবরে। কিন্তু গত কয়েক বছরে তাদের সংখ্যা কমেছে। জলে প্লাস্টিক-সহ নানা বর্জ্য ফেলায় কচ্ছপ, মাছ এবং জলচর পাখিরা বিপদে পড়েছে। পাখিরা চোরাশিকারিদের কবলে পড়েছে, এমন অভিযোগও বিরল নয়।
এই অভিযোগ নিয়েই জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হন সুভাষবাবু। সেই মামলায় সরোবরের দূষণ সরেজমিন খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়ে আদালত। কমিটি সূত্রে খবর, সরোবরের হাল যে ভাল নয়, সেটাই জানানো হয়েছিল আদালতকে। কী ভাবে তার মোকাবিলা করা যায়, ৩০০ পাতার রিপোর্টে সেই উপায়ও বাতলানো হয়েছিল।
সুভাষবাবুর অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছিল লেক চত্বরে থাকা ক্লাবগুলি। এ দিন রায়ে বলা হয়েছে, ক্লাবগুলির জন্য কেএমডিএ নির্দেশিকা জারি করবে ও তা মানা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে নিয়মিত নজরদারি রাখা হবে। সুভাষবাবু জানান, প্রাতর্ভ্রমণ ও সান্ধ্যভ্রমণকারী বাদে লেকে আসা লোকেদের কাছ থেকে প্রবেশ মূল্য নিতে বলা হয়েছে। এই সব কাজের জন্য ৪ জানুয়ারির মধ্যে কেএমডিএ-র থেকে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ চাওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy