তিন দিনের মধ্যেই বিজেপি-কে জবাব পাঠিয়ে দিল নবান্ন। —ফাইল চিত্র।
নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে গেরুয়া হাওয়া তৈরি করতে রাজ্যের ৫টি প্রান্ত থেকে ৫টি রথযাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। ইতিমধ্যেই ৪টি রথযাত্রার সূচনা করতে কবে কোথায় জেপি নড্ডা ও অমিত শাহ আসবেন তার ঘোষণাও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও রাজ্য সরকারের অনুমতি মেলেনি। গত ১ ফেব্রুয়ারি ৫টি রথযাত্রার জন্য অনুমতির আবেদন জানিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে চিঠি পাঠায় বিজেপি। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লেখেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিজেপি চেয়েছিল, কেন্দ্রীয় ভাবে ৫টি রথযাত্রার অনুমতি দিয়ে দিক নবান্ন। কিন্তু তা হয়নি। তবে অনুমতি নাকচ না করলেও বুধবার নবান্নের তরফে বিজেপি-কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে যেখানে রথযাত্রা হবে, সেখানকার স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকেই অনুমতি নিতে হবে।
রথযাত্রার অনুমতি না দিলে বিজেপি আদালতের দ্বারস্থ হবে বলে মঙ্গলবারই জানিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এখন নবান্নের চিঠির পরে গেরুয়া শিবির সেই পথেই হাঁটবে নাকি স্থানীয় স্তরে অনুমতির আবেদন করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের ঘোষণা মতো সূচি মেনেই ‘পরিবর্তন যাত্রা’ হবে। তবে প্রশাসনিক অনুমতির জন্য কী কী করা হবে, তা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি দল সিদ্ধান্ত নেবে।’’
এখনও পর্যন্ত বিজেপি যা ঠিক করেছে, তাতে ৬ ফেব্রুয়ারি বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা নবদ্বীপে প্রথম রথযাত্রার সূচনা করবেন। ৯ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রাম ও তারাপীঠ থেকে নড্ডা আরও দু'টি এবং ১১ ফেব্রুয়ারি কোচবিহারে অমিত শাহ একটি রথযাত্রার সূচনা করবেন। কাকদ্বীপ থেকে কলকাতা জোনের যে রথটি বেরোবে, সেটির সূচনা কবে হবে, তা অবশ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। যদিও নবান্নে পাঠানো আবেদনে বিজেপি যে সূচি জানিয়েছে, তা কিছুটা আলাদা। সেখানে বলা হয়েছে, ৬ ফেব্রুয়ারি নবদ্বীপে রথযাত্রার সূচনার পর তা নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ ঘুরে শেষ হবে ব্যারাকপুরে। ৮ ফেব্রুয়ারি কোচবিহার এবং কাকদ্বীপ থেকে আরও দু’টি রথযাত্রার সূচনা করার কথা শাহের।
কোচবিহারের রথযাত্রা উত্তরবঙ্গ ঘুরে শেষ হবে মালদহে। আর কাকদ্বীপ থেকে শুরু হওয়া রথযাত্রা দক্ষিণ ২৪ পরগনা ঘুরে শেষ হবে কলকাতায়। এ ছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রাম এবং তারাপীঠ থেকে আরও দু’টি রথযাত্রা শুরু হবে। ঝাড়গ্রামের রথ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হুগলি ঘুরে পৌঁছবে হাওড়ায়। তারাপীঠের রথ বীরভূম, বর্ধমান, আসানসোল, বাঁকুড়া ঘুরে শেষ হবে পুরুলিয়ায়। প্রতিটি যাত্রার জন্য ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে বলেও নবান্নকে জানায় বিজেপি। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ‘পদযাত্রা’ ও ‘রথযাত্রা’ করে বলে জানিয়ে নবান্নকে পাঠানো চিঠিতে বিজেপি এর জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়েছিল। বুধবার নবান্ন জানিয়ে দিল, কেন্দ্রীয় ভাবে রাজ্য প্রশাসনের কাছে নয়। স্থানীয় অর্থাৎ যেখানে যেখানে ওই যাত্রা হবে, সেখানকার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দফতরের কাছেই অনুমতির আবেদন জানাতে হবে।
প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও রথযাত্রার পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯-এর ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ নামে সেই যাত্রার পরিকল্পনা থাকলেও, তা শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায়। প্রথমত, রথযাত্রায় রাজ্য প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি। পরে আদালতের নির্দেশে যাত্রাভঙ্গ হয়। সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে বিজেপি-কে নবান্ন চিঠি পাঠানোর দিন বুধবারই রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘গত বার আদালতের নির্দেশে রথযাত্রা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তার মানে বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। ওঁরা আমাদের মুখ্যসচিবের সঙ্গে সরকারি ভাবে যোগাযোগ করেছেন। এখন এই বিষয়টি আদালতে যেতে পারে তাই এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য না করাই ঠিক হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy