পুলিশের দাবি, ধৃত জেরায় দোষ কবুল করলেও দাবি করেছেন, মেরে ফেলার উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর। প্রতীকী ছবি
বৈবাহিক সম্পর্কের জটিলতা এবং সেই থেকে তীব্র রাগ। এই দু’য়ের জেরেই ঠাকুরপুকুরে এক ব্যক্তির হাতে দূর সম্পর্কের আত্মীয় এক যুবকের খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রকার নিশ্চিত পুলিশ। গত দু’দিন ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে বৃহস্পতিবার ফের আদালতে তোলা হয়। অর্ণব দাস নামে বছর একান্নের ওই ব্যক্তিকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশের দাবি, ধৃত জেরায় দোষ কবুল করলেও দাবি করেছেন, মেরে ফেলার উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর।
গত মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবার রোডে দেবজিৎ দাস নামে বছর ছাব্বিশের এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ গিয়ে জানতে পারে, স্ত্রীর সঙ্গে ওই যুবকের সম্পর্ক রয়েছে, এই সন্দেহে অর্ণব তাঁকে মারধর করেছেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ অর্ণবকে গ্রেফতার করে। তাঁকে জেরার পাশাপাশি কথা বলা হয় দু’জনের পরিবারের সঙ্গে। তাতেই পুলিশ জানতে পারে, ১৪ বছর আগে দেখাশোনা করে অর্ণবের বিয়ে হয়। স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বয়সের পার্থক্য প্রায় ১৮ বছর। বিয়ের দু’বছরের মাথায় তাঁদের একটি কন্যাসন্তান হয়। জানা যায়, অর্ণব এবং তাঁর স্ত্রীর মধ্যে গোলমাল লেগেই থাকত। অর্ণব শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাতেন বলে অভিযোগ স্ত্রীর। সম্পর্কের শীতলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, অর্ণবের স্ত্রীর সঙ্গে এক দূর সম্পর্কের ভাইয়ের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। ২০১৫ সালে সে কথা জানাজানি হতে অত্যাচার আরও বাড়ে বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন অর্ণবের স্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘রাতের পর রাত মার খেয়েছি। গলায় দড়ি বেঁধে জানলার সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে মারা হত। গরমের মধ্যে দরজা-জানলা বন্ধ করে আলো-পাখা নিভিয়ে বেঁধে রেখে যাওয়া হত।’’
এক সময়ে অর্ণবের স্ত্রী এক মাসির বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। অর্ণব তাঁকে বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে আসতে চান। এর পরে দুই বাড়ির কথাবার্তায় ঠিক হয়, শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও অর্ণবের স্ত্রী এক ঘরে থাকবেন না। দোতলায় থাকার ব্যবস্থা হয় অর্ণবের স্ত্রী এবং মেয়ের। তিন তলায় থাকতেন অর্ণব। তখন থেকেই অর্ণবদের বাড়িতে যাতায়াত বাড়ে দেবজিতের। অর্ণবের বড়দা বিপ্লবের স্ত্রীর খুড়তুতো ভাই হন তিনি। অর্ণবকে কাকা বলে ডাকতেন। অর্ণবের স্ত্রী দাবি করেছেন, অত্যাচারে বাধা হয়ে দাঁড়াতেন দেবজিৎ। ব্যাপারটিকে ভাল ভাবে নেননি অর্ণব।
পুলিশ জেনেছে, গত ১১ অগস্ট অর্ণবের স্ত্রীর পরিবার পুরী বেড়াতে যায়। দেবজিৎও যান। সেখানেও দু’জনের কথা কাটাকাটি হয়। অর্ণবের স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছেন, ১৫ অগস্ট কলকাতায় ফিরে দেবজিৎ যাতে আর তাঁদের বাড়িতে না ঢোকেন, সেই নির্দেশ দেন অর্ণব। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেবজিৎকে দেখে সে কথাই বলতে যান অর্ণব। অভিযোগ, তখন দেবজিতের বুকে তিনি ঘুষি মারেন। পরে অর্ণব বাড়িতে এসে লুকিয়ে রাখা একটি তরোয়াল নিয়ে যেতে চান বলে অভিযোগ। কোনও মতে স্ত্রী তাঁকে আটকান। ইতিমধ্যে বুকে ও হাতের এক দিকে যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় দেবজিৎ রাস্তায় বসে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ তরোয়ালটি উদ্ধার করেছে।
লালবাজারের হোমিসাইড শাখার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘রেগে গেলে ওই ব্যক্তির মাথার ঠিক থাকত না। রাগের জেরেই অতীতে বহু কাণ্ড ঘটিয়েছেন। ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার পরে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। তবে এখন অনুশোচনায় ভুগছেন ধৃত।’’ এ দিন অর্ণবের স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটাকে ভাল করে মানুষ করার জন্যই আমি শ্বশুরবাড়িতে থেকে গিয়েছি। ওই ঘটনার পর থেকেই তার জ্বর। কী খাওয়াব, কী ভাবে চলবে এখন, তা-ই বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy