অপেক্ষা। শনিবার, পার্ক স্ট্রিটের এক বই বিপণির সামনে। — দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বয়স বেড়েছে বেশ কিছুটা। গোল ফ্রেমের চশমা আর বুদ্ধিদীপ্ত চোখের সেই কিশোর এখন তিন ছেলেমেয়ের বাবা। ঠিক কতটা পাল্টে গিয়েছে সেই বিস্ময় বালক? তার ম্যাজিক কি এখনও অটুট? অপেক্ষায় দাঁড়ি পড়তে চলেছে আজই। শহরের আকাশে ফের চক্কর কাটছে উড়ন্ত ঝাঁটা! অধীর আগ্রহে যার অবতরণের অপেক্ষায় দিন গুনছিল ‘মাগ্ল’রা।
বছরের শুরুতেই জানা গিয়েছিল, ৩১ জুলাই চিত্রনাট্যের আকারে প্রকাশিত হবে হ্যারি পটার সিরিজের আট নম্বর বই ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য কার্সড চাইল্ড’। চিন্তায় ছিলেন পাঠকেরা। কারণ, নতুন গল্পটি উপন্যাস আকারে প্রকাশিত না হয়ে দু’টি ভাগে মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল, তা-ও আবার লন্ডনের মতো শহরে!
হ্যারির গল্প পড়তে পড়তে যাঁরা বড় হয়েছেন, তেমনই এক জন সোমা পুরকায়স্থ। বহুজাতিক সংস্থার কর্মী। জানালেন, হগওয়ার্টস যুদ্ধের ১৯ বছর পরের গল্প জানতে তিনি লন্ডন যেতেও প্রস্তুত ছিলেন। বই হাতে পাওয়ার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আনাগোনা বন্ধ রাখবেন তিনি। পড়া শেষ হওয়ার আগেই যদি কেউ গল্পটা জানিয়ে দেয়!
বই প্রকাশের আগের দিন থেকেই কপালে কাটা দাগ এঁকে, গোল ফ্রেমের চশমা ও তেকোনা টুপি পরে শহরের এক বইয়ের দোকানে হাজির পাঠকেরা। সেখানে হ্যারি পটার ক্যুইজে জিতলেন অনুরাগ মজুমদার। পুরস্কার হ্যারির নতুন বইটি। জানালেন, আট বছর বয়সে প্রথম বই পড়ার পর থেকেই হ্যারির জগতের বাসিন্দা তিনি। ওই অনুষ্ঠানেই হ্যারির সাজে ঘুরছিল একাদশ শ্রেণির চৈতন্য শ্রীবাস্তব। ছেলেবেলায় সিনেমার মাধ্যমে প্রথম পরিচয় হ্যারির সঙ্গে। তবে সিনেমার থেকে হ্যারির বই-ই তার বেশি প্রিয়। তার পিসি, বছর ছাব্বিশের দিব্যা শ্রীবাস্তব পেশায় সাইকোলজিস্ট। লুনা লাভগুডের সাজে দিব্যা বলেন, ‘‘১৯৯৯-এ প্রথম তিনটি বই পরপর পড়ি। তার পরে প্রতিটি বইয়ের জন্য মুখিয়ে থাকতাম। হ্যারি পটার আমার ছোটবেলা জুড়ে রয়েছে। এ বার সংসারি হ্যারি এবং তার ছেলের গল্প নিয়েও একই রকম উৎসাহিত আমি।’’
সোমা, দিব্যা, চৈতন্যেরা একা নন। যাঁদের সদ্য হাতেখড়ি হয়েছে হ্যারির জাদু-জগতে, উৎসাহের শরিক তাঁরাও। কলেজপডুয়া সঞ্চিতা মজুমদার জানালেন, চতুর্থ বইটি পড়ছেন তিনি। ভাল লাগছে। বাকিগুলি পড়া হলেই শুরু করবেন নতুনটিও।
সপ্তম বই প্রকাশের ন’বছর পরে রাওলিং-ম্যাজিক কি এখনও অটুট? কিছুটা সন্দিহান পাঠকেরা। নতুন বইটির লেখক হিসেবে জে কে রাওলিং-এর সঙ্গে নাম রয়েছে জ্যাক থর্ন ও জন টিফানি-র। অনেকে অবশ্য এই শঙ্কাকে পাত্তা দিতে নারাজ। চৈতন্যের মতে, হ্যারি পটার একান্তই রাওলিং-এর নিজের সৃষ্টি। তাই বইয়ের মান বজায় না থাকার কারণ নেই। তবে চিত্রনাট্যের আকারে হওয়ায় বইটি পড়ার অভিজ্ঞতা আগের থেকে বেশ অন্য রকম হবে বলে মত পাঠকদের।
হ্যারি পটারের পুরনো পাঠকেরা প্রায় সবাই-ই স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে এখন ব্যস্ত পেশাদার। তা-ও কোন মন্ত্রে তাঁদের এখনও টানে হ্যারি? আলোকচিত্রী দেবযানী চক্রবর্তী জানালেন, অনেকটা ‘সিন্ডারেলা’র গল্পের ধাঁচে শুরু হলেও সেখানেই আটকে না থেকে পরিধি বেড়েছে সিরিজটির। ভাল-মন্দের যুদ্ধে ভালর জয় সাহিত্যে নতুন নয়। কিন্তু কী ভাবে সেই জয় এল, তা সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে হ্যারি পটারে। বারবার জোর দেওয়া হয়েছে ভালবাসা ও বন্ধুত্বের শক্তিতে। দিব্যা জানালেন, জটিল চরিত্রায়ণ ও গল্পের বিন্যাসই তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় হ্যারির জগতে।
আজ সেই জাদু-জগতের টানেই আবার দোকানে দোকানে ভিড় জমাবেন পাঠকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy