Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Fire Accident

মিটার বক্সের পাশে সার দিয়ে ‘ভিলেন’ দু’চাকা

তাঁর অভিযোগ, ৫০০-৬০০ টাকার বদলে মিটার বক্সের পাশে বাইক রাখতে দেওয়ায় এ রকম ভয়াবহ অবস্থা হল। 

অঘটন: এই মিটার ঘর থেকেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন। শনিবার, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অঘটন: এই মিটার ঘর থেকেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন। শনিবার, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ০২:১৮
Share: Save:

মিটার বক্সের পাশেই ছিল সার সার মোটরবাইক এবং স্কুটার। শুক্রবার রাতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে সেগুলিই ‘ভিলেনের’ ভূমিকা পালন করেছে। সমস্যা বাড়িয়েছে খোলা তার ও তারের জট। মধ্য কলকাতার ২১, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের ‘মুন’ ভবনে শুক্রবার রাতে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে ৫০ শতাংশ ফ্ল্যাট। যার কিছু ফ্ল্যাট ছিল বসবাসের, কিছু ফ্ল্যাট ছিল অফিস।

ওই রাতে দমকল পৌঁছনোর আগেই মিটার বক্সের তার থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পার্কিংয়ে রাখা বাইকগুলিতে। কয়েক মিনিটের মধ্যে তা সিঁড়ি ও লিফট হয়ে উপরে পৌঁছে যায়। ফলে বাসিন্দারা বাঁচতে ছাদে উঠে যান।

দমকল সেখান থেকেই পাশের বাড়ির ছাদে কাঠের মই এবং পাটাতন লাগিয়ে উদ্ধার করে আটকে পড়া আবাসিকদের। তখনই পাটাতন থেকে পা ফস্কে একেবারে নীচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় বছর বারোর ইউনেস রহমানের। অন্য দিকে, বছর পঁয়ষট্টির মা, স্ত্রী ও শিশুকে সঙ্গে নিয়ে নীচে নামতে যাচ্ছিলেন হাবিব মোল্লা। কিন্তু তত ক্ষণে আগুন নীচের তলগুলিতে ছড়িয়ে পড়ায় সকলে উপরের দিকে ছুটছিলেন। আগুনের তাপ, ধোঁয়া আর অন্ধকার—সব মিলিয়ে মায়ের হাত ফস্কে যায় ছেলের। সকলে ছাদে উঠতে পারলেও মা শামিম বেগম উঠতে পারেননি। রাত ১টা নাগাদ দমকলকর্মী উদ্ধার করেন শামিম বেগমকে। এসএসকেএম হাসপাতালে যত ক্ষণে নিয়ে আসা হয় তাঁকে, তত ক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। দমকলকর্মীরা উদ্ধার করেন আটকে পড়া আরও চার জনকে। যাঁদের এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সনাতন বেহরা নামে বছর পঞ্চাশের এক আবাসিক। যিনি ওই ভবনের গ্যারাজের উপরে থাকতেন এবং ভবনের ফ্ল্যাটগুলিতে জল সরবরাহ করতেন। তিনি ভিতরে আটকে পড়ায় শরীরের অনেকটাই ঝলসে গিয়েছে বলে জানান অন্য এক আবাসিক জসিম আখতার।

শনিবার সকালে অগ্নিদগ্ধ ভবনের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন জসিম। তাঁর কথায়, ‘‘ছ’তলায় থাকি। রাত পৌনে ১০টা নাগাদ আগুন লেগেছে শুনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস-সহ স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে বাইরে আসি। দেখি আগুন আর ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে চার দিক। সকলের সঙ্গে ছাদে উঠে যাই। সেখান থেকে লোকজন আর দমকলের সাহায্যে কোনও রকমে পাশের বাড়ির ছাদে যাই।’’ ওই ভবনের আবাসিক নিশা পরভিনের বিয়ে আগামী মাসেই। তাঁর প্রায় ৪০ হাজার টাকার জিনিস পুড়ে গিয়েছে। হুড়োহুড়িতে পায়ে আঘাত পেয়েছেন গুলজার আলম নামে এক আবাসিক যুবকও।

ওই বাড়িতে তিন পুরুষ ধরে থাকা হেনরি লাই জানান, আগুন লাগার পরেই বাড়ি ফাটার মতো আওয়াজ হতে শুরু করে। আগুনের তাপ ও ধোঁয়ায় সিঁড়ি আর লিফট ভরে গিয়েছিল। তবে সব কিছুর জন্য তিনি ভবনের মালিক শামিম আহমেদকেই দায়ী করছেন। তাঁর অভিযোগ, ৫০০-৬০০ টাকার বদলে মিটার বক্সের পাশে বাইক রাখতে দেওয়ায় এ রকম ভয়াবহ অবস্থা হল।

কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমের অভিযোগ, “ওই মিটার বক্স থেকে আবাসিকদের বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট এবং অফিসে বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হয়েছিল। কী ভাবে তাঁরা সিইএসসি থেকে অনুমতি পেলেন জানি না। সিইএসসি-র সঙ্গে কথা বলব।’’

ফিরহাদ জানান, নতুন বাড়ির ক্ষেত্রে পুরসভা পৃথক জায়গায় ঘর করে মিটার রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও শহরে অন্তত প্রায় ১০০টি পুরনো বাড়ির বৈদ্যুতিক মিটার সিঁড়ির নীচে দরজার মুখে রয়েছে। এর সমাধানে পুর কর্তৃপক্ষ সিইএসসি এবং দমকলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান।

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Accident two wheelers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy